ড্রেজিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও মিলছে না সুফল
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
নাব্য সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টাই চলছে ড্রেজিং। তিন মাসেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় মিলছে না ড্রেজিংয়ের কাক্সিক্ষত সুফল। যে কারণে ফেরি কর্তৃপক্ষ দফায় দাফায় ফেরি বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ১শ’ ৮৭ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে একদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে পানিতে, অপরদিকে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফেরিতে যাতায়াতকারী যানবাহন শ্রমিক ও যাত্রীদেরকে। তিন মাস ধরে ৬টি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করেও নৌপথের কোনো উন্নতি না হওয়ায় এখানে লোক দেখানো ড্রেজিং চলছে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
এবার পুরো শুস্ক মৌসুম শুরু হবার আগেই নদীতে পানি কমে ডুবোচরের সৃষ্টি এবং চ্যানেল সরু হয়ে নৌপথ চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কারণে ফেরি কর্তৃপক্ষ চলতি মাসের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ফেরি সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। নৌ-চ্যানেলের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে যে কোনো সময় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে উক্ত নৌরুটের ফেরি সার্ভিস।
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা-যমুনায় দ্রুতগতিতে পানি হ্রাস এবং অপরিকল্পিত ড্রেজিং ব্যবস্থার কারণেই আজ আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ৬টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের পরও কী কারণে নৌ-পথ সচল থাকছে না এটাই এখন সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা? এখানে ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কোনো গাফলতি, না অপরিকল্পিত ড্রেজিং, নাকি সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য কোনো অশুভ চক্র এখানে কাজ করছে তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস সচল রাখতে এবং নাব্য সংকটের কারণে গত ২৮ জুলাই থেকে তিন মাসের অধিক সময় ধরে আরিচা ঘাটের অদুরে যমুনা নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ইউনিটের নিজস্ব ৬টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের কাজ করা হচ্ছে। যা এখনও রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টাই চলমান রয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। ড্রেজারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। এদের নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। দেখে মনে হবে, এখানে সরকারের বিরাট কর্মকাণ্ড চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ড্রেজিং বিভাগের এত কর্মকাণ্ডের পরও সাড়ে তিন মাসে নাব্য সংকটের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। অবশেষে কর্তৃপক্ষ উক্ত নৌরুটে দফায় দফায় সাময়িকভাবে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। উক্ত নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে গত ১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত ১০টা থেকে ৩ নভেম্বর (রোববার) বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ৩৭ ঘণ্টা এবং গত ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১১ নভেম্বর (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ৮৯ ঘণ্টা আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে তৃতীয় বারের মতো ফেরি সার্ভিস বন্ধ ছিল। এদিন পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও কতক্ষণ চলে তা বলা মুশকিল। দ্রুত গতিতে পানি হ্রাসের কারণে উক্ত নৌরুটে নাব্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। পানি কমে চ্যানেলের অবস্থা দিনদিন একেবারেই শোচনীয় হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় আতোয়ার রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র যে আটটি ড্রেজার রয়েছে তারা ঠিকমতো কাজ করছে না। যা করছে তাও আবার অপরিকল্পিত। এরা পাইপ দিয়ে উজানে যে মাটি ফেলছে সে মাটি স্রোতে গড়িয়ে আবার নীচে আসছে। এভাবে অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণেই এ নাব্য সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় ফরিদ মিয়া জানান, একমাত্র নদী খননের গাফলতির কারণেই আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ছোট বেলায় আমরা দেখেছি, ড্রেজিং করে বালু অনেক দূরে নিয়ে ফেলা হতো। আর এখন ড্রেজিং করে মাটি দুশ’ গজ দূরে ফেলছে। এতে জায়গার মাটি আবার জায়গায় এসে পড়ে যা তাই হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে নাব্য সঙ্কটের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
ট্রাকচালক হামিদ মিয়া বলেন, আমি গত শনিবারে আরিচা ঘাটে আসি ফেরি পার হতে। আজ ৫ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, এই যে ড্রেজার দিয়ে নদী কাটা হচ্ছে, নদী কাটা হলেই ফেরি চলাচল শুরু হবে। কিন্তু আসলে যা দেখা যায়, ড্রেজারের লোকজন তারা কাজ না করেই আমাদেরকে শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। বেশির ভাগ সময় ড্রেজার বন্ধ রাখা হয়। তারা ড্রেজার না চালিয়ে আমাদেরকে শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ বলেন, গত ১৬ নভেম্বর থেকে তৃতীয় দফায় চার দিন বন্ধ রাখার পর বুধবার বেলা ১১টা থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চলাচল শুরু করেছে। এটা কতক্ষণ থাকবে তা বলা মুশকিল। কারণ নাব্য সঙ্কটের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। পানি হ্রাস পেয়ে চ্যানেলে পলি পড়া অব্যাহত রয়েছে। বিগত তিন মাসের বেশি সময় ধরে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এতেও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। এমতাবস্থায় যে কোনো সময় আবার ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রয়েছে। পুরান চ্যানেলের পাশে আমরা আরেকটি নতুন চ্যানেল খননের কাজ শুরু করেছি। এবছর শুরু থেকে এ পর্যন্ত আরিচা-কাজিরহাট-নগরবাড়ি ও বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ১৭ লাখ ১০ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন করা হয়েছে। আরিচাতে মূল সমস্যা হচ্ছে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। এ স্রোতের কারণে মাটি কাটার পর উজান থেকে পলি এসে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যেমন গত মঙ্গলবার মাটি কাটার পর যেখানে পানি ছিল ১৫ ফুট, বুধবার সেখানে পলি জমে পানি হয়েছে ১২ ফুট। এ নৌরুটের শুধু আরিচা অংশে এই সমস্যা। আর কোনো জায়গায় এ রকম হচ্ছে না। স্রোত এবং অব্যাহতভাবে অস্বাভাবিক মাত্রায় পলি পড়ার কারণেই এবার ড্রেজিং করেও নৌপথের নাব্য ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভয়াবহ ইসরাইলি বিমান হামলা গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে
ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করলেন ভুটান রাষ্ট্রদূত
ইয়েমেন টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের
মহাখালীতে রিকশা চালকদের অবরোধ : ট্রেন চলাচল বন্ধ
মহাখালীতে রেললাইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা রেখে চালকদের অবরোধ, শহরজুড়ে তীব্র যানজট
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন পাচার হওয়া ২৪ নারী-পুরুষ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ে যা বলছে নেটিজেনরা
উ.কোরিয়ার চিড়িয়াখানায় সিংহ ও বাদামী ভাল্লুক উপহার দিলেন পুতিন
"আমি 'স্টারবাকস বর্জন করি আপনাদেরও করা উচিত"
যানজটে স্থবির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ভোগান্তি চরমে
বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না জাবির শিক্ষার্থী রাচির
লাওসে বিষাক্ত মদের বিষক্রিয়ায় পর্যটকের মৃত্যু
বিদায় বেলা ঢাকায় আসছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
ইউক্রেন যুদ্ধ,রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিযোগিতা!
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক আটকে বিক্ষোভে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা : চরম ভোগান্তি
সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রাভেল পাস যেভাবে পাবেন
রাসিকের মাষ্টাররোলে নিয়োজিত ১৬১ কর্মীকে অব্যাহতি, ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ
সিরিয়ার পালমিরা শহরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় নিহত ৩৬, আহত ৫০