স্বৈরাচারী হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও বহাল তবিয়তে
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘ধরাকে সরা জ্ঞান করা’ বিভিন্ন উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কেউ কেউ এখনও ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর বহাল তবিয়তে স্বপদে থেকে স্বৈরাচারী হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। এমন চরিত্রের ইউএনওদের মধ্যে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার স.ম আজহারুল ইসলামের নাম ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণের মাঝে বেশ আলোচিত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করা, ছাত্র-জনতার মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ক্যাডারদের লেলিয়ে দেওয়া ও আন্দোলন নস্যাৎ করার মতো বিতর্কিত ভূমিকা রেখেও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার পদে বহাল থাকা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট হাশেম খান ও এম.এ জাহেরের প্রশয়ে বেপোরোয়া ছিলেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কারা কারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের তালিকা করেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরবরাহ করেছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
স.ম আজহারুল ইসলামের বিতর্কিত ভূমিকা প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারকারি এই কর্মকর্তা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সর্বাবস্থায় জনস্বার্থের অনুকূলে থাকার নিয়ম থাকলেও ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, চলতি বছর জানুয়ারিতে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের অধীনে পাতানো ও ডামি সংসদ নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলাম।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে স.ম আজহারুল ইসলামের দায়িত্বকালিন সময়ের গত ১১ মাসে তার রুঢ় আচরণ এবং অতিমাত্রার আওয়ামী প্রেমি কর্মকাণ্ড তাকে বিতর্কিত করে তুলেছে। এ সময়টিতে তিনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গুণকীর্তনে এতোটাই মগ্ন থাকতেন উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কার্যালয়ের প্রতি সাধারণ মানুষ বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে। অথচ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ইউএনও রোমেন শর্মা স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময়ে জনস্বার্থের অনুকূলে থেকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেছেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি কাউকে তোয়াক্কা না করে আন্দোলনের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিলেন। সম্প্রতি কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত দুইদিন ব্যাপী গ্রাফিতি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সদরের ইউএনও রোমেন শর্মাকে সম্মাননা জানিয়েছে প্রজন্ম সাহিত্য সাংস্কৃতিক একাডেমি। অনুষ্ঠানে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গটি ওঠে এসেছে এজন্য যে, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিপক্ষে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হয়ে রোমেন শর্মার মতো অনেক ইউএনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু স.ম আজহারুল ইসলামরা পারেননি।
ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলামের বিষয়ে কথা হলে তারা জানান, তিনি খুব মেজাজী প্রকৃতির, রুঢ় আচরণ করেন। যেকোন বিষয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিবেন ও দিবেন এটাই সঠিক হিসেবে মানতে হবে। আর শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব ন্যাস্ত হওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারিরা ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলামের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার ব্রাহ্মণপাড়ার সিদলাই আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির (২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী) সাত ছাত্রকে বিদ্যালয় থেকে টিসি (ছাড়পত্র) দেওয়ার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলাম। তিনি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি।
স্থানীয়রা বলছেন, দশম শ্রেণির সাত ছাত্র মিলে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধর করেছে। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মিমাংসা করে দিতে পারতেন, কিন্তু কোনো-না কোনোভাবে আহত ছাত্রের পরিবার ইউএনওর সরনাপন্ন হয়ে ঘটনাটির বিচার চেয়েছেন।
ইউএনও দুই পক্ষকে ডেকে ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাত ছাত্রের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তাদের বিদ্যালয় থেকে টিসি দেওয়ার জন্য নিজ কার্যালয় থেকে লিখিত নির্দেশ দিলেন। ওই সাত ছাত্র আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। তাদের ভবিষ্যত পড়ালেখার বিষয়টি তিনি মানবিকভাবে বিবেচনা করেও অন্য শাস্তি দিতে পারতেন। তা না করে তিনি বিচারে নিজের অতিরিক্ত মেজাজ উপস্থাপন করলেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ইনকিলাবের পক্ষ থেকে ইউএনও স.ম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত দিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের এমপি ও তাদের দোসরদের ভারতে পলায়ন, মাদক, চোরাচালানসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলার শেষ পর্যায়ে তিনি তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘এখানকার অনেকের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আমার মতবিরোধ হয়ে থাকে, কেউ কোনো তদবির করলে এটা আমার আইনের মধ্যে না হলে রাখতাম না আমি এই ধরনের একটু ঘাড়তেড়া টাইপের মানুষ।’
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ বলছেন, উপজেলার মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন ইউএনও। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসব ইউএনওরা স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় করার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন রাজনৈতিক কাজে। অনেকেই ভূমিকা রাখতেন রাজনৈতিক কর্মীর মতো। উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত ভিন্নমত এবং অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের মানসিক নির্যাতন ও নানাভাবে হেনস্তাও করতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও অনেক উপজেলায় মাঠ পর্যায়ের এসব প্রশাসনিক পদে পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিখোঁজের ১০ দিন পর খালে মিলল বেদের লাশ
আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বাহারুল আলম
ভয়াবহ ইসরাইলি বিমান হামলা গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে
ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করলেন ভুটান রাষ্ট্রদূত
ইয়েমেন টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের
মহাখালীতে রিকশা চালকদের অবরোধ : ট্রেন চলাচল বন্ধ
মহাখালীতে রেললাইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা রেখে চালকদের অবরোধ, শহরজুড়ে তীব্র যানজট
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন পাচার হওয়া ২৪ নারী-পুরুষ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ে যা বলছে নেটিজেনরা
উ.কোরিয়ার চিড়িয়াখানায় সিংহ ও বাদামী ভাল্লুক উপহার দিলেন পুতিন
"আমি 'স্টারবাকস বর্জন করি আপনাদেরও করা উচিত"
যানজটে স্থবির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ভোগান্তি চরমে
বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না জাবির শিক্ষার্থী রাচির
লাওসে বিষাক্ত মদের বিষক্রিয়ায় পর্যটকের মৃত্যু
বিদায় বেলা ঢাকায় আসছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
ইউক্রেন যুদ্ধ,রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিযোগিতা!
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক আটকে বিক্ষোভে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা : চরম ভোগান্তি
সেন্ট মার্টিন যাওয়ার ট্রাভেল পাস যেভাবে পাবেন