পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার ১৪৯ জন নিয়োগ দেয়া হবে -মোখলেস উর রহমান
২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
সরকার অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেবে। এছাড়া বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পর অল্প সময়ের মধ্যে অবসরে যাবেন তাদের গ্রেড-১ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পদায়নের জন্য নতুন করে ফিটলিস্ট করা হচ্ছে। পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এরমধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯ জন নিয়োগ পাবেন। এছাড়া সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস সময় পাবেন সরকারি কর্মচারীরা।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান এ কথা বলেন। সিনিয়র সচিব বলেন,বিসিএস নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব যোগদান করেছেন।এসএসবি ফরমেশন হয়েছে।উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দ্রুত সময়ে শুরু হবে। যেহেতু অনেকের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য পদ দেওয়া যায়নি। কিন্তু ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি বাদ পড়া আরেকটা বিষয়। যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব আরেকটা।
সিনিয়র সচিব বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অনেক বিতর্ক অনেক দিন হয়েছে, নতুন ডিসি ফিটলিস্ট করার কাজটা শুরু হবে। এই কাজটা যে রকম গতবার দিনে রাতে করতে হয়েছে। মাঠ কিন্তু অনেক ভালো। তারপরও সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা নতুন ডিসি দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ কাজটা এসএসবির মাধ্যমে শিগগরি শুরু হবে। মোখলেস উর রহমান বলেন, বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব, পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩ দিনে তিন পদোন্নতি। এটা বিষয় না। তারা সারা বছরই বঞ্চিত ছিলেন। এই বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব হয়ে চাকরির শেষ প্রান্তে, সিদ্ধান্ত হয়েছে গ্রেড-১ দিয়ে তাদের পদোন্নতি দেব। অনেকের এক মাস আছে, ১৫ দিন আছে, ২০ দিন আছে। এটা আমি মনে করে অনেকের পদোন্নতি হবে এবং সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিকভাবে তারা উপকৃত হবে। এটার জন্য তারা চাকরি করে। দাবি করার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সবাইকে কি গ্রেড-১ দিতে পারবেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি যারা চাকরি করি বিধি-বিধানের মাধ্যমে করতে হয়। যদি ডিসিপ্লিনারি মামলা থাকে, ফৌজদারি মামলা থাকে, যদি কারো বিরুদ্ধে যেমন এক কলিগের বিরুদ্ধে আরেক কলিগের মোটরসাইকেল চুরির মামলা. মানে মামলা-মোকদ্দমা-অভিযোগ-তদন্ত যদি থাকে এদের বিবেচনায় আনা হবে না। তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে না। অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি বিধি মোতাবেক শুরু হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আর নতুন করে দল বেঁধে দাবি করার কিছু নেই। যে বিষয়গুলো চিহ্নিত সে বিষয়গুলো সরকার বিধি মোতাবেক যার যতটুকু প্রাপ্য সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। বিসিএসে কোটা পদ্ধতি কীভাবে প্রয়োগ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, ৭ শতাংশ অন্যান্য এবং ৯৩ শতাংশ মেধা, সেভাবে হবে।
মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এরমধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯ জন। ক্যাডার পদে ৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ৬৪ জন, ৪৪তম বিসিএসে ১ হাজার ৭১০ জন, ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯ জন, ৪৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০ জন এবং ৪৭তম বিসিএসে ৩ হাজার ৪৮৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া নন-ক্যাডার পদে ৪৩তম বিসিএস থেকে ৬৪২ জন, ৪৪তম বিসিএসের ১ হাজার ৭৯১ জন, ৪৫তম বিসিএসে ১ হাজার ৫৭০ জন, ৪৬তম বিসিএসে ১ হাজার ১১১ জন, ৪৭তম বিসিএসে ৩২৫ জনসহ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। ৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ৬৪ জনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি যোগদানের জন্য নির্ধারিত আছে। গেজেট প্রকাশের পর এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নিয়োগের স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআই ও ডিজিএফআই-এর মাধ্যমে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলমান আছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে বিসিএস ৪৪তম-এর মৌখিক পরীক্ষা চলমান ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩২ জন। এরমধ্যে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে আগের নেওয়া প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৭৮৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রথম পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে ছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে এই লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মোখলেস উর রহমান বলেন, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল গত ৯ মে প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈষম্যদূরীকরণে ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমসংখ্যক অর্থাৎ ১০ হাজার ৬৩৮ জন যোগ করে সর্বমোট ২১ হাজার ২৭৬জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিজের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে যা জানালেন সচিব॥
ডিসি নিয়োগে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে। পরের সেটা তদন্তের দায়িত্ব তিনজন উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়। তদন্তে কি উঠে এসেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে মোখলেস উর রহমান বলেন, আমি প্রথম কথা দিয়ে বলি, ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়। আমি এটাকে পজিটিভলি নিয়েছি। যে পত্রিকা বা মিডিয়া যেটা প্রচার করেছে, হয়তো তারা না বুঝে বা ভুল বুঝে করেছে, এখন তারা রিয়ালাইজ করে যে ইট ওয়াজ রং। এর বেশি আমি বলবো না। তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, এটার জন্য আমাকে তিনজন হাই পাওয়ার উপদেষ্টার তদন্ত ফেস করতে হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটা তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিল। সেটি প্রসেস হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেছে, এখানে কমেন্ট হলো এটা একটা ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা রিপোর্ট করা হয়েছে। এখানে আরও একটু যোগ দেই। এটা মোখলেস উর রহমান তাদের টার্গেট ছিল না, তাদের টার্গেট ছিল জনপ্রশাসন সচিব। তাদের আরও টার্গেট ছিল ন্যাশনাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল হোয়াট এভার ইট ইজ- যদি এই পদটাকে ভালনারেবল করতে পারি তবে একটা একটা করে সরকারের, আমরা যদি ক্রিকেটের ভাষায় বলি- স্টাম্প পড়ে যাবে। দ্যাট ওয়াজ দ্য পালস। সিনিয়র সচিব বলেন, আলটিমেটলি যেহেতু আমি সারা জীবন একইভাবে জীবনযাপন করেছি। এখনও করি। আমি পজিটিভ লোক। আমি যেহেতু জনপ্রশাসনের সচিব মানে এই মিনিস্ট্রির মাধ্যমে অন্য সব মিনিস্ট্রির অভিভাবক বলা হয়, আমার মাধ্যমে কোনো কিছু নেগেটিভ অথবা আমার মাধ্যমে কোনো কিছু পাওয়া না হোক, এটা ঘটবে না ইনশাআল্লাহ।
সম্পদের হিসাব দিতে ১ মাস সময় বৃদ্ধি॥
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, সম্পদের হিসাব দিতে আরও এক মাস সময় পাবেন সরকারি কর্মচারীরা। চলতি বছরের সম্পদ বিবরণী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা জমা দেওয়া যাবে। সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সার্কুলার ইস্যু করবো বলেন সিনিয়র সচিব। মোখলেস উর রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে কেউ সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়নি। কিভাবে এটা জমা দিতে হবে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এ জন্য সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। সরকারি কর্মচারীদের প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে চলতি বছরের সম্পদের হিসাব বিবরণী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।পরে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা