উগ্রবাদী কতিপয় ইসকন সদস্য ও পতিত সরকারের দোসর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজায় মানুষের ঢল নামে।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের আদালত চত্বর, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ ময়দান এবং লোহাগাড়ার চুনতিতে আয়োজিত নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় এ আইনজীবীকে। জানাজাপূর্ব সমাবেশগুলোতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আলিফের খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর, উগ্রবাদী ইসকন ও ছাত্রলীগ যুবলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসি দাবি করেন। একইসাথে তারা ইসকন নিষিদ্ধেরও জোর দাবি জানান। তারা বলেন, ভারত তার পুতুল শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসন করতেই বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ভারতীয় এ আগ্রাসন রুখে দিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আদালত চত্বরে নামাজে জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফসহ আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তা ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা শরিক হন। জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে জানাজায় শরিক হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাহেল আহমদ শরিক হন। চট্টগ্রামে নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মো. শাহজাহান, নগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জানাজায় অংশ নেন।

বক্তারা বলেন, তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে যে নৃশংস হত্যাকা- ঘটিয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য এবং নিন্দনীয় অপরাধ। একটি গোষ্ঠী পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য ক্রমাগতভাবে দুরভিসন্ধি ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা উসকানিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে চায়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। তাদের অপচেষ্টা অতীতেও ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতেও ব্যর্থ হবে, ইন শা আল্লাহ।

সাইফুল ইসলাম ন্যায়ের পথে লড়েছেন। সত্যের পথে লড়েছেন। সত্যের কাছে পরাজিত হয়ে ইসকন সন্ত্রাসীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে শহীদ করেছে। আমরা জনসাধারণকে শান্ত থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ইসকন সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার বিচার হবেই ইন শা আল্লাহ। তারা অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গতকাল ইসকন কিভাবে আমার ভাইকে শহীদ করেছে তা আপনারা দেখেছেন। বাংলার পলাতক ডাইনি হাসিনা ভারতে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। আওয়ামী লীগের এই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হবে না। ইসকন উগ্র সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীকে অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এদেশে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়া হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানরা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর এই সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আর নিস্তার দেয়া হবে না। বিগত খুনি হাসিনা তিলে তিলে এই জঙ্গি সংগঠন ইসকনকে প্রতিষ্ঠা করেছে। অবিলম্বে আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিকে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে আলিফ হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় সমন্বয় হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমসহ ছাত্র নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করার দাবি জানান। বিকেলে নগরীর বহদ্দারহাটে অপর এক ছাত্র সমাবেশ থেকেও আলিফ হত্যাকারিদের গ্রেফতার এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ভারতীয় চক্রান্ত ইসকন ও পতিত স্বৈরাচারির দোসরদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব সমাবেশ থেকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।