জুলাই-আগস্টের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন ডিসি

সিলেট সাবেক বিভাগীয় কমিশনারের রাজসিক সংবর্ধনা

Daily Inqilab ফয়সাল আমীন

০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

বিরল সংর্বধনা নিয়ে সিলেট ছাড়ছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দীকি এনডিসি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের টপ অর্ডারের এই দোসর বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছিলেন ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে পদায়ন করেছেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে। তার বিদায় উপলক্ষে গত শুক্রবার রাতে এক রাজসিক সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট। সংবর্ধনাস্থল সিলেট সার্কিট হাউজ সাজানো হয় বর্ণিল আলোক সজ্জায়। সেই সাথে ছিল বিলাসি ভুরিভোজ। সার্কিট হাউজের ভেতরে নান্দনিক রূপে বানানো হয় সেলফি স্টেজ। গত শুক্রবার দিন থেকে সংবর্ধনার প্রস্ততি নিয়ে ব্যস্ত রাখা হয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের। সন্ধ্যা ৭টায় সার্কিট হাউজের কনফারেন্স রুমের শুরু হয় সংবর্ধনার কার্যক্রম।

জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এরকম ঝমকালো সংবর্ধনার ঘটনা বিরল। বিগতদিনে এমন জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন হয়নি সিলেটে। অথচ ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী যখন সংস্কারের দাবি ও ব্যবস্থা চলছে, ঠিক এ সময় রাজকীয় এমন সংবর্ধনা জুলাই-আগস্টের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গণ আন্দোলনের পরে সিলেটের জেলা প্রশাসক হন মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। এখন তার হাতেই পেরেক ঢুকলো জুলাই-আগস্টের চেতনায়। তাই প্রশ্ন কার ঋণ শোধ করলেন তিনি? ঝমকালো এমন সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন, বিভাগের ৪ জেলার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। পতিত সরকারের অর্থ পাচার, দুর্নীতি, বিদেশি ঋণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন টানাপোড়নে সরকারি কোটি টাকা ব্যয়ে এমন সংবর্ধনায় দিয়ে কি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছেন জাতিকে, সেই প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। দামি গাড়ি হাকিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছ, গত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে ভোগবাদী ব্যবস্থায় জড়িয়ে পড়া মজ্জাগত হয়ে পড়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের। গত ৫ আগস্টের পর তারা এখন আরো সক্রিয়। কোন পরির্তন নেই, জনতার বিপ্লবের রক্তচক্ষুতে পড়েছিল কেবল পুলিশ। কিন্তু পুলিশের চেয়ে বিগত সরকারের চরম দোসরে পরিণত হয়েছিল মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। কর্মসূচীতে ছিল সক্রিয়। দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা কোন পাত্তাই পেত না মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালীরা ছিল ভিন্ন। ব্যক্তি বিশেষের সাথে সর্ম্পক বজায় রেখে অনিয়ম দুর্নীতির মেশিনে পরিণত হয়েছিল মাঠ প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা। এই কর্মকর্তাদের অবৈধ অর্থ ও কর্মকা-ের সন্ধান নেয়া যেন বারণ। সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু তারা এখনো বহাল তবিয়তে। বেকাদায় পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীসমর্থকরা। তাদের কেউ পালিয়ে, কেউ জেলে, কেউ ফেরারী এক অনিশ্চিত জীবনের পথে। বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনারও স্বৈরাচারের ল্যাসপেন্সারদের পদায়ন করে সাজিয়ে ছিলেন উপজেলা প্রশাসনকে। এদের প্রত্যকের ব্যাকগ্রাউন্ড ছাত্রলীগ রাজনীতি বা আওয়ামী লীগের নিখাদ পরিচয়ে পরিচিতি। এই কর্মকর্তারা ছাত্রজনতার উপর হামলা, গুলি, মামলাসহ হয়রানীতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা। সেই সাথে সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পদ রক্ষায় চেয়ে লুটপাটে সহযোগী হয়ে গড়ে তুলেছে অঢেল অর্থ বিত্ত। এখন তারা জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করার পাঁয়তারায় ব্যস্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার কেবল স্বৈরাচার হয়ে উঠেনি, আমাদের উর্ধ্বতনরাও এখন পুরোদমে স্বৈরাচারী আচরণে পুষ্ট। কারণ তাদের পদায়ন দল থেকেই হয়েছে। ছিল না যোগ্যতার বিবেচনায়। তাই তাদের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিতে হয় আমাদের। আলোচনা বা পরামর্শের কোন সুযোগ নেই, এখনো উপরের অর্ডারেই চলছে মাঠ প্রশাসন।

স্বৈরাচারের পতন হলেও প্রশাসন চলছে তাদের নিয়ন্ত্রনে। এর নজির স্বৈরাচারের ঘনিষ্ট দোসর বিভাগীয় কমিশনারের রাজসিক তথা বিদায় সংবর্ধনা। সিলেট সার্কিট হাউজের নাজির জনি চক্রবর্তী জানান, অনুষ্ঠান উপলক্ষে রান্নাবান্নার বিশাল আয়োজন ছিল, কাচ্ছিবিরানীসহ তালিকায় ছিল বাহারী রিচ ফুড। আলোক সজ্জা করা হয়েছিল গোটা সার্কিট হাউজ। তবে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, খাবারসহ আলোজ সজ্জায়, সেই বিষয়টি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক