বিএডিসির আড়াইশ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বিএডিসি (সেচ) বিভাগের অধীন মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার সিংহভাগই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে সরকারি বরাদ্দের এসব টাকা তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চার বছরে প্রকল্পটির খাতা-কলমে অগ্রগতি ৭৫ ভাগ হলেও মাঠ পর্যায়ে তার নেই অস্তিত্ব। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়ে ইতোমধ্যে ১৯২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে সরকারি টাকা গরমিল এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের অস্তিত্ব না থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানের জন্য একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে নিজেদের পছন্দমতো ঠিকাদার দিয়ে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পলাতক তিন সংসদ সদস্যের কারসাজিতে সরকারি এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে অতি উর্বর মাটির জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে নিষ্কাশন সুবিধাসহ সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বিএডিসি। এতে সুবিধা সৃষ্ট জমিতে প্রতি বছর ৫১ হাজার মেট্রিক টন ধান, গম ও ভুট্টাসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গৃহীত হয় প্রকল্পটি। ২৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রাক্কলন ব্যয় ও ৫ বছর বাস্তবায়নকাল ধরে অনুমোদন লাভ করে ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’। প্রকল্প বাস্তবায়নের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৩০টি সৌরচালিত ডাগওয়েল যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ১২ লাখ, ১৮০ কি.মি. খাল পুনঃখনন যার প্রতি কি.মি. খনন ব্যয় ৯ লাখ, ২৫৫টি পাম্প হাউজ যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ১৫ লাখ, ৯৫টি ২ কিউসেক ফোর্সমোড পাম্পসেট স্থাপন যার প্রতিটির ব্যয় ১৫ লাখ, ৫ কিউসেক সোলার পাম্প ২৫টি যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ১৫ লাখ, ১৫টি বড় আকারের সেচ অবকাঠামো যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ৪০ লাখ, ১২০টি মাঝারি আকারের সেচ অবকাঠামো যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ২৫ লাখ, ৩০০টি ছোট আকারের সেচ অবকাঠামো যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় সাড়ে ৭ লাখ এবং ২১৫টি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ যার প্রতিটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে মোট ১১টি খাতের উন্নয়ন প্রকল্পাংশ বাস্তবায়নে সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে টেন্ডার সিন্ডিকেটসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত টাকা কাগজে বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ ও হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিপুল অঙ্কের সরকারি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পের বাকি অংশের বাস্তবায়নে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগণ।
কুষ্টিয়া শহরের ঠিকাদার হাজী বেলায়েত হোসেন অভিযোগ করে জানান, আমরা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিএডিসির লাইসেন্সধারী ঠিকাদার, দরপত্র আহ্বান করলে অংশগ্রহণের যোগ্যতা রাখি। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা হলো এই প্রকল্পাধীন এলাকা। সে কারণে এই তিন জেলার ঠিকাদাররাই এখানে টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু বিগত ১৫ বছর ধরে এই তিন জেলার প্রভাবশালী এমপিদের মদদে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে তাদের পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদার ছাড়া আর কোনো ঠিকাদারই টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। আমাদের কাছে অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ আছে, তারা ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার পর থেকে কাজ না করেই বিল ভাউচার করে টাকা তুলে নিয়েছে প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে। এছাড়া এই প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তার যথাযথ তদন্তের দাবি করে মেহেরপুর জেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা শাখাওয়াত আরেফীন জানান, তদন্তে সত্যতা পাওয়া সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আত্মসাৎকৃত রাষ্ট্রীয় টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
একইভাবে দুদকে প্রেরিত একাধিক লিখিত দরখাস্তে এই প্রকল্পের টাকা কিভাবে লুট করা হয়েছে সেগুলো হলো- প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একই কাজ দুইবার বা তিনবার দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে কাগজে কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ওই খাতের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মনোনীত ঠিকাদারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভুয়া কোটেশনে কাজ দেখিয়ে তার বিল ভাউচার করা হয়েছে। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে স্থাপনকৃত ২ শতাধিক সেচ প্লান্টের জন্য চাষিদের কাছ থেকে প্রতিটি প্লান্ট বাবদ ৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প পরিচালক প্রতিটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মনোনীত ঠিকাদারের কাছ থেকে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫ ভাগ কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের টাকা উত্তোলনে প্রকল্প পরিচালক নেন ৪০ ভাগ এবং ঠিকাদার নেন ৬০ ভাগ।
প্রকল্পের ডিপিপির ড্রয়িং ডিজাইন অনুযায়ী নির্ধারিত মাপের ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এছাড়া কাজ শেষে ঠিকাদার বিল নেওয়ার পূর্বে প্রকল্প পরিচালক ২%, সহকারী প্রকৌশলী ১%, সাইট অফিসার ২% ও হিসাব সহকারী ১% হারে কমিশন প্রদান বাধ্যতামূলক।
মুজিব নগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আলী আশরাফ অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, প্রকল্পে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে পূর্ববর্তী প্রকল্প পরিচালকের সময় হতে পারে। সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। কোনো অভিযোগ থাকলে তা উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করেন, আমি আমার কায়দায় পারলে বাইরাইবো, না পারলে গেলাম গা।
হেয়ালি ও খামখেয়ালিপনা কাজের কারণে কিছু কিছু স্থানে পাম্প সচল থাকলেও সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকরা। যার কারণে এটি এখন কৃষকদের প্রায় গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫