তারেক রহমানসহ সবাই বেকসুর খালাস
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে মামলাটিতে যারা মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা বেকসুর খালাস পেয়েছেন। পৃথক দুটি মামলার আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু রয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন আপিলকারীদের কৌঁসুলি এস এম শাহজাহান এবং অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
হাইকোর্টের রায়ের পর তারা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে যে বিচারটা করেছিল সেটি ছিল অবৈধ। আইনের ভিত্তিতে বিচার সংঘটিত হয়নি। আদালত বলেছেন, কোনো সাক্ষীর সঙ্গে কোনো সাক্ষীর কোলাবোরেশন নেই। শোনা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে সাজা দেয়া হয়েছে। এ জন্য সবার আপিল মঞ্জুর করে ডেথ রেফারেন্স রিজেক্ট করে সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তারেক রহমানসহ লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সবাইকে মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ মামলার ২২৫ জন সাক্ষীর কেউ বলেনি কে শেখ হাসিনার সভাস্থলে বোমা মেরেছে। বা তারা কেউ মেরেছে। হাইকোর্ট বলেছেন. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলার বিচার করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে কে সংশ্লিষ্ট তা দেখাতে হবে। হাইকোর্ট তারেক রহমানসহ যারা আপিল করতে পারেননি তাদেরকেও খালাস দিয়েছেন।
আপিলকারীদের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, এ মামলার দ্বিতীয় চার্জশিটে যাদের আসামি করা হয়েছে, সেটি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া হয়নি। সরাসরি জজ আদালতে দেয়া হয়। এ জন্য এই অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে কে গ্রেনেড ফাটাল, এ নিয়ে কারো সাক্ষ্য নেই। বা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। এটির কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি।
এর আগে শুনানির পর তারেক রহমান প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, আমি এটি উল্লেখ করেছি। যদিও ওনার কোনো আপিল নেই। কিন্তু আপনি (আদালত) যদি মনে করেন, এ মামলার কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়নি, কিংবা দায়সারা গোছের চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলা প্রমাণ না হলে, খালাস পাওয়ার যোগ্য হলে আদালত খালাস দিতে পারেন। এটি ভারত, পাকিস্তান ও আমাদের সুপ্রিম কোর্টে একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালত থেকে বেরিয়ে বলেন, ভারতীয় উপমাহাদেশের ৪০০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বীকারোক্ত ও দ্বিতীয় চার্জশিটের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া হয়নি। কিন্তু একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টে শুনানিকালে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় জবানবন্দির ভিত্তিতে অধিকতর যে তদন্ত হয়েছে, সেটির আইনগত ভিত্তি নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছে। এ মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে।
তারেক রহমানের পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে এ মামলায় তাকে সম্পৃক্ত করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান এ মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে এ মামলা করা হয়েছিল। আমরা এ মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছি।
গতকাল রায় শোনার পর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন উপস্থিত দণ্ডিতদের স্বজনরা। ন্যায় বিচার পাওয়ায় তারা মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণাকালে আপিলকারী পক্ষের আইনজীবী ছাড়াও লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান, আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবুল কালাম আজাদ,পুলিশের সাবেক আইজি মো. আশরাফুল হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গুলিস্তান আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তবে হামলায় বেঁচে যান আ’লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। এ হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে ভারত সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার ২০০৮ সালের ১১ জুন চার্জশিট দাখিল করে। ওই চার্জশিটে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকার পক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন আব্দুল কাহার আকন্দ। এতে এ মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জন। ৫২ আসামির মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় অন্য মামলায়। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা নেমে আছে ৪৯ জনে।
গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেয়া বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেনÑ লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে ইন্তেকাল করেন), কাশ্মীরের নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে ইন্তেকাল) এবং হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
হামলার পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেনÑ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (বর্তমানে মৃত), বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে ইন্তেকাল), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুর ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
তাদেরকে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রূহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রূহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ৪৯ আসামির মধ্যে রায ঘোষণাকালে ৩১ জন কারাগারে ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে
মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ