আওয়ামী সুবিধাভোগী হারুনের পদোন্নতিও ‘বঞ্চিত’ কোটায়!
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
নিয়োগই পেয়েছেন অবৈধভাবে। নিয়োগের পর জড়িয়ে পড়েন নানা দুর্নীতিতে। অর্জন করেন বিপুল বিত্ত-বৈভব। তদুপরি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী আমলে বাগিয়ে নেন পদোন্নতি। যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্ম সমূহের পরিদপ্তর (জয়েন্ট স্টক)র এ হেন কর্মকর্তার নাম হারুন-অর-রশিদ। বর্তমানে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে রয়েছেন রাজশাহীতে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান {ঢাকার নথি নং-০৪.০১.০০০০.৬২১.২৬.০০৫.১৮ (অংশ-৫).৬২৬২৩} ধামাচাপা দিয়ে শুরু করেছেন পদোন্নতির তোড়জোড়। এ প্রক্রিয়ায় প্রথমে নিজেকে সাজিয়েছেন ‘আওয়ামী আমলের বঞ্চিত’ কর্মকর্তা। অতঃপর লগ্নি করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থ,ম্যানেজ করেছেন পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট নিজ দফতর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
সূত্রটি জানায়, মো: হারুন-অর-রশিদ ১৯৯২ সালে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি নেন প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায়। পরবর্তীতে ‘উচ্চমান সহকারী ও এক্সামিনার অ্যাকাউন্টস’ হিসেবে বাগিয়ে নেন পদোন্নতিও। যদিও পদোন্নতি কমিটি হারুনকে সুপারিশ করেন ‘ইন্সপেক্টর’ পদে। কিন্তু তার পদোন্নতির চিঠি ইস্যু করা হয় ‘এক্সামিনার’ হিসেবে। মোটা অঙ্কের অর্থের লগ্নি করে জালিয়াতি ও ২০০৯ সালের দিকে আওয়ামী লবি ধরে এ পদোন্নতি নেন। প্রমোশন নিয়েই পদোন্নতির পেছনে লগ্নিকৃত অর্থ সুদাসলে ওয়াসিল করতে নিমগ্ন হয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। দুর্নীতিলব্ধ অর্থে ফের আওয়ামী লবির মাধ্যমে পদোন্নতি নেন সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে। পরপর পদোন্নতি এবং ভালো ভালো পোস্টিং বাগিয়ে রাতারাতি বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
নিম্ন বেতনভোগী কেরাণী (এলডি ক্লার্ক) হওয়া সত্ত্বেও কি করে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন- এ প্রশ্নে ভিরমি খান নিজের আত্মীয়-স্বজনও। নামে-বেনামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। এর মধ্যে রয়েছে, খুলনার টুটপাড়ায় একটি বাড়ি। একই শহরের বসুপাড়ায় আরেকটি বাড়ি। রাজধানীর মিরপুর থানার পেছনে ৬২, বড়বাগে শেল কোম্পানির ১ নম্বর ভবনের ৪র্থ তলায় কেনেন কয়েক কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট। মিরপুর ডিওএইচএস ফ্ল্যাট কিনেছেন মেয়ের নামে। নিকটাত্মীয়ের নামেও রয়েছে বিপুল অবৈধ অর্থ-সম্পদ। নিজ জেলা যশোরেও রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।
রাজধানীর ৩৩, কারওয়ান বাজারে শাহ আলী টাওয়ারে রয়েছে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। ফার্মটি তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট মিথিলার নামে। মূলতঃ চালাচ্ছেন হারুন নিজেই। রাজশাহীতে বদলি হয়ে যাওয়ার আগে তিনি নিয়মিত বসতেন এই ফার্মে। এ সময় তিনি কোনো কোম্পানি জয়েন্ট স্টকে নতুন নিবন্ধন কিংবা নবায়ন করতে এলে গোপনীয় নথি নিয়ে যেতেন নিজ চেম্বারে। প্রত্যাশী প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে সেটিও হারুন পাস করিয়ে দিতেন জয়েন্টস্টকে। সে সময় তার ব্যক্তিগতভাবে ফার্ম পরিচালনার বিষয়টি জয়েন্ট স্টকে অনেকটা ওপেন-সিক্রেট। কিন্তু তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করতেন, তখনই হারুন নিজেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার এপিএস’র সাইফুজ্জামান শিখরের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। এছাড়া প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে তার কোন্ কোন্ আত্মীয় রয়েছেন- সেই ফিরিস্তি দিতেন। ভয় দেখাতেন। এর ফলে দুর্নীতিবাজ হারুনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।
প্রধান কার্যালয়ের আগে হারুন ছিলেন জয়েন্ট স্টকের চট্টগ্রাম অফিসে। এ সময় তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ এবং সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ ওঠে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে তিনি পদোন্নতি নেন। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাপাপড়া ফাইলটি তদন্তের জন্য কমিশন সভায় ওঠে। নবোদ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ পাঠানো হয় অনুসন্ধান নথি। সেখানেও অভিযোগটি বছরখানেক ধামাচাপা দিয়ে রাখেন হারুন। ২০২১ সালে সংস্থাটির তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো: শহীদুল ইসলাম মোড়ল রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি ওই বছর ২৭ অক্টোবর হারুনের চাকরিকালীন উত্তোলিত মোট বেতন-ভাতার বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে জয়েন্ট স্টক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। অনুসন্ধানটি ফের ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন হারুন।
দুদক সূত্র জানায়, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সহকারী রেজিস্ট্রার হারুনের বিরুদ্ধে এখন অনুসন্ধান করছেন সহকারী পরিচালক রনজিৎ কুমার। তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান পর্যায়ে এটি এখন সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে ৫ আগস্ট ঘটে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। উদ্ভূত পরিস্থিতিরও সুযোগ নেন হারুন। আওয়ামী আমলে সুবিধাভোগী হারুন চট করেই বনে যান ‘বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার’।
জানাগেছে, হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া জয়েন্ট স্টকের মহাপরিচালক মো: মিজানুর রহমান এনডিসিকে হাত করে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় দুদকের কাছে এসএসবি ক্লিয়ারেন্স চেয়ে পাঠায়। অনেকটা সুপারসনিক গতিতে চলছে হারুনের পদোন্নতি প্রক্রিয়া। দুদকের লাইন-ঘাট হারুনের আগেই জানা। জাজ্বল্যমান তদন্তকে ‘নাই’ করে দিয়ে বাগিয়ে নেন দুদকের এসএসবি ক্লিয়ারেন্স {(স্মারক নং-০০.০১.০০০০.১০৩.০৬.০০৪.২৪.১৩২৪/১(২)}।
সংস্থাটির সচিব খুরশীদা ইয়াসমিন গত ২১ অক্টোবর ক্লিয়ারেন্সে স্বাক্ষর করেন। অন্যদিকে ভুক্তভোগী জনৈক মো: আনিসুজ্জামান খানের করা অভিযোগের ভিত্তিতে হারুনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুরু করে আরেকটি তদন্ত (স্মারক নং-২৬.০০.০০০০.০৮৮.২৭.০২৮.১৭.২১৮)। জানাগেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অণুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দায়মুক্তি নিয়েছেন সেই তদন্ত থেকেও। এখন শুধু অপেক্ষা ‘বঞ্চিত’ কোটায় দুর্নীতিবাজ হারুনের পদোন্নতির আদেশ জারির। কি করে এটি সম্ভব হলো- জানতে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে ফোন করা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অণুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে। জবাবে তিনি বলেন, এখন মিটিংয়ে আছি। পরে ফোন করুন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
নোয়াখালীর সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন