ক্ষোভ ঘৃণা গণবয়কট!
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি বিতর্কিত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে আসেননি কোনো আইনজীবী। তার জামিন আবেদনের শুনানি ছিল গতকাল মঙ্গলবার। মহানগর দায়রা জজ মো.সাইফুল ইসলামের আদালতে এই জামিন শুনানিতে অংশ নেন রাষ্ট্রপক্ষে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী। কিন্তু চিন্ময়ের পক্ষে কেউ আসেনি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের সময় চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানি আগামী ২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া শুনানিতে অংশ নেন। আদালতে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, জিপি কাশেম চৌধুরী, হাসান আলী চৌধুরী, অ্যাড. আবদুস সাত্তার, সামশুল ইসলাম, অ্যাড. আব্দুল আজীজসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী। সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন, দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর চিন্ময় এবং তার উগ্রপন্থী সমর্থকদের প্রতি যে গণবয়কট, ঘৃণা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে আদালতে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করার পর ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে চরম বিক্ষুব্ধ সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনতা। আর তাই দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আইনজীবীরা তাকে বর্জন করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী আইনজীবীরাও তার পক্ষে দাঁড়াতে আসেননি। সাধারণ হিন্দুদের কেউই তার সমর্থনে আদালত এলাকায় আসেনি। অপকর্মের কারণে তাকে খোদ সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মনে করেন সাধারণ আইনজীবীরা।
তারা বলেন, এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হয়ে এদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা যারা করছে চিন্ময় তাদের একজন। সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে তার এমন দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড সাধারণ হিন্দুদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কারণ তারা এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পক্ষে।
বিগত ২৬ নভেম্বর তার জামিন আবেদন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে তার দায়ও কেউ নিতে চাইছেন না। কারণ পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের মদদে ওইদিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে ভয়াবহ নৈরাজ্যের অপচেষ্টা করা হয়। তবে ভারতীয় আধিপত্যবাদিদের ফাঁদে পা দেননি চট্টগ্রামের সচেতন মানুষ।
জানা গেছে, চিন্ময়ের সাথে কিছু উগ্রবাদী ইসকন সদস্য এবং ভারতের কেনা কিছু চিহ্নিত দালাল ছাড়া আর কেউ নেই। আদালতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের প্রবেশ মুখে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যতীত সকল যান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ব্যক্তিগত গাড়িও তল্লাশি করে এরপর আদালত এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল। আদালতে প্রবেশ মুখেই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। নাশকতা মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। শুনানিতে চিন্ময়কে আদালতে হাজির না করে ভার্চুয়ালি হাজির করার প্রস্তুতিও নেয়া ছিলো।
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে চিন্ময়ের সমর্থক উগ্রবাদী লোকজন। আড়াই ঘণ্টা নৈরাজ্যের পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। তারা কোর্টে হিল মসজিদ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হবার পর সেদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার মিছিল নিয়ে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বিজয় স্তম্ভে ছাত্র-জনতার উড়ানো জাতীয় পতাকার উপর জঙ্গিবাদি গোষ্ঠীর গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা করা হয়। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে। চিন্ময় দাশকে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেয়া হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে। এতে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় তারা বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন নগরীর কোতোয়ালী থানায়।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ : শুনানি চলাকালে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনরত আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে সোনালী ব্যাংক চত্বরে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী ঐক্যজোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সামশুল আলম। সঞ্চালনা করেন ঐক্যজোটের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জহুরুল আলম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী ঐক্যজোট ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার, আইনজীবী ফোরামের সাবেক সেক্রেটারি এসইউএম নুরুল ইসলাম, আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক ও অতিরিক্ত জিপি কানিজ কাউসার রিমা, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম আদালত শাখার আমীর অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পতিত স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। দেশপ্রেমিক জনতা যেকোনো চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তারা বলেন, চিন্ময় রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলায় আসামি। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা করেছে। তার বিচার অবশ্যই হতে হবে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে চিন্ময়কে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ তার মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে ভারত বাংলাদেশকে হুমকি দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময়কে আসামি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। তারা বলেন, ওইদিন চিন্ময়কে প্রিজনভ্যান থেকে মাইকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার ফলে সহিংসতা বেড়ে যায়। তার উস্কানিমূলক বক্তব্যে ইসকনের সমর্থকরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করে। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অপরাধ থাকা সত্ত্বেও তাকে কারাগারে বিশেষ সুবিধা দেয়ায় আইনজীবীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। বক্তারা আশা প্রকাশ করে, বলেন, পরবর্তী শুনানিতে মামলার সব পক্ষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ