ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

অঙ্কুরিত হয়নি ৫০ শতাংশ প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ, কৃষকের মাথায় হাত

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ফরিদপুর জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সেই লক্ষ্যে প্রতি বছর সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়। তবে এবারের প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে নিম্নমানের বীজ পেয়ে দিশেহারা তারা। বিষয়টির সত্যতাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রবি মৌসুমের আওতায় ৫ হাজার ২০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-৪ ও ৬ জাতের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজ বীজের সঙ্গে ২০ কেজি সারও বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে তাহেরপুরী জাতের ৪ হাজার ও বারি জাতের ১২শ’ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তবে এতে প্রণোদনা পাওয়া সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এই বিষয়ে কৃষক রহমান, আমীর খান, রহমতুল্লাহ ইনকিলাবকে জানান, এসব বীজের ৫০ শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। এমনকি কোনো কোনো কৃষকের জমিতে অঙ্কুরিত বীজের হার ০ শতাংশ।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা ইনকিলাবকে বলেন, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলে সরেজমিনে প্রমাণ পেয়েছেন। যার হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। এদিকে বীজবপনের সময় শেষ হওয়ায় হতশায় দিন কাটছে কৃষকদের।

এ বছর ফরিদপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, সদরপুর, সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যাদের তাহেরপুরী জাতের এক কেজি বীজ পেয়েছেন তারস সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথের ফকির হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে। এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার, ডিক্রিচড়ের কৃষক মোনতাজ, নগরকান্দা সাগরদির ওবায়দুর, ভাঙ্গা শুয়াদির হাফিজুল, সদরপুর চরমানাইরেট সওার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামের কৃষক আহসান মোল্যা এরা সকলেই ৮০ থেকে ৯০ শতক জমিতে আবার কেউ দুই বিঘা (১০৫ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন বলে ইনকিলাবকে বললেন । এ লক্ষ্যে উল্লেখিত উপজেলার কৃষকরা প্রণোদনার এক কেজিসহ আরো এক কেজি বীজ চড়া দামে ক্রয় করে বপন করেন। কিন্তু প্রণোদনায় পাওয়া বীজের অঙ্কুরিতের হার দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। শুধু তার নয়। ওই এলাকার কারও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি বলে কৃষকরা ইনকিলাবকে অভিযোগ করেন।

এই বিষয় পেঁয়াজের রাজধানী সালথার কৃষক আহসান মোল্যা ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমি যে বীজ পেয়েছি তার কিছুই জ্বালায়নি (অঙ্কুরিত) হয়নি। কয়েকদিন পরই হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। এখন নতুন করে বীজও পাওয়া যাচ্ছে না বা বুনানোর (বপন) সময়ও শেষ। আমি এখন কী করবো জানি না। এই পেঁয়াজ দিয়ে আমাদের সংসার চলে। এ বছর পেঁয়াজ বীজের দাম আমার কেনার (ক্রয়ের) ক্ষমতার বাইরে থাকায় উপজেলা থেকে এক কেজি বীজ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু তা কিছুই জ্বালায়নি। আমি এর ক্ষতিপূরণ এবং জড়িতদের বিচার চাই।’
একই কথা ইনকিলাবকে বলেন নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক নজরুল মিয়া। তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি বীজ বপন করেন। কিন্তু তার জমিতে ৫ শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন ক্ষতি করলো কেন। এখন কী দিয়ে চাষাবাদ করবো? আমাদের ক্ষতিপূরণ না দিলে সংসার নিয়ে বাঁইচ্যা থাকতে পারবো না।’
অপরদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল এলাকার কৃষকদের এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তারা। তারা বিএডিসি কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাজ শুধু বিতরণ করা। বীজ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দায়িত্ব বিএডিসি (বীজ বিপণন) কর্মকর্তাদের। এজন্য তারাই দায়ী।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছি। এবারের অঙ্কুরিতের হার সন্তোষজনক নয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ডিসি স্যারের সঙ্গে আমাদের জরুরি মিটিংও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির জেলা বীজ বিপণনের উপ-পরিচালক সৈয়দ কামরুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই বিষয় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, কেউ আইনের বাইরে নয়, ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকরা দেশের সম্পদ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত