বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন,ফ্যাসিস্ট পতিত হাসিনার দোসররা দেশি ভিনদেশিদের কাঁধে ভর করে দেশকে অশান্ত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখছে। সকল রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতকরণ ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন সরকার প্রতিষ্ঠায় আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অপসারণ থেকে দেশবাসী মুক্তি পেলেও আমাদের এখনো কাঙ্খিত বিজয় আসেনি। দুর্নীতি, অবিচার ও জুলুম মূলোৎপাটনে এখানে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক সংস্কার ও শিক্ষাব্যবস্থার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই। মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, সাহসিকতার সাথে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী যে কোন হুমকি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল ষড়যন্ত্র ও উস্কানি ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করতে হবে। উগ্রবাদীদের কোন পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সরকার যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তা হতে হবে আমূল ও টেকসই। এখানে অংশীজন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষ করে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা যাবে না। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াসের প্রতিফলন রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের গর্ব সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ অব্যাহত রাখা এবং সকল সক্ষম নাগরিককে ১ বছরের সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার থাকার জন্য আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি। ঈমান ও দেশপ্রেমবোধ জাগ্রত করে আমাদেরকে স্বাবলম্বীতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, হযরত হাফেজ্জ্বী হুজুর (রহ.) তাওবার রাজনীতির ডাক দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে জাগ্রত করে গেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, খেলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনমান উন্নয়নে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সুনিপুণভাবে পরিচালিত করে। খেলাফতের আদর্শে একটি জনকল্যাণমূলক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থা আমরা বাংলাদেশে কায়েম করতে চাই। যেখানে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, বরং মজলুমের পক্ষে ও জালিমের বিপক্ষে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী হিসেবে আমাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলেও তা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।
মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ধর্ম শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করেছিল। নতুন কারিকুলামের নামে ভারতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি দেশের জনগণের ওপর চাটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। যা দেশবাসী ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্মীয় বিষয়ে বই থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে ধর্মীয় শিক্ষকের কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি। হাজার হাজার ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরেও এই বৈষম্য দেশবাসী মেনে নিবে না। তিনি বলেন, বিগত ২০১৩ সালে ২৬ হাজার রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করলেও ইসলাম ফোবিয়ার কারণে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করা হয়নি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয়করণ করতে হবে। প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঠিক ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষা কারিকুলামকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্রাজ্যবাদী ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করতে যুগ যুগ ধরেই অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
দেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদীসহ সকল দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট পতিত হাসিনা ভারত বসে তার দোসরদের নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ভারত ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ বিষয়ে যে অসত্য ও অতিরঞ্জিত প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে তার ফসল হচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনে হামলা। ভারত সরকার এই হামলার দায় এড়াতে পারে না। তিনি বলেন,স্বাধীনতার পর থেকে ভারত কখনো বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করেনি। সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। আমরা ভারতের এসব আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ভারতে বসে পতিত স্বৈরাচার খুনি হাসিনা এসবে ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। খুনি হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি জুলাই-আগস্টের শহীদ ও শাপলা চত্বরের শহীদদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরুর জোর দাবি জানান।