আগামী বছরই হয়তো নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দেখবো -ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার

০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

আগামী বছরই (২০২৫ সাল) হয়তো নির্বাচিত সরকার দেখবো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, আমাদের এই সরকার খুবই স্বল্পকালীন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী বছরই আমরা হয়তো একটি রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখবো। জানি না কী হবে। গতকাল শনিবার গুলশানের হোটেল লেকশোরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা কবে ধনী দেশগুলোকে পেরিয়ে আরও ধনী হবো, সেরকম কিছু আমরা সবাই মিলে করতে পারি। কিন্তু কোনো দেশ কখনো হঠাৎ করে উন্নত হয়নি।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মানুষের টাকা ব্যাংকে আছে, কিন্তু ব্যাংকের সব টাকা বাইরে চলে গেছে। ব্যাংক থেকে বিদেশে পাচার করা টাকা তো মানুষের। এখন ব্যাংকগুলোর এই মানুষের টাকার জন্য রিসোর্স দরকার। তিনি বলেন, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স শিটে এখন দেখা যাচ্ছে যে অনেক টাকা আছে, কিন্তু আসলে দেশের ভেতরে কোনো রিসোর্স নেই। তাদের ওয়েজ দিতে হবে। ৩০ হাজার, ৪০ হাজার বা এক লাখ শ্রমিককে একদিনে বিদায় দেওয়া যায় না। সেটা অনেক বড় অসন্তোষের সৃষ্টি করবে, যেটা এখন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাহলে কোথা থেকে এই টাকা আসবে? তার মধ্যে যদি এখন বলা হয় যে আমাদেরকে আরও ইক্যুয়াল সোসাইটির দিকে যেতে হবে যার অর্থ জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরও রিসোর্স বিল্ড করতে হবে ইত্যাদি।

উপদেষ্টা বলেন, মার্কেট ইকোনমিকে ইক্যুয়াল করতে হলে অনেকে এখন বলে, অর্গানাইজেশনাল ডেমোক্রেসি লাগবে। প্রান্তিক কৃষক বলি বা শ্রমিকের কথা বলি, তাদের অর্গানাইজেশনাল স্ট্রেন্থ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চরের জমি দখল হয়ে যায়। হাওর অঞ্চলে অনেক জলাভূমি পরে আছে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা দরকার। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা এগুলো দখল করে নিয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে এটা যদি শক্তিশালী থাকত—অর্গানাইজেশনাল ডেমোক্রেসি, গ্রাসরুট ডেমোক্রেসি থাকত, তাহলে এখান থেকে অনেক রিসোর্স আসতো। এটা যদি গরীবদের কাছে যেতো, তাহলে অনেক লাভ হতো।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগেুলোকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে উল্লেখ করে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রতিযোগিতামূলক হওয়া মানে শুধু চিপ লেবার, লো-টেকনোলজি না। এর বাইরে টেকনোলজিক্যাল ইনোভেশন এবং হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট দরকার। সেখানে ভূমিকা রাখবে শিক্ষা। দেশের শিক্ষা যে অবস্থায় আছে, এটা দিয়ে, এই মানব সম্পদ দিয়ে একদমই হবে। পূর্ব এশিয়ায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নেয়, আর প্রায় ৭০ শতাংশ ভোকেশনাল শিক্ষার দিকে যায়। আমাদের দেশে ২০ শতাংশ যায় ভোকেশনাল শিক্ষায়। তাদেরকে আবার যারা পড়াবে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি, আছে মাত্র ২০ শতাংশ। অন্যদিকে জেনারেল এডুকেশনে প্রত্যেক জেলায় জেলায় বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।

বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আর এই কর্মযজ্ঞে যেন উদ্যোক্তা তৈরি হয় ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এজন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

ইন্দরমিত আরো বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কৌশলী হওয়ার পাশাপাশি সেবা ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন বাড়াতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সেমিনারে আগামীতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা সাজানোর পরামর্শ দেয় বিশ্বব্যাংক।

বিভাগ : জাতীয়