ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব দৈনিক ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জালিম সরকারকে কোন দেশের জনগণ গ্রহণ করেনি। জালিমের জুলুম বেশি দিন স্থায়ী হয় না। জালিম ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। ভারত একটি সচেতন রাষ্ট্র হয়ে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার হাসিনাকে কেবল আশ্রয় দেয়নি; হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে নানা প্রকার ষড়যন্ত্র এবং দেশ বিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যা শুধু বাংলাদেশ ন বরং ভারতের জন্য ও যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী মোদি সরকার ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে জীবনের সর্বচেয়ে বড় ভুল করেছে। যা’ দেশটি সাধারণ জগনণ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। বাংলাদেশ সম্প্রাদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ উগ্রবাদ এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নানা নির্যাতন নিপীড়ণের মিথ্যা অপপ্রচার করের কোনো ফয়দা হবে না।
অ্যাডভোকে মাওলানা আব্দুর রকিব বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমন উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের অগনিত আলেম এবং মুসলমানদেরকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা হত্যা করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে যে সব মুসলমান এবং আলেমদের শহীদ করেছিলো, সে সব শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা যাবে না। শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে হবে।
২০১৩ সালের ২৮ মে লন্ডনস্থ ব্রিকলেনের একটি হোটেলে ৬জন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য আমার কাছ থেকে হেফাজতে ইসলামের যাবতীয় দুর্ঘটনা ও নির্যাতনের বিবরণসহ, শহীদদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছিলেন। সারা বিশ্বের জনদরদী রাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব শেখ হাসিনার বিগত ১৬ বছরের জুলুম নির্যাতন সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত সরকার শেখ হাসিনার চরম দুর্নীতি, অপশাসন, জুলুম নির্যাতন সম্পর্কে জ্ঞাত থেকে নিরীহ বাংলাদেশি জনগণের এবং নিরপেক্ষ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক ভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধের সহিত জড়িত রয়েছে। মোদি সরকারের বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপায়ী ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর ভারতের বিধান সভায় বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিষয়ে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে ভারতের সর্বোচ্চ পরিষদে স্বীকৃতির প্রস্তাব উত্থাপন করলে অটল বিহারী বাজপায়ী মোদির দলের মূল নেতা চরম বিরোধীতা করেন এবং দেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। নরেন্দ্র মোদি একটি প্রতিবেশী দেশের দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত অমুসলিমদের সর্বনাশ করে দেশের সর্বপ্রকার ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। মোদি সরকার মানবতা বিরোধী অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসকনকে লালন করছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রামে আদালতে কর্মরত নিরীহ সরকারি আইনজীবী আলিফকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী ইসকন সদস্যরা। এমন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য ভারত সরকারের কেউই নিন্দা জানায়নি। প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুর রকিব অ্যাডভোকেট বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করার আহবান জানান। দেশের জনমতের মূল্যায়ন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য আহবান জানান।
তিনি বলেন, ভারত কিংবা বিদেশি সর্বপ্রকার চক্রান্ত হতে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে নিয়ে তামাশা করা থেকে বিরত না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। তাদের আধিপত্যবাদী মনোভাব যদি অব্যাহত থাকে তবে সবকটি প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ফলে চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এশিয়ার সর্ব বৃহৎ এদেশটি। প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি দেশের জনগণের সবরকম সমর্থন কামনা করে তিনি বিশ্বমুসলিমদের সংগঠন ওআইসি ভুক্ত রাষ্ট্রসমুহের সরকার প্রধানদের ভারতের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত করার আহবান জানান। সার্কভুক্ত রাষ্ট্রসমূহকে পুনসংগটিত করার জন্য তিনি আহবান জানান। এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা আব্দুর রকিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের দ্রুত অপসারণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে সর্বজন স্বীকৃত একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে হবে। তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জুলাই-আগস্টের শহীদ এবং শাপলা চত্বরের শহীদদের হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করার জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গোট জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।