আদানি এখন দিল্লির ঘাড়ে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আদানি পাওয়ার লিমিটেড ভারত সরকারের কাছে নতুন সুবিধা চেয়েছে। ২০০ কোটি ডলারের এই কেন্দ্র থেকে কেবল বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। তবে সম্প্রতি উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় বাজারে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হলেও তার জন্য কর পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় চেয়েছে আদানি।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়ার পর গত আগস্টে আদানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয়ভাবে বিক্রির অনুমতি দেয় দেশটির বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কেন্দ্রটি যেহেতু একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত, তাই উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ে আদানি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন ব্যক্তিরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি এ ক্ষেত্রে ছাড় না দেয়, তাহলে ভারতে এই বিদ্যুৎ আমদানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তার জন্য কর পরিশোধ করতে হবে। কোম্পানিটি একই সঙ্গে আমদানি করা কয়লার ওপর শুল্ক অব্যাহতি অব্যাহত রাখার জন্যও অনুরোধ করেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। গড্ডায় অবস্থিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা হয়।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সুবিধা না পেলে ভারতের অভ্যন্তরে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিক্রি করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েবে। কারণ, দেশটির গ্রাহকেরা বিদ্যুতের দামের বিষয়ে স্পর্শকাতর, অর্থাৎ দাম বেশি হলে ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে ই-মেইল পাঠানো হলেও আদানি পাওয়ার লিমিটেড তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।
আদানির এই কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করা হয়, তা দেশটির বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আদানির পাওনা ৭৯ কোটি ডলারে পৌঁছায় বলে সংবাদে বলা হয়েছে। আদানির কর্মকর্তারা অক্টোবরে এ তথ্য দিলে পরে বাংলাদেশ কিছু বকেয়া পরিশোধ করে।
ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে আদানির এই কেন্দ্র সংযুক্ত করার পরিকল্পনা আছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছিল অক্টোবরে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির একটি সম্মেলনে। তখন কোম্পানির বিনিয়োগকারী সম্পর্ক বিভাগের প্রধান নিশিত ডেভ বলেন, আমরা আশা করছি বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি আরও খারাপ দিকে যাবে না। এখন পর্যন্ত আমরা সেই বিকল্পের দিকে যাচ্ছি না। তবে প্রয়োজন হলে আমরা তা বিবেচনা করব। তবে নিশিত ডেভ এ-ও বলেন, ‘আমরা সব ধরনের বিকল্প খতিয়ে দেখব।’
বাংলাদেশ ছিল আদানির গড্ডা কেন্দ্রের একমাত্র গ্রাহক। তবে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বকেয়া ধীরে ধীরে জমেছে। এরই মধ্যে আগের সরকারের আমলে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি পর্যালোচনার করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে ওই চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
ঝাড়খন্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি আদানির জন্য নতুন মাথাব্যথাও তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীরা কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ডলারের বেশি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। আদানি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা আদালতে বিষয়টি নিয়ে লড়বে।
ভারতের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিয়ে অন্যান্য কোম্পানিও এর আগে ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছে। ২০২০ সালে সোলার সেল ও মডিউলের ৬০ শতাংশই এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হতো। কিন্তু তখন সরকার জানায়, সোলার প্যানেলের ওপর ৪০ শতাংশ ও সোলার সেলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। কোম্পানিগুলো জানায়, এর ফলে স্থানীয় বাজারে তাদের পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। তারা সরকারের কাছে ছাড়ের জন্য আবেদনও করে। এরপর বেশ কয়েকটি কোম্পানি এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে তাদের কারখানা নিয়ে যায়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন সালমানপুত্র শায়ান

ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন সালমানপুত্র শায়ান

লন্ডনে গেলে টিউলিপের বন্ধুর বাসায় বিনাভাড়ায় থাকতেন হাসিনা

লন্ডনে গেলে টিউলিপের বন্ধুর বাসায় বিনাভাড়ায় থাকতেন হাসিনা

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ২৪, ছড়িয়ে পড়ছে আরও নতুন এলাকায়

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ২৪, ছড়িয়ে পড়ছে আরও নতুন এলাকায়

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত

একযোগে ৭ শিক্ষা বোর্ড সচিব পদে রদবদল

একযোগে ৭ শিক্ষা বোর্ড সচিব পদে রদবদল

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত