সংখ্যালঘু হিসেবে নয়, আটকরা আওয়ামী লীগের পদধারী ছিলেন -প্রেস সচিব শফিকুল আলম

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

গত ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় ৮৮টি মামলা হয়েছে এবং এসব ঘটনায় ৭০ জনকে আটক করা হয়েছে।অনেকে সংখ্যালঘু হিসেবে নয়, সদ্য পলায়ন করা দল আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা ছিলেন।

সেই কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে যে কোনো ক্রাইম হলেই আমরা এগুলো সিরিয়াসলি নিচ্ছি। এ গুলোও ক্রাইম হিসেবে দেখে সিরিয়াসলি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর। প্রেস সচিব বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাইনোরিটি রিলেটেড (সংখ্যালঘু) সহিংসতায় ৭০ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ঘটনায় ৮৮ মামলা হয়েছে। যারা ন্যক্কারজনক এসব ঘটনায় জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে, কোনো ছাড় নয়। এ কাজে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও নরসিংদীর ঘটনায় আপডেট দেব। তিনি বলেন, অনেকে সংখ্যালঘু হিসেবে নয়, সদ্য পলায়ন করা দল আওয়ামী লীগের পদধারী ছিলেন। সেই কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে যে কোনো ক্রাইম হলেই আমরা এগুলো সিরিয়াসলি নিচ্ছি। এগুলোও ক্রাইম হিসেবে দেখে সিরিয়াসলি নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবরের পরের ঘটনাগুলোর আপডেট দ্রুতই দেওয়া হবে।

শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকা আরাকান আর্মির দখলে নেওয়ার খবর নিয়ে পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এতে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন কি না, জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি খুব কাছ থেকে ফলোআপ করছেন। যে অংশীজনেরা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আগামী বছর বড় ধরনের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে এ আইডিয়া শেয়ার করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রেস সচিব জানান, আগামী মার্চ-এপ্রিলে এ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ঠিক করে সেকেন্ড হাফ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে এ সম্মেলন হতে পারে। আমরা আশা করছি, পৃথিবীর সব দেশ এ সম্মেলনে অংশ নেবে। বিশেষ করে যাদের এখানে ইন্টারেস্ট আছে, যেমন- চীন, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তারা এখানে অংশ নেবে।

গত ৫ ডিসেম্বর অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের শীর্ষ নেতারা বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ নেই। তারা বলেন, এখানে সব ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে আছেন। বৈঠকের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে। সেগুলোর জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা। জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই এই সরকার যখন গঠন হয় তখন আমি বিমানবন্দরে সবার কাছে আন্তরিকভাবে একটা আহ্বান জানিয়ে ছিলাম যে, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত থাকবে। নানা ধর্ম ও নানা রীতিনীতি থাকবে। কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য, এটাতেই জোর দিয়েছিলাম। আমরা মতপার্থক্য সত্ত্বেও কারও শত্রু নই। সবাই একই কাতারে চলে আসি। আমাদের পরিচয় আছে, আমরা বাংলাদেশি এবং এক পরিবারের সদস্য।

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র চাই। যে পরিবেশটা ৫ আগস্টের পর তৈরি হয়েছে। আমরা শান্তি-সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চাই। যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করা যায় কি না সেই প্রস্তাব দিয়েছি। এই কর্মসূচি যাতে বিভাগীয় শহরেও করা যায়, সেটি বলেছি। আমাদের চার ধর্মের মধ্যে যে ঐক্য সেটি যেন অটুট থাকে। সব অধিকার যাতে নির্বিঘ্ন হয় এসব বিষয়েও কথা বলেছি। ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, আমরা সব ধর্মের মানুষ যাতে সুখে-শান্তিতে ভালো থাকতে পারি, সেজন্য বলেছি। আমরা দেশে ভালো আছি। কে কোথায় বা কোন দেশে কি প্রচার করছে, সেটা তাদের বিষয়। আমরা ভালো আছি, শান্তিতে আছি।

সংলাপে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় আছে। আমরা মন খুলে কথা বলেছি এবং প্রধান উপদেষ্টা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, একটি সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে তারা কাজ করছেন। যেখানে কোনো ভয় থাকবে না। আমরা ধর্মীয় জায়গা থেকে দায়িত্বশীল এবং মুসলমানরা ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। ফরিদপুরে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। সেখানেও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশকে বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে যেতে চাই। সবাই মিলে বলছি, শান্তি-সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ব। ইসলাম আমাদের অন্য ধর্মের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে শিক্ষা দিয়েছে। সংখ্যালঘু ভাইদের নিরাপত্তার জন্য সবাই কাজ করছি। সরকারও তার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমাদের মধ্যে কোনো ফাটল নেই। তিনি বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে কথা বলতে হবে। তাদের জবাব দিতে হবে। আমাদের ওপর মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন সালমানপুত্র শায়ান

ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন সালমানপুত্র শায়ান

লন্ডনে গেলে টিউলিপের বন্ধুর বাসায় বিনাভাড়ায় থাকতেন হাসিনা

লন্ডনে গেলে টিউলিপের বন্ধুর বাসায় বিনাভাড়ায় থাকতেন হাসিনা

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা

দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ২৪, ছড়িয়ে পড়ছে আরও নতুন এলাকায়

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ২৪, ছড়িয়ে পড়ছে আরও নতুন এলাকায়

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত

একযোগে ৭ শিক্ষা বোর্ড সচিব পদে রদবদল

একযোগে ৭ শিক্ষা বোর্ড সচিব পদে রদবদল

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত