তারেক রহমানের সাজা স্থগিত
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত অর্থ পাচারের মিথ্যা মামলায় দেয়া কারাদণ্ড স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ৭ বছরের কারাদণ্ডও স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তারেক রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসিফ হাসান। আদেশের বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ইমেজকে ক্ষুন্ন করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ৭ বছরের সাজা দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আমাদের লিভ দিয়েছেন (আপিলের জন্য অনুমতি)। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদক ও আমাদের আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে বলেছেন।
যে কারণে আলোচিত এ মামলা : বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পর দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তার পরিবারের সদস্য এবং দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা রুজু হয়। এর মধ্যে কিছু মামলার রায় হয় ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী ভারত সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার আমলে। অধিকাংশ মামলার রায় হয় শেখ হাসিনার শাসনামলে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুদক এ মামলাটি দায়ের করে ২০০৯ সালে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আরোহনের পর। মামলায় তার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ২০ কোটি টাকা পাচারের মিথ্যা অভিযোগ আনে। এ মামলা প্রমাণের জন্য ১৩ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে দুদক। এর মধ্যে চার্জশিট বহির্ভুত সাক্ষী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘ ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্ট ডেবরা রেপরোভেটকে উড়িয়ে আনে হাসিনার প্রসিকিউশন।
মানিলন্ডারিং আইনে করা এজাহারে উল্লেখ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য একটি ডেভলপার কোম্পানি ‘নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’র চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নিয়েছেন। এ টাকা সিঙ্গাপুরে লেনদেন হয়। মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন-মর্মে উল্লেখ করা হয়। এটিকে হাসিনার অনুগত প্রোপাগান্ডা মিডিয়া ‘সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের অর্থ পাচার মামলা’ হিসেবে প্রচার করে।
বলা বাহুল্য, হাসিনার শাসনামলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিবার এবং বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রায় শতভাগ রায় হয় হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী। সব মামলায়ই বেগম খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রায় হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে এ মামলাটির রায়ে। দুদকের এ মামলায় ঢাকার তৎকালিন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত মো: মোতাহার হোসেন ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর দেয়া এ রায়ে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া হয় ৭ বছর কারাদণ্ড। পাশাপাশি তাকে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনার সরকার আমলে এটি ছিলো একমাত্র রায় যাতে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। এ রায়ের পরপরই আলোচিত বিচারক মোতাহার হোসেনের ওপর নেমে আসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অমানুষিক নিপীড়ন। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। কয়েক মাস আত্মগোপনে থাকার পর দেশে টিকে থাকাটাই বিচারক মোতাহার হোসেনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি গোপনে দেশ ত্যাগ করে আশ্রয় নেন মালয়েশিয়ায়। পরে তার স্ত্রী-সন্তানদের ওপর নেমে আসে নিপীড়ন। মোতাহার হোসেন এবং তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন’র মামলা করে। চার্জশিট দেয়। বিচারে কারাদণ্ড হয়। মোতাহার হোসেনের স্ত্রী ইন্তেকাল করেন প্রায় বিনা চিকিৎসায়। হাসিনার রোষানলে পড়ে নি:স্ব, সর্বশান্ত সৎ বিচারক মোতাহার হোসেন তীব্র অভিমানে এখনো দেশান্তরী।
এর আগে বিচারিক আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছর ৫ ডিসেম্বর আপিল করে হাসিনা অনুগত তৎকালিন দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি মামলাটির আপিল গৃহিত হয়। গিয়াসউদ্দিন আল মামুনও দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই
বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি আমির হোসেনের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চ দুদকের আপিল মঞ্জুর করে তারেক রহমানকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেন। ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কারাদণ্ড বহাল রাখেন। তৎকালিন হাইকোর্টের দেয়া এ ফরমায়েশী রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু
ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা
ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টে ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন সালমানপুত্র শায়ান
লন্ডনে গেলে টিউলিপের বন্ধুর বাসায় বিনাভাড়ায় থাকতেন হাসিনা
মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, এবার পাশে দাঁড়াল কানাডা
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত্যু বেড়ে ২৪, ছড়িয়ে পড়ছে আরও নতুন এলাকায়
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত
একযোগে ৭ শিক্ষা বোর্ড সচিব পদে রদবদল
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি
হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া, দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে
মধ্যরাতে অনশনে যোগ দিলেন জবির অর্ধশতাধিক ছাত্রী
রিয়ালকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন বার্সা
গোলরক্ষক বীরত্বে ১০ জনের ইউনাইটেড হারাল আর্সেনালকে
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,