দ্রুত আধিপত্য হারিয়েছে ইরান ও তার মিত্ররা
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাশিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার পর রবিবার সউদী আরব, মিশরীয়, কাতার এবং অন্যান্য আরব দেশের কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে আসাদ-পরবর্তী বিশ্বের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনার জন্য বৈঠক করেন। অঞ্চলটিতে এখন ইরানের প্রভাব স্তিমিত হয়ে পড়ছে এবং তুরস্ক ও ইসরায়েলের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সবাই ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিরিয়াতে প্রভাব বিস্তারের জন্য কৌশল অবলম্বন করছে, যেটি ইতিমধ্যেই বছরের পর বছর গৃহযুদ্ধের কারণে খারাপভাবে বিভক্ত।
সিরিয়াতে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির নেতৃতে দেশটির বিদ্রোহী দল হায়াত তাহরির আল-শাম এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলি এখন বিশৃঙ্খলার মধ্যে জাতি গঠনে এই অঞ্চলে পূর্বের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পাঠ মনে রাখার চেষ্টা করছে, যা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ইরাকে ঘটেছে।
দোহায় রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সিরিয়া বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত গেইর ও পিদার্সেন বলেছেন যে, জোলানির দল সংখ্যালঘুদের সম্মান করে এবং সমস্ত সিরিয়াতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য সিরিয়ার নতুন নেতাদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করতে সম্মত হয়েছেন।
পিদার্সেন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আশা করা হচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একত্রিত হবে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ান রাষ্ট্র গঠন করবে এবং তাদের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সিরিয়ার যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদেরকে দেশে ফিরে আসতে সাহায্য করবে। তবে আমি খুব বেশি আশাবাদী হতে চাই না। এটি সতর্ক আশাবাদের একটি সময় কিন্তু সেইসাথে চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সতর্কতারও যদি আমরা একসাথে মোকাবেলা না করি।
মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহুর্তে ঝুঁকি হল যে, সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের বর্তমান অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে এবং একীভূত একটি রাষ্ট্রের উত্থান ঠেকাতে আফগানিস্তানে যেমনটি ঘটেছে, তেমন সিরিয়াতেও প্রাধান্যের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধেু লড়াইয়ে নামতে পারে। এটি মৌলবাদীদের আরেকটি বিশৃঙ্খল, ব্যর্থ রাষ্ট্রের সুযোগ দিতে পারে, যা কেবল ইসরায়েল নয়, উপসাগরের সুন্নি রাজতন্ত্রগুলিকেও হুমকির মখে ফেলতে পারে।
সুন্নি রাষ্ট্রগুলো ঐতিহ্যগতভাবে শিয়া অধ্যুষিত ইরানের আধিপত্যের বিরোধিতা করে আসছে, যেখানে আল-আসাদ একজন আলাউইত, যা শিয়া অনুসারীতের একটি বিভক্ত রূপ।
সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে হায়াত তাহরির আল-শামের প্রকৃত প্রকৃতি এবং উচ্চাকাক্সক্ষা, যা একসময় ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠতার পর প্রকাশ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে সঠিক কথাগুলি বলে আসছে। সোমবার পেডার্সেন বলেন, ‹সিরিয়াকে ইদলিবের মতো শাসিত করা যাবে না। কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় একচেটিয়া থাকতে পারবে না।’
এদিকে, আল-শামকে সমর্থনকারী গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক খেলোয়াড় তুরস্ক উত্তর সিরিয়ার সীমান্ত বরাবর নিজস্ব বাফার জোন তৈরি করেছে এবং সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যাদেরকে তুরস্ক রাষ্ট্রের শত্রু বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার কুর্দিদের আংশিকভাবে সমর্থন করে, যারা আইএসআইএসের অবশিষ্টাংশের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
যদিও তারা আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় স্থিতিশীলতার দুই দেশ একই লক্ষ্য অনুসরণ করছে, কুর্দিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অবস্থানে রেখেছে। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে সোমবার তুরস্ক ঘোষণা করেছে যে তার মিত্ররা আমেরিকা সমর্থিত সিরিয়ান কুর্দিদের কাছ থেকে মানবিজ শহর দখল করে নিয়েছে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের তুরস্ক বিশেষজ্ঞ আসলি আইদিন্তাসবাস বলেছেন, আল-আসাদের পতন তুরস্কের জন্য একটি জয় এবং তাদের জন্য ক্ষতি, যারা তার সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি বলেন, ‹তুরস্কের জন্য, এটি সীমান্তের বিষয় নয়, সিরিয়া জয়ের বিষয়। সিরিয়ার অভ্যন্তরে এবং বাইরে উভয় বিরোধীদের সাথে সংযোগের কারণে তুরস্ক ইরানকে দূরে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এবং পুনর্গঠন থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’
আল-আসাদকে সমর্থনকারী রাশিয়ার সিরিয়াতে তার নৌ ও বিমান ঘাঁটি ধরে রাখতে পারলেও এর সুনাম বিশালভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে রাশিয়ান নীতি নিয়ে অধ্যয়নকারী হান্না নট বলেছেন, যদিও সুন্নি আরবরা ২০১৫ সালে আল-আসাদকে বাঁচানোর জন্য রাশিয়াকে ঘৃণা করতে পারে, মিত্রের পাশে দাঁড়ানো এবং আমেরিকানদের তা দেখানোর জন্য পুতিন কিছুটা সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু এখন রাশিয়া তার সুবিধা হারিয়েছে।’
সিরিয়াতে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে সংযুক্তকারী ইসরায়েলেরও নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। ইসরায়েলও আল-আসাদের পতনকে ইরান এবং হিজবুল্লাহর জন্য একটি স্বাগত ধাক্কা হিসাবে দেখে। এটি সিরিয়ার মধ্য দিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে হামাসের কাছে ইরানের অস্ত্র ও অর্থের প্রবাহকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। এখন ইসরায়েল ইতিমধ্যেই গোলান মালভূমিতে বাফার জোন দখল করে নিয়েছে।
ইসরায়েলের জন্য সিরিয়ার আংশিক দখল গাজা যুদ্ধ সমাপ্ত করে সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে আরও ভাল সম্পর্কের সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে আঞ্চলিক শৃঙ্খলার একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন, যেখানে ইরান এবং তার মিত্রদের আর আধিপত্য নেই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?
মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,
আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ
তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!
সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,
গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা
দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ
চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২
স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব
শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস
শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম
ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ
ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক