গ্রামগঞ্জে আ.লীগ নেতাকর্মীরা এখন ‘দুর্লভ প্রাণী’

স্টাফ রিপোর্টার

১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

ইনকিলাবের ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ জরিপে অংশ গ্রহণ করেছেন সর্বমোট ৬০৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩০৪ জন (৮৭.৮৮ শতাংশ) আর নারী ৭৩২ জন (১২.১২ শতাংশ)। বেশির ভাগ ভোটারই ৫ আগষ্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের উপর বিক্ষুব্ধ। একই সঙ্গে দলটির নেত্রী ভারতের দিল্লির হেফাজতে থাকা শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিবাজ, ভোট চোর, লুটেরা, বিদেশে টাকা পাচারকারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী ফ্যাসিবাদী, আয়নাঘরের জননী ও মানবতাবিরোধী হিসেবে অভিহিত করে তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। ৩৯টি জেলায় এবং ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এ জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ ভোটার মুখে ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘শেখ হাসিনা’ নাম উচ্চারণ করতে চাননি। মাত্র ৫.৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। আর ৯৪.৪২ শতাংশ ভোটার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না বলে জানান। জরিপে অংশ নেয়া অনেক ভোটার তথ্য সংগ্রহকারীদের জানান, এখন আওয়ামী লীগ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা এতো বেশি অপরাধ করেছেন এবং স্থানীয় মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতন করেছেন যে এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে, হাটে বাজারে যেতে ভয় পান।

৬০৩৬ জন ভোটারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সুযোগ থাকা উচিত কিনা? এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মোট ৫৯২৯ জন। এর মধ্যে ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন ২২৭৬ জন (৩৮.৩৮%) এবং ‘না’ উত্তর দিয়েছেন ৩৬৫৩ জন (৬১.৬১%)।

যারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে তারা আয়নাঘর, গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাসহ তার অলিগার্কদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। বিচারের পর নির্বাচনের সুযোগ দেয়ার মত দেন। তারা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে মন্তব্য জানান, আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করতে ঘৃণা লাগে, তবুও বলছি তাদের বিচারের পর নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া উচিত। আওয়ামী লীগকে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ না দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য থাকবে না। জরিপের তথ্যে দেখা যায়, যারা আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে দেখতে চান সেই ১৬২৮ জনের মধ্যে বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের বিচারের পর দলটিকে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে ৭১ জন; দেশে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক, গ্রহণযোগ্য, ভোটারদের উপর ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া যেতে পারে ৫৭৬ জন; অতীতের ভুল স্বীকার করলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ আওয়ামী লীগের থাকা উচিত ৬০ জন; আওয়ামী লীগ পুরনো দল, অন্যতম বৃহৎ দল, মুক্তিযুদ্ধে অবদান আছে সে কারণে ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকা উচিত মত দিয়েছেন ৫৭৭ জন; এবং দেশের গণতন্ত্র চর্চার স্বার্থে আসন্ন নির্বাচনে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া যেতে পরে বলেছেন ৩৪৪ জন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ৩৬৫৩ জন। এদের মধ্যে ১৪৮১ জন বলেছেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদী, একনায়ক, গণতন্ত্র হত্যাকারী; ৭৩৭ জন বলেছেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতিবাজ, ভোট চোর, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, ৮৪২ জন বলেছেন গণহত্যাকারী, ছাত্র হত্যাকারী; ৭০ জন বলেছেন, শেখ হাসিনা ১৫ বছর দিল্লির গোলামী করে ভারতে পালিয়ে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সহায়তায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন; ১৫৪ জন আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী, গুমকারী, আয়নাঘরের জন্মদাতা ও ভারতের দালাল; ৫৩ বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশবিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী; ৩১১ জন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল।

২০ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পরিচালিত ইনকিলাবের জরিপে যারা কাজ করেছেন তারা জানিয়েছেন, বিগত ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে জুলুম, নির্যাতন, দখল, চাঁদাবাজি ,গুম, খুন, আইন-শৃংখলা বাহিনীকে দলীয় লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কার্যত গর্তে লুকিয়েছেন। জরিপের সময় দেখা গেছে গ্রাম পর্যায়ে অনেক আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক ছিলেন; অথচ এখন নিজেকে ‘আওয়ামী লীগার’ পরিচয় দিতে চান না।

বিভাগ : জাতীয়