এখনো অবহেলিত জিয়া স্মৃতি জাদুঘর
১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
এখনো অবহেলিত জিয়া স্মৃতি জাদুঘর। ফ্যাসিবাদের অবসান হয়েছে। কিন্তু তাদের দোসররা রয়ে গেছে সক্রিয়। তাদের কারণেই চরম অবহেলার শিকার হচ্ছে দর্শকপ্রিয় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। ১১১ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনটি সংস্কার, উন্নয়ন আর লোকবল নিয়োগের প্রস্তাব ফাইলচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। পতিত স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া কিছু আমলার কারণে জাদুঘরটিতে সংস্কার ও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগছে না। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার চার মাস পার হলেও জাদুঘরে সংস্কারের কাজ শুরুই হয়নি।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের স্মৃতিবিজড়িত এই জাদুঘরটি বিগত সাড়ে ১৭ বছর ছিল চরম বৈষম্যের শিকার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জাদুঘরটিকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। মাফিয়া সরকারের নিকৃষ্ট সহযোগী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের প্রতিহিংসার চরম শিকার হয় জিয়া স্মৃতি জাদুঘর।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ থেকে জিয়াউর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলার চক্রান্তে মেতে উঠে। তার ধারাবাহিকতায় চরম বৈষম্য শুরু হয় জাদুঘর নিয়ে। শেখ হাসিনার নির্দেশে এই স্মৃতি জাদুঘর থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলতে মাঠে নামে নওফেল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা দফা দফায় জাদুঘরটি ঘেরাও করেছে। কয়েকবার নামফলক মুছে ফেলা হয়েছে। জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম বদলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নামকরণেরও চক্রান্ত করে ফ্যাসিবাদের ওই সহযোগীরা।
বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে বড় ধরনের কোনো উন্নয়ন তো দূরের কথা প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও হয়নি। ফলে ভবনটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিনষ্ট হতে চলেছে ইতিহাসের স্মারক অনেক নির্দশন। জিয়ার আদর্শ বিরোধী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয় জাদুঘর পরিচালনায়। অর্ধেকের কম লোকবল দিয়ে কোনমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই জাদুঘরটি।
সরকারের চরম অবহেলা আর অবজ্ঞার পরেও জাদুঘরটিতে দর্শকের স্রোত আটকানো যায়নি। জিয়াউর রহমানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা অটুট থেকে যায়। প্রতিদিন শত শত দর্শক জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন। নানা শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ সেখানে ভিড় করেন। মূলত জনপ্রিয়তার কারণেই জাদুঘরটি বন্ধ করে দেওয়ার সাহস করেনি ফ্যাসিবাদি হাসিনা সরকার।
জাদুঘরটিতে ঘুরে ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-ফ্যাসিবাদের অবসানের পর জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়ে গেছে। ভিড় সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কিন্তু জাদুঘরে দৈন্যদশায় হতাশ হচ্ছেন দর্শকেরা। তাদের অনেকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, হাসিনার পতনের পরও জাদুঘরটি অবহেলিত থাকা অনাকাঙ্খিত। কারা এর জন্য দায়ী তাদের চিহ্নিত করারও দাবি জানান কয়েকজন দর্শক। তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল এই সরকারের উচিত ছিল দ্রুত এই জাদুঘরের সংষ্কার কাজ শুরু করা। কিন্তু তারা এখনও তা করেনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন কয়েকজন দর্শক।
জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, সংস্কারের অভাবে জাদুঘরের গ্যালারির মূলভবন ছুঁয়ে পানি পড়ে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংযুক্ত শোকেস, ডিওরামা, আলোকচিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মারক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিগত সরকারের অবহেলায় দীর্ঘদিন সংষ্কারের অভাবে মূল অডিটোরিয়াম ভবনটি বন্ধ হয়ে আছে। সেমিনার হল কক্ষের এসি, জেনারেটর ও আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় মাত্র দুটি মাইক্রোফোন দিয়ে কোন রকমে চালু রাখা হচ্ছে। শত বছরের পুরোনো ভবনটি সংষ্কার না করায় মলিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জাদুঘরটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। জাদুঘরটিতে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ৪৩ জন হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৮ জন। শূন্য রয়েছে ১৫টি পদ। এর মধ্যে ১৭ জন অবসর ও এলপিআরে চলে গেছেন। বিশেষায়িত এ জাদুঘরটিতে একটি উন্নতমানের পাঠাগার রয়েছে। সেখানে গবেষক, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদগণ, বিভিন্ন ইতিহাস সমৃদ্ধ পুস্তক ও দলিল-দস্তাবেজ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু গ্রন্থাগারিক না থাকায় বন্ধ রয়েছে লাইব্রেরী কার্যক্রম। ২০১৭ সালে আবুল হাসনাত মো. ফজলে রাব্বিকে গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেয় জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। তিনি ২০২০ সালের ২২ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে আবার জাতীয় জাদুঘরে চলে যান। সেই থেকে এ পদটি শূন্য।
জানা গেছে, ফজলে রাব্বি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারে দোসর হিসেবে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। এখনও জাতীয় জাদুঘরের কতিপয় কর্মকর্তার সাথে সিন্ডিকেট করে জিয়া জাদুঘরের উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাদুঘরটি সংস্কার, উন্নয়ন ও লোকবল নিয়োগে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তাতে ভবনটিতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করতে চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। জনবল সঙ্কটের কারণে জাদুঘরের স্বাভাবিক কাজ বিঘিœত হচ্ছে। তবে এসব চাহিদাপত্র আমলে নিচ্ছে না জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে জিয়া জাদুঘরে সংস্কার কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জাদুঘরটি পরিদর্শন করে জরাজীর্ণ অবস্থায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বৈঠক
নিরাপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তির দাবি করলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা আবু হানিফ
সিলেটের টানা জয়ে উচ্ছ্বসিত স্বাগতিক দর্শকরা
সংবিধানে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লিপিবদ্ধ থাকতে হবে - সারজিস আলম
মুরাদনগরে শীতার্ত মানুষের মাঝে পীরসাহেব চরমোনাই'র পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ
লিটনকে সেরা ছন্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতে চাই: প্রধান নির্বাচক
মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিতরণ করলো ১ লক্ষ কেজি চাল
লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা
সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশ
উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস
২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা
কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০
জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক
যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম
বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড
ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫
চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ
পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১