মোচিকে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় ৫৪২ টাকা!

Daily Inqilab আসিফ ইকবাল কাজল, ঝিনাইদহ থেকে

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল (মোচিক) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতি কেজি চিনিতে ৪১৭ টাকা লোকসান দিয়েছে। গত মাড়াই মৌসুমে সরকারী ভ্যাট ও ব্যংকের সুদ দিয়ে মিলটির প্রতি কেজি চিনি উৎপাদন ব্যায় ছিল ৫৪২ টাকা। গত মাড়াই মৌসুমে চিনি আহরণের হার ছিল সর্বকালের নিচে। ওই বছরে ২৫শ’ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় ১৮শ’ ৭১ মেট্রিক টন। এছাড়া মিলটিতে অপারেশনাল লস হয়েছে ৩৪ কোটি ও ব্যাংক ঋণের সুদ দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৭০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা আর ৩৫০ কোটি টাকা ব্যাংকের দেনা মাথায় নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকালে ৫৮তম মাড়াই মৌসুম শুরু করেছে। মোবরাকগঞ্জ চিনিকলের হিসাব বিভাগ সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরসংলগ্ন এলাকায় ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৭ দশমিক ৯৩ একর নিজস্ব জমির ওপর নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে ২০ দশমিক ৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৮ দশমিক ২২ একর জমিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩ দশমিক ৯৮ একর পুকুর, ১০৭ একর জমিতে ইক্ষু খামার ও ১৮ দশমিক ১২ একর জমিতে রয়েছে সাবজোন অফিস ও আখ ক্রয়কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালীন মৌসুমে পরীক্ষামূলক ভাবে ৬০ কর্মদিবস আখ মাড়াই করে লক্ষ্যপূরণ হওয়ায় ১৯৬৭-৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে। ঝিনাইদহের ছয় উপজেলা ছাড়াও যশোরের দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত মিলে আটটি জোন ও ১৮ দশমিক ১২ একর জমিজুড়ে রয়েছে সাবজোন অফিস ও আখ ক্রয়কেন্দ্র। ঝিনাইদহের ছয় উপজেলা ছাড়াও যশোরের দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত মিলে আটটি জোনের আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ একর। ৪৮টি আখক্রয় কেন্দ্রর আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে তিন লাখ একর।
অবিশ^াস্য চিনির উৎপাদন ব্যয় নিশ্চত করে মোচিকের জিএম (ফাইন্যান্স) হিরণ¥য় বিশ^াস ইনকিলাবকে জানান, চলতি মাড়াই মৌসুমে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৯২০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিনি আহরণের হার ৫.৬%। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌমুমে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদন করতে ব্যায় হয়েছে ৩৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে কর্মচারীদের বেতন ভাতা, সরকারের ভ্যাট আইটি ও ব্যাংকের সুদ যোগ করলে উৎপাদন ব্যয় আরো বেশি হবে।
ধারাবাহিক লোকসানের কারণ ব্যাখা করে তিনি আরো বলেন, ১৯৬৫ সালে স্থাপিত সেই পুরানো যন্ত্রপাতি দিয়ে চিনি উৎপাদন করা হচ্ছে। মিলটিতে কোন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ব্রিটিশ আমলের যন্ত্রাংশে মেরামতসহ ব্যবস্থাপনা বাবদ প্রতি বছরই বাড়ছে জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ। এ কারণে প্রতি বছর লোকসানের বোঝা বাড়ছে। তাছাড়া আখের চাষযোগ্য জমিতে কৃষকরা কলা, ড্রাগন, পেয়ারা ও কুলসহ বিভিন্ন ফল-ফুল চাষ করছেন। এতে আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।
মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) গৌতম কুমার জানান, নিচু জমিতে উৎপাদিত আখে চিনির উৎপাদন হার কম হয়। তাছাড়া মাড়াই মৌসুম শুরু হলে এক শ্রেণীর আখ চাষীর ওজন বৃদ্ধি করার জন্য জমিতে সেচ ও সার প্রয়োগ করেন। ফলে চিনি উৎপাদন হার কমে যায়। মোচিক এালাকার কৃষকদের অভিযোগ, মিলের কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের লাগামহীন দুর্নীতি, কর্তব্য অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে মিলটির ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এছাড়া আ.লীগ সরকারের আমলে অতিরিক্ত অদক্ষ জনবল নিয়োগের ফলে মিলকে প্রতি বছর বেতন ভাতা বাবদ অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়।
আব্দুর রহমান নামে এক কৃষক বলেন, আখের মুল্য না থাকার কারণে চাষিরা আখ চাষে অনীহা হয়ে পড়েছে। এতে ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলের বোড়াই, নারায়ণপুর, কাশিমনগর, হলিধানী ও ঝিনাইদহ শহরের গোপীনাথপুর এলাকার আখ ক্রয় কেন্দ্র বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে। সেখানে এখন পালংশাক ও সবজির আবাদ হচ্ছে।
এদিকে মিল সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো বলছে, মোচিক বন্ধ থাকলে কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ বছরে ৮ কোটি টাকা আর চালালে ৫০ থেকে একশ’ কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়। ফলে চালানোর থেকে না চালানো সরকারের জন্য ভালো। আর চালাতে হলে মিলটি আধুনিকায়ন করলে আবারো লাভের মুখ দেখতে পারবে মোচিক।
এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইলম জানান, মিলটির লোকসান কমাতে এবং আখের উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের নিয়মিত সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করা হচ্ছে। মিল এলাকার কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহ দিতে তাদের সচেতনতার কথা জানিয়ে তিনি আরো জানান, প্রতি বছর যে লোকসান হয় তার বেশির ভাগ ব্যাংক ঋণ ও সরকারের ভ্যাট বাবাদ পরিশোধ করতে হয়। এরপরও গত বছর মিলটিতে অপারেশনাল লস হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা
জাতীয় কবির নাতির চিকিৎসায় ১৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন
বিগত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি : উপদেষ্টা ফাওজুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
আরও

আরও পড়ুন

বিগত ১৫-১৬ বছর আওয়ামীলীগ সাংবাদিকসহ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করেছিল-আলহাজ্ব সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক

বিগত ১৫-১৬ বছর আওয়ামীলীগ সাংবাদিকসহ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করেছিল-আলহাজ্ব সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

জামায়াতকে কোন ইসলামী দল বলে মনেকরিনা -আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

জামায়াতকে কোন ইসলামী দল বলে মনেকরিনা -আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

রুয়েটের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

রুয়েটের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা

কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা

একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার

একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান  জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন