দেশের সমতল ভূমিতে কমলা মাল্টা ড্রাগন উৎপাদনে চমক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
পাহাড়ী জমি না হলে সু-স্বাদু পুষ্টিকর মাল্টা, কমলা বা ড্রাগনসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর ফল উৎপাদন হয় না। সেকেলের এ ধারনা পাল্টে গেছে। কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া, কৃষকদের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের উৎসাহে এখন বাংলাদেশের সমতল ভূমিতেই আবাদ হচ্ছে সব ধরনের সুস্বাদু ফল। যার মধ্যে রয়েছে চর্বি বা সোডিয়ামমুক্ত ৬০ ক্যালোরি শক্তির পাশাপাশি ভিটামিন এ এবং সিসহ বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত কমলা ও মাল্টায়। আর এ কারনে ধনিক শ্রেণীর অত্যন্ত জনপ্রিয় একদা বিদেশী ফলটির ধারে কাছে যেত পারতো না নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষরা। কিন্তু এখন দেশেই উৎপাদিত ফল পাওয়া যাচ্ছে অনেক দামে। প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত এসব ফল এখন সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। যাচ্ছে বিদেশেও। বাংলাদেশী প্রবাসী ভাইদের নিজস্ব উদ্যোগে তাদের শপিং মলে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। ধানের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন সুস্বাদু ফল আবাদের দিকে। অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে মৌসুমী ফলের আবাদ আল্লাহর রহমত হিসাবে দেখা দিয়েছে কৃষকদের পরিবারে।
বাংলাদেশের মাটিতে এক ফসলের জায়গায় তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন হতো। এক জমিতে চার ফসল উৎপাদন হওয়ায় আমরা আমাদের জমিকে উর্বরা জমি হিসাবেই বিবেচনা করতাম। কালের বিবর্তন আর আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থা’র পাশাপাশি কৃষকদের প্রাণপন প্রচেষ্টায় ভুট্টা, লিচুসহ বিভিন্ন ফল কৃষি অর্থনীতিতে জায়গা করে নেয়। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি, সিলেট অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় পাহাড়ী ভূমি ছাড়া কৃষি নির্ভর উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ের ছিটে-ফোটাও নাই। একদা পাহাড়ী জমি ছাড়া চা গাছ হয় না বলেই সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠে চায়ের বাগান। গত দু’দশক আগে নুড়ী পাথর বেষ্টিত পঞ্চগড় জেলায় চা আবাদ শুরু হয়। এখন পঞ্চগড় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন জেলায় পরিণত হয়েছে। চায়ের আবাদ এখন পঞ্চগড় ছেড়ে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলায় বিস্তিৃতি লাভ করেছে।
একইভাবে সুস্বাদু মাল্টা কমলা বলতে ভারতের ডার্জিলিং, ভুটান ড্রাগনের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতো হতো। দামের কারনে এসব ফল ভিআইপি ফল হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। থাকতো ফরমালিনের ভীতি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তা কৃষকদের প্রচেষ্টায় দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে ডার্জিলিং ভুটান ও চায়না মতই হলুদ রংয়ের মাল্টা ও কমলা। মিষ্টি ও স্বাদে বিদেশী মাল্টা ও কমলার মতই। আর ড্রাগন ফল এখন যত্রতত্রই উৎপাদন হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চ গ্রামে গড়ে উঠা মাল্টা ও কমলার বাগান দেখতে দূর দূরান্ত থেকে নারী পুরুষ শিশুরা আসছে। একই ধরনের বাগান রয়েছে উত্তরের অনেক এলাকায়। স্বাদে ও সাইজে এসব কমলা ডার্জিলিং ভুটানের কমলার মতই। এই বাগানটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ব্যাপক জনসমাগমের কারনে বাগান কর্তৃপক্ষ টিকেট কেটে বাগানে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছে। বাগানে প্রবেশে জনপ্রতি খরচ হচ্ছে ৩০ টাকা।
দিনাজপুর কাহারোলে পল্লীতে কমলা চাষে সফলতা অর্জন করেছেন প্রভাষক সেলিম রেজা। তার নিজস্ব এক একর জমিতে গত ২০২০ সালের জুন মাসে চায়না ও পাকিস্তান জাতের ২০০ কমলা ও ২০০ মাল্টার চারা রোপণ করেন। ২০২২ এপ্রিলে তার বাগানে প্রথম ফলন আসতে শুরু করে। প্রথম বছরেই তিনি ৩৫ মণ কমলা ও ৫০ মণ মাল্টা বিক্রি করেন। তারপর দ্বিতীয় বছর তার বাগানের সব গাছেই ফল আসে। এবার তার মাল্টা গাছ থেকে ১২০ মণ ফল পেয়েছেন। এসব মাল্টা বাগান থেকে ক্রেতারা ক্রয় করে নিয়ে গেছেন। আর কমলা গাছ থেকে তিনি ১০০ মণ কমলা পাওয়ার আশা করছেন। এরই মধ্যে তিনি ৩০ মণ কমলা বিক্রি করেন। আরো ৭০ মণ কমলা পাবেন আশা তার।
দেশের বিভিন্নস্থানে চাষিরা দামি ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাহাড়ের ফলগুলো নেমে এসেছে সমতল ভূমিতে। আলু, পটল, করলা চাষের জমিতে দেদারসে ফলছে দামি ড্রাগন ফল। সামান্য উঁচু জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা, কমলা, রাম্বুটানসহ বেশ উচ্চমূল্যের ফসল। এসব মাল্টা-কমলা চাষে কৃষকদের আগ্রহী হওয়ার পিছনে অল্প জমিতে অধিক লাভই অন্যতম কারন বলে জানা গেছে।
সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে বছরে ফলের বাজারের আকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় আপেল। এর পরের অবস্থান মাল্টার। এ দুটি ফলের বাইরে কমলা, ডালিম, আঙ্গুর, নাশপাতি ও লেবুজাতীয় ফল আমদানি হয়। যার পুরোটাই ছিল বিদেশ নির্ভর। গত দশ বছরে ক্রমান্বয়ে এই বাজারের একটি অংশ দেশে উৎপাদিত ফল দখল করে নিয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে ফল আবাদ এখন নির্দিষ্ট এলাকা ভেদে নয় দেশের সকল অঞ্চলেই উচু সমতল জমিতে আবাদ হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রুয়েটের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা
একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার
চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান
শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে
বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা
যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার
ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল
সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার
আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের
চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান
জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের
এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে : আমির খসরু
ইনকিলাবের কবির হোসেন কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত