বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

আয়েশার শরীরে এখনো ৬০ গুলি

Daily Inqilab হাসান-উজ-জামান

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

২১ জুলাই সন্ধ্যা। তখনো মাইকে মাগরিবের আযান শোনা যাচ্ছিলো। ঠিক এমন সময় আয়েশা জানতে পারেন নরসিংদীর মাধবদীর পাথরপাড়া এলাকায় আন্দোলনরত মানুষকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ছে আওয়ামী সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সঙ্গে ছিলো স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। আত্মরক্ষার্থে মানুষ বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও আশপাশের প্রতিষ্টানের ভেতরে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখান থেকেও মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং রাস্তায় যাকে পাচ্ছেন গুলি করছে পতিত সরকারের দোসররা। খবর শুনেই দ্রুত মাধবদীর দিঘিরপাড়ের বাবার বাড়ি থেকে দৌড়ে চলে যান পাথরপাড়া মোড়ে। কারন সেখানেরই জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন তার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া একমাত্র ধন পুত্র মোহাম্মদ হোসাইন।
কিন্তু বিধি বাম। পুত্রকে নিরপদ করতে গিয়ে নিজেই গুলির মুখে পড়েন। একটি বা দু’টি নয়। শরীরে একাধিক গুলি বিদ্ধ হলে তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। গুলির শব্দ কমতে থাকলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন। আশপাশের কোথাও আহতদের চিকিৎসা করাতে না দেয়ায় আয়েশার বাড়িতেই ডেকে আনা হয় গ্রাম্য চিকিৎসক। কোনো ধরনের এক্সরে কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শুধু মাত্র শরীরের উপরিভাগে থাকা এবং ক্ষত চিহৃ দেখে ওই চিকিৎসক আয়েশার শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করেন। এরপর সামান্য কিছু ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তিনি দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আয়েশা অনুভব করেন তার শরীরে অহস্য যন্ত্রণা। অনুভব করেন তার শরীরে গুলি রয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না ২৭ বছর বয়সি স্বামী পরিত্যাক্তা এ নারী। এরপরে ৫ আগস্ট বিপ্লবের পটপরিবর্তন শেষে আয়েশা ছুটে আসেন ঢাকায়। পরামর্শমতে ভর্তি হন পঙ্গু হাসপাতালের বিশেষায়িত ওয়ার্ডে। যেখানে শুধুই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা চলছে। তবে বর্তমানে আয়েশাকে ওই তালিকায় রেখেই নারী ওয়ার্ডে অন্যান্য নারী রোগীদের সাথে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানে এ´্ররে রিপোর্ট অনুযায়ী আয়েশার শরীরের বিভিন্নস্থানে এখনো অন্তত: ৬০ টি গুলির অস্তিত্ব রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এগুলো শর্টগানের গুলি (ছররা)। যদিও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত একটি গুলিও বের করা হয়নি। আয়েশা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা বলেছেন, সবগুলো গুলি বের করা নাকি সম্ভব হবেনা। শধুমাত্র চামড়ার কাছাকাছি যেসব গুলি রয়েছে সেগুলোই বের করা হবে।
আয়েশা বলেন, ভালো মন্দ বোঝার আগেই দরিদ্র পিতা তাকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেন। তখন বয়স ১৩ কি ১৪। দু’এক বছর সংসার করতে না করতেই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। একমাত্র পুত্রকে বেঁচে থাকার অবলম্বন করে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ভর্তি করি মাদরাসায়। ১১ বছরের ছেলে হোসাইন এখন মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
আয়েশা বলেন, স্বামী তাকে তাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে বাবা জানু মিয়ার বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেখানেই সেলাইয়ের কাজ করে কোনোভাবে জীবন যাপন করছেন।
কারা গুলি করেছে জানতে চাইলে আয়েশা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে তার তেমন ধারনা নেই। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় বর্ডর গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একাধিক গাড়ি ছিলো সেখানে। তারাই নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।
এদিকে আয়েশা বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হলেও এখনো তিনি পাননি। কারন তিনি সম্প্রতিই হাসপাতালে এসেছেন। তবে ভর্তির পরেই তিনি আন্দোলনে আহতদের তালিকাভূক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে যেহেতু অনেক পরিশ্রম করে খেতে হয় তাই আমার সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরী। কাজেই আমার শরীর থেকে যেনো সবগুলো গুলি বের করা হয়। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার একটা নিরাপদ নিশ্চয়তাও দাবি করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা
জাতীয় কবির নাতির চিকিৎসায় ১৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন
বিগত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি : উপদেষ্টা ফাওজুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
আরও

আরও পড়ুন

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে - ডা: শফিকুর রহমান

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে - ডা: শফিকুর রহমান

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান  জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে : আমির খসরু

রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে : আমির খসরু

ইনকিলাবের কবির হোসেন কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত

ইনকিলাবের কবির হোসেন কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত

সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল

শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ

ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ