দূষণে রাজধানীর বাতাস ভারী

ঢাকায় বুকভরে শ্বাস নিতে চাওয়ার আকুতি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ স্থানে আছে। দূষণে ঢাকার বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। এই বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। শ্বাসের সঙ্গে যেসব দূষিত বায়ু দেহে প্রবেশ করে, তা মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। অথচ বায়ুদূষণের বিষয়টি ১ নম্বর সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করছে না সরকার। মানুষ ঢাকায় বুকভরে শ্বাস নিতে চায়। এ জন্য সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায় জনগণ।গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে অনতিবিলম্বে জরুরি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবিতে এক অবস্থান কর্মসূচিতে এ কথা বলেন পরিবেশকর্মী ও অধিকারকর্মীরা। কর্মসূচির আয়োজক জনভাষ্য ও ই-আরকি। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ঢাকাকে বায়ুদূষণমুক্ত করতে সরকারকে এখনই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে না। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ঢাকাকে বায়ুদূষণমুক্ত করতে সরকারকে এখনই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ কর্মসূচি যখন চলছিল, তখনো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বাতাসের মান সূচকে ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষ। স্কোর ছিল ২২৫। বায়ুর এই মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরিবেশ দুষণ নিয়ে সরকার কিছু গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন কর্মসূচিতে। এতে বলা হয়, দূষণের বেশ কিছু উৎস রয়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণের ৩০ শতাংশ হয় নির্মাণকাজ থেকে। ইটভাটা ও কারখানা থেকে ২৯ শতাংশ। যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তদেশীয় বায়ু (প্রায় ১০ শতাংশ), রান্নার চুলা (প্রায় ৯ শতাংশ) ও বর্জ্য পোড়ানো থেকে (৮ শতাংশ) বায়ুদূষণ হচ্ছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দূষিত বায়ুতে থাকার কারণে বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৮ মাস কমে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে ২০১৯ সালে অন্তত ৭৮ হাজার ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে।
কর্মসূচিতে ই-আরকির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক সিমু নাসের বলেন, যেকোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধান কাজ হলো সমস্যাকে আগে স্বীকার করা। বায়ুদূষণ যে ১ নম্বর সমস্যা, তা সরকার ভাবেই না। বায়ুদূষণ কমাতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ দেখা যায় না। কারণ, তারা তো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে (এসি) থাকে। শীতকালে দূষণের কারণে ঢাকার বাতাস ভারী হয়ে লোকজন নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
ঢাকায় সবাই বুকভরে শ্বাস নিতে চায়, সুন্দরভাবে বাঁচতে চায় বলে মন্তব্য করেন অভিনেতা সুমন আনোয়ার। তিনি বলেন, অথচ পরিকল্পনাহীনভাবে কাজ চলায় ঢাকা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বায়ুদূষণের স্থানে পরিণত হয়েছে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকা বড় হচ্ছে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় যাঁরা রয়েছেন, তারা ঠিকই তাঁদের কার্যালয়, বাসা ও গাড়িতে এসি স্থাপন করে দূষণমুক্ত রাখছেন। দুর্ভোগে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
কর্মসূচিতে ‘বাসযোগ্য ঢাকা চাই’, ‘বায়ুদূষণকারী প্রকল্প নয়’, ‘পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন চাই’, ‘ঢাকা অবাসযোগ্য গ্যাস চেম্বার’, ‘ধোঁয়ার বদলে সবুজ চাই’, ‘নির্মল বায়ু আইন পাস করো’, ‘আমাদের শ্বাস নিতে দাও’, ‘নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করো’, ‘পরিষ্কার বাতাস ও সুস্থ জীবন চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ান পরিবেশকর্মী, অধিকারকর্মী ও তাঁদের শিশুসন্তানেরা।
কর্মসূচিতে নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি বলেন, বায়ু ও পরিবেশদূষণের দায় প্রত্যেকের। রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা রয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে পরিবেশ নিয়ে অবহেলা ও দুর্নীতি ছিল। সেই সরকারকে উৎখাত করেছে মানুষ। এখন অন্তর্র্বতী সরকার সংস্কারকাজ করছে। এই সময়ে তাদের উচিত আইন, নীতি ও বিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা। এ বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান কর্মসূচি দেখতে চায় জনগণ।
প্রশ্নের মাধ্যমে কাউকে জবাবদিহির মধ্যে আনার চর্চা নেই বলে মন্তব্য করেন উন্নয়নকর্মী সাবিনা পারভীন। তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ে যত প্রশ্ন করা হয়, তার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি প্রশ্ন করা উচিত বায়ুদূষণ নিয়ে। যাঁরা পরিবেশ নিয়ে কথা বলতেন, তারাও ক্ষমতায় গেলে তা ভুলে যান। বায়ুদূষণ ঠিক না করলে কোনো সংস্কারই মানুষের কাজে আসবে না।
বায়ুদূষণ পরিস্থিতি গুরুতর হলেও তা আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে কবি ও অধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, এখানে রাজনীতি নেই, কাউকে ঘায়েল করার বিষয় নেই। বায়ুদূষণের কারণে নগরবাসীর প্রত্যেকে কাশি, অ্যালার্জিসহ কোনো না কোনোভাবে ভুগছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
বাংলাদেশে ঢুকে গাছের ডাল কাটল বিএসএফ, সীমান্তে উত্তেজনা
জাতীয় কবির নাতির চিকিৎসায় ১৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন
বিগত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি : উপদেষ্টা ফাওজুল
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
আরও

আরও পড়ুন

বিগত ১৫-১৬ বছর আওয়ামীলীগ সাংবাদিকসহ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করেছিল-আলহাজ্ব সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক

বিগত ১৫-১৬ বছর আওয়ামীলীগ সাংবাদিকসহ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করেছিল-আলহাজ্ব সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন

জামায়াতকে কোন ইসলামী দল বলে মনেকরিনা -আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

জামায়াতকে কোন ইসলামী দল বলে মনেকরিনা -আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

রুয়েটের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

রুয়েটের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা

কালীগঞ্জে ছাত্রদল সভাপতি মবিন খানের স্মরণ সভা

একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার

একমাত্র সঞ্জয়ই দোষী, সাজা ঘোষণা সোমবার

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে: ডা. শফিকুর রহমান

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান  জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন

হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন