শীতে কাহিল উত্তরাঞ্চল
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
অগ্রহায়ণের শেষবেলায় শীতের তীব্রতায় কাঁপছে উত্তরের জেলাগুলো। দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর এবং রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে শীতের দাপট দেখা দিয়েছে বেশ আগে থেকেই। ইতিমোধ্য মানুষের জীবনযাত্রার ছন্দপতন শুরু হয়েছে। তীব্র শীতে কাহিল উত্তর-পশ্চিমের জনপদ। গরম কাপড় ব্যবহার বেড়েছে। শীতবস্ত্রের বিক্রিও বেড়েছে। এরইমধ্যে উত্তরাঞ্চলের তাপাত্রার পারদ নেমেছে ১০ এর ঘরে। রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জেলায় সন্ধ্যার পরেই বাড়ছে ঘনকুয়াশা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরো কমবে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের দিকে যাচ্ছে দেশ। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। সন্ধ্যা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত শীত অনুভূত হচ্ছে। হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজনের কষ্টও বেড়ে গেছে। ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ-ব্যাধি। তীব্র শীতে জবুথবু উত্তরাঞ্চলের গোটা জনপথ। হঠাৎ জেঁকে বসা শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রচন্ড ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় দিন-মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছেন। কুয়াশার চাদর ভেদ করে দেরিতে সূর্য উদিত হলেও কমছে না শীতের প্রকোপ। শীতবস্ত্রের অভাবে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। জেঁকে বসা কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। হঠাৎ শীতে শ্রমজীবী মানুষের বেড়েছে চরম দুর্দশা। ঠান্ডার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না তারা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে শীতের কনকনে ঠাণ্ডায় লোকজন চরম বিপাকে পড়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, পৌষ মাস আসার আগেই মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে প্রায় সারাদেশ। সেই সাথে কনকনে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে মানুষ। উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের অনেক জায়গায় ভোর ও সকাল পেরিয়ে এমনকি দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র ঠাণ্ডা ও কুয়াশায় দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর, কর্মজীবী, কৃষি-শ্রমিক, হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ ও শীতকষ্ট অসহনীয়। সেই সাথে বেড়েই চলেছে শীতজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমে আসে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা চলতি মৌসুমের এ যাবত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৭ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৯.৮ ডিগ্রি সে.। রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ২৫.৪ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সে.। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩০.২ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে পূর্বাভাসে জানা গেছে, শিগগিরই আসছে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহের কামড়। চলতি ডিসেম্বর মাসজুড়ে চলতে পারে কনকনে শীতের দাপট। উত্তর, উত্তর, পশ্চিম দিক থেকে হিমালয় পেরিয়ে আসা শীতল বায়ুর সাথে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ থেকে উঠে আসা জলীয়বাষ্প বাংলাদেশে এসে মিলিত হয়েছে। এতে করে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠাণ্ডার তীব্রতা।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের শ্রীলংকা উপকূলে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এটি কেটে যাচ্ছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলায় শীতের তীব্রতা ক্রমাগত বাড়ছে। গত দুদিন ধরে তাপমাত্র ২ থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে গেছে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে শীত ও কুয়াশা কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। আসছে সপ্তাহ থেকে শীতের প্রকোপ আরো বেশি হবে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে। নিম্নআয়ের মানুষরা পড়েছে মহাবিপাকে। কাজে যেতে না পারায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার হাসপাতাল গুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গতকাল সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১. ৮ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর ২টি শৈত্য প্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে চলতি বছরের অগ্রহায়ণের শেষে মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারণে হাড়কাপানো শীত বিরাজ করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই তাপমাত্রা কমে কনকনে ঠাণ্ডা জেঁকে বসছে। গতকাল সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন। স্থানীয়রা জানান, দিন দিন এ জেলায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে কনকনে ঠান্ডা বিরাজ করছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে পুরো জেলা। যদিও কুয়াশা ভেদ করে সকালে সূর্য উঁকি দিয়েছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ঘনকুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়ছে ফরিদপুর। হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্টের শেষ নেই। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যার পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই জেঁকে পড়ছে হার কাঁপানো শীত। বইছে শৈত্য প্রবাহ। পাশাপাশি কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল ফরিদপুরের সকল জনপথ। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফরিদপুর শহর-উপশহর ও চরাঞ্চালের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জনজীবন। বিশেষ প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। সবার মাথাসহ মুখেছিল শীতবস্ত্রে মোড়ানো।
ফরিদপুর আবহাওয়া অফিস ইনকিলাবকে জানান, কয়েকদিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.০ সেলসিয়াস। গত শুক্রবার ও শনিবার তাপমাত্রা ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ওঠানামা করছে। গতকাল শুক্রবার রাত থেকে এতো কুয়াশা ১০ হাত দূরের গাড়ি ঠিকমতো দেখা যায় না। এতে গন্তব্য পৌঁছতে বেশি সময় লাগছে আগের তুলনায় বেশি।
সালথা (ফরিদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের সালথায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। শীতের দাপটে যেন কাবু হয়ে পড়ছে মানুষ। উত্তরের হিমেল বাতাসে আরো বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তীব্র ঠান্ডায় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে উপজেলাটির বিভিন্ন এলাকা। স্থানীয়রা জানান, ভোরের পর থেকে কুয়াশার চাদরে আড়াল হতে থাকে প্রকৃতি। বাংলা পৌষ মাসের শুরুতে ঠান্ডা প্রকৃতি আর এমন কুয়াশা এসব এলাকার জন-জীবনে কর্মের ব্যাঘাত ঘটছে। তবে থেমে নেই কর্মজীবী মানুষের চলাচল। কুয়াশার সকালে কৃষকরা নেমে পড়েছেন মাঠে। কৃষকরা জানান, শীতের দিন মাঠে কাজ করতে ও দোকান চালানো খুব কষ্ট হয়ে যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাঁদাবাজ, দখলবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে - ডা: শফিকুর রহমান
শুল্ক ও কর বৃদ্ধি যেভাবে প্রভাব ফেলবে সিগারেটের বাজারে
বায়ুদূষণের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু: গবেষণা
যেকোনো জাতির জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
তরুণদের জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম বিপিএল: আর্থার
ইরানের প্রেসিডেন্টের সালামের উত্তর দিলেন পুতিন
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল
সিএমজেএফ টকে ডিএসই চেয়ারম্যান জুনের মধ্যে গতি ফিরে পাবে শেয়ারবাজার
আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালুর দাবি গ্রাহক গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার ঐক্য ফেডারেশনের
চিকিৎসা নীতিশাস্ত্র গবেষণায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ইরান
জয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু বাংলাদেশের
এনবিআরের সেই মতিউর রিমান্ড শেষে কারাগারে
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
হাকিমপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড বিএনপির যৌথ কর্মী সম্মেলন
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে : আমির খসরু
ইনকিলাবের কবির হোসেন কাপ্তাই প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনীত
সুনামগঞ্জে সীমান্তজুড়ে কঠোর অবস্থানে বিজিবি
শামি-বুমরাহকে নিয়েই ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল
ঝিনাইদহে নিখোঁজের ৭দিন পর সেপটি ট্যাংকে মিললো যুবকের লাশ