ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১
নির্বাচনের সময়সীমার ঘোষণায় ব্যাংকার, ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদদের মতে এই সময়ে ‘অর্থনীতির দুর্বলতা কাটানো, খেলাপি ঋণ আদায়ে গুরুত্বারোপ, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, একটি শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ

আসবে স্বস্তি কাটবে অনিশ্চয়তা

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম


বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ২০২৫ সালের শেষে কিংবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এই ঘোষণা স্বস্তি আনবে। তিনি বলেন, এটি রোডম্যাপ নয়, এটি একটি টাইমলাইন। এটি মানুষের মধ্যে স্বস্তি আনবে। এটি অনিশ্চয়তা কমাবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আরো এক বছরের জন্য আছে, তাই তারা তাদের সংস্কার চালিয়ে যাবে। এর সবই মানুষের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে এবং আমি এটিও মনে করি, বাজারে এর প্রভাব পড়বে।
‘অর্থনীতির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে’

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের মধ্যভাগের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়েছেন, তা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা ও ইতিবাচক দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি বলেন, এটি বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজারে যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ক্রেতারা প্রায়ই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে জানতে চায়। এই ঘোষণা আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে, যা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ব্যবসাগুলো মানবাধিকার এবং শাসনব্যবস্থার বিষয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল। তবে, এই নতুন সংস্কার স্থিতিশীলতার দিকে একটি পরিবর্তনের সঙ্কেত দেয়, যা বৈশ্বিক ক্রেতাদের বাংলাদেশে তাদের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে উৎসাহিত করবে।

 

‘খেলাপি ঋণ আদায় হতে পারে’
এদিকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করায় ব্যাংক খাতে কোনো প্রভাব ফেলবে কি-না জানতে চাইলে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় ও রিসিডিউল লোনের ফিগারে একটি অগ্রগতি আমরা দেখতে পারি। কারণ, নির্বাচনে অংশ নিতে গেলে একজন প্রার্থীর ঋণ পরিস্থিতি কেমন থাকা লাগবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো নিয়ম পরিবর্তন করা হবে কি-না, আমরা এখনো জানি না। যদি আগের নিয়মেই থাকে বা নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসে, সে ক্ষেত্রে অনেককেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ঋণ সমন্বয় করা লাগতে পারে। ফলে কিছু খেলাপি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচন উপলক্ষে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে মন্তব্য করে এই ব্যাংকার বলেন, সাধারণত নির্বাচনে নগদ টাকার লেনদেন বেশি হয়। নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার-প্রচারণা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাংক লেনদেনের তুলনায় নগদ টাকা বেশি ব্যবহৃত হয়। সব মিলিয়ে নির্বাচনের সময়ে নগদ টাকার চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছি।

‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিনিয়োগকারীরা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে তারা রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। ঘোষিত সংস্কার এবং নির্বাচনের টাইমলাইন বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা করতে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে সহায়তা করবে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, বিশেষত পশ্চিমাদের অধিকাংশের জন্য স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন। একটি অনির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বাধীন দেশ তাদের মোটেও আকৃষ্ট করছে না। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে।

‘একটি শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, এ ছাড়াও বর্তমান সরকার যে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা অবশ্যই শেষ করতে হবে, কারণ এটি হাজার হাজার নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের রক্ত এবং ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল।

তিনি পরামর্শ দেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত, যা অর্থনৈতিক কর্মকা- টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করি শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরে আসবে। এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে ব্যবসায়িক আস্থা বৃদ্ধি করবে যা ইঙ্গিত দেয় যে, দেশ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে’
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি মনে করেন, অর্থনীতিকে আগে শক্তিশালী করা এখন সময়ের প্রয়োজন। অর্থনীতি এই মুহূর্তে বিভিন্ন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় নির্বাচনের অন্তত এক বছর বাকি আছে। যখনই নির্বাচন হবে, অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলো আগে কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি বর্তমানে স্থবিরÑ এগুলোর সমাধান করা দরকার। নির্বাচন সবসময় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। কিন্তু নির্বাচনের আগে অর্থনীতি শক্তিশালী না হলে, নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন যখনই হোক না কেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে, কারণ এর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনই একমাত্র সমাধান নয়; সমাধান হচ্ছে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। তার মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার করছে। সংস্কারের কোনো ইতিবাচক ফলাফল না হলে জনগণ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাক্ষাৎ
আরও

আরও পড়ুন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা