নতুন উদ্দীপনায় বিজয় উদযাপন
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ এএম
৫৪তম বিজয় দিবসে বীরের জাতি হিসেবে ‘চেতনার শৃঙ্খল মুক্ত’ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়েই নতুন উদ্দীপনায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। বঙ্গভবনসহ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি থেকে শুরু করে সবগুলো আয়োজনে বরেণ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিবসটি পালিত হয়েছে। এবার বিজয় দিবসে চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী, স্বঘোষিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা, ভারতীয় তাঁবেদারদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবনসহ কোথাও দেখা যায়নি। বিজয় দিবস ছিল আমজনতার। বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের ১৮ কোটি মানুষ ভিন্ন ধারার উন্মাদনা উদযাপন করেছে।
‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়? দাসত্ব-শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’ (রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়)। ’৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও নানা সময় গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসনামলে জনগণ নানাভাবে ছিল নিগৃহীত।
শেখ হাসিনা রেজিমের ১৫ বছর দিল্লির পদানত শাসনব্যবস্থায় জনগণ ছিল উপেক্ষিত। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে জনগণের অংশগ্রহণ তেমন ছিল না। সেই দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে গেছে। ৫ আগস্টের পর জাতি কার্যত মুক্ত বিহঙ্গ পাখির মতো হয়ে গেছে। সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিবসটি পালিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা মহানগরী হয়ে উঠেছিল মিছিল, বর্ণাঢ্য র্যালি, আনন্দানুষ্ঠান ও উৎসবের নগরীতে। মহান বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সকাল ৭টা ১২ মিনিটে। পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তারা ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর উভয় নেতা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর আগে সাড়ে ৬টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনের কর্মসূচি সূচনা করেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রর্দশন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। বিজয় দিবসে গতকাল সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নেমেছিল। প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনের সবুজ লনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা যোগ দেন।
এবারের বিজয় দিবস উদযাপন হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। ’৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর ’৭২ সাল থেকে জাতীয় দিবস তথা ‘বিজয় দিবস’, ‘স্বাধীনতা দিবস’ ‘ভাষা দিবস’ পালিত হয়েছে আমলাতান্ত্রিক ধারায়। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে যে জাতীয় দিবসগুলোর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন, মন্ত্রী-এমপি, চিহ্নিত কিছু বুদ্ধিজীবী, সুশিল, হুইল চেয়ারে যুদ্ধাহত কিছু মুক্তিযোদ্ধা, কিছু মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও আমলার অংশগ্রহণের যে ধারা সুচিত হয়েছিল, সেটিই চালু ছিল দীর্ঘ ৫৩ বছর। জাতীয় দিবসগুলোতে সবসময় জনগণ ছিল উপেক্ষিত। হাসিনার শাসনামলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভারতের কিছু দালাল, কলকাতা- দিল্লির হিন্দুত্ববাদী কিছু নেতা ও গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতি জগতের চেতনার ফেরিওয়ালা কিছু ব্যক্তি। জাতীয় দিবস মানেই ছিল মুজিব-বন্দনা। সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ তেমন ছিল না। এমনকি এইচ এম এরশাদের ৯ বছরের শাসনামল ও বিএনপির কয়েক দফার শাসনামলে জাতীয় দিবস উদযাপনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে ‘মুজিবীয় ধারা’য় চলেছে। ৫৩ বছর পর এবার নতুন আঙ্গিকে ৫৪তম বিজয় দিবস পালিত হলো। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এবারের বিজয় দিবসে ৫৩ বছরের রেওয়াজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাই মূলত এই সাফল্যের দাবিদার। তারা জাতিকে নতুন ধারায় জাতীয় দিবস পালনে উদ্বুদ্ধ করেছেনÑ এবার বিজয় দিবসে আমলা, বুদ্ধিজীবী, উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে সাধারণ মানুষকে দেখা গেছে। হাসিনা পালানোর পর ভীতি-আতঙ্ক কাটিয়ে আমজনতা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে বিজয় দিবস পালন করেছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে আসা মানুষের অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা এবার প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছি।
মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মুহিবুল্লাহিল বাকী। এ সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেও বিশেষ দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার, মো. মহিউদ্দিন, ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ, উপ-পরিচালকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সাধারণ মুসল্লীগণ উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেছেন, বিজয়ের ৫৪ বছরেও জনগণ বিজয়ের প্রকৃত স্বাধ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ৫৪ বছরে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো তারা সকলেই নিজের আখের গুছিয়েছে। ভাগ্যাহত জনতার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জনগণকে চোষে তারা হয়েছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। আধিপত্যবাদ ভারতের আগ্রাসী মনোভাব বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ বরদাশত করবে না। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। বাংলাদেশের ইসলামপন্থি জনগণ সংখ্যালঘুদের মন্দির, বাড়ী-ঘর পাহারা দেয়। অপরদিকে ভারত পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা এবং পতাকা পুড়িয়ে অসভ্যতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ভারত আমাদের সাথে দাদাগিরি করতে চায়। ভারতের দাদাগিরির সময় ফুরিয়ে আসছে। খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রযেছে। ভারত থেকে হাসিনাকে ফেরত আনতে হবে। গণহত্যার দায়ে হাসিনাকে ফাঁসি দিতে হবে।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে পতাকা র্যালিপূর্ব জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে র্যালিপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম।
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে তার করদ রাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিলো। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশকে শোষণ করেছে। ২০২৪’র ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর ভারতের কষ্ট বেড়ে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ‘বিজয় দিবসের’ টুইটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে ‘ভারতের বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার পুরো বক্তব্যে বাংলাদেশের নামটা পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। এর আগে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করা হয়েছে। পতিত শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বের উপর কোন আঘাত সহ্য করা হবে না। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সবায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পল্টনস্থ মজলিস মিলনায়তনে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হকের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসাইন এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে যারা আছেন
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা