অস্তিত্ব সঙ্কটে ঝিনাইদহের ১২ নদী
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
ঝিনাইদহের ১২টি নদী এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। অবৈধ দখল, দূষণ ও ফারাক্কার ভয়াল প্রভাবে নদীগুলোর মানচিত্র অনকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কোন কোন নদী বেদখল হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদী দখল করে প্রভাবশালীরা তৈরী করেছে সুরম্য ভবন। মহেশপুর কপোতাক্ষ নদে বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। একই উপজেলা কোদালা নদীর অস্তিত্ব নেই। কোন কোন নদীর বুকে পুকুর খনন ও ধানের আবাদ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় এক সময়ের খর¯্রােত যৌবন হারানো নদীগুলো ধুকছে অতীত ঐতিহ্য নিয়ে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১২টি নদী আছে। এ সব নদীর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডু এলাকায় বেগবতি ও নবগঙ্গা, শৈলকুপায় কুমার, গড়াই, কালীগঙ্গা, মহেশপুরে বেতনা, ইছামতি ও কোদালা, কোটচাঁদপুরে কপোতাক্ষ নদ এবং ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জে ফটকি, চিত্রা ও বেগবতি। এসব নদ-নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০৩ কিলোমিটার। ঝিনাইদহ সদর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীর অবস্থা বড়ই করুণ। নদীর বুকে মানুষ চাষাবাদ শুরু করেছে বহুকাল আগেই। নদীপাড়ের মানুষ ইচ্ছামতো মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোটচাঁদপুরের তালসার, ইকড়া গ্রাম, সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা ও ফয়লা এলাকায় চিত্রা নদী দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর তৈরী করা হয়েছে। কাগজে-কলমে চিত্রা নদীর প্রস্থ দেখানো হয়েছে ৮০ মিটার এবং গভীরতা ৫ মিটার। তবে দুষন, দখল আর ভরাটে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। চিত্রা নদী দখল মুক্ত করতে ২০২৩ সালে তালিকা তৈরী করা হলেও প্রভাবশালিীদের বাঁধার কারণে হয়নি। তবে বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর চিত্রা নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে দখলদার চিহ্নিত করে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হচ্ছে। নতুন বছর থেকে চিত্রা নদী দখলমুক্ত হবে বলে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। এদিকে শৈলকুপার একসময়ের খর¯্রােতা গড়াই ও কুমার নদ পানির অভাবে (বর্ষাকাল ব্যাতিত) শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একসময় বিশাল নদ-নদী ছিল। নদীর কোথায় হাটুপানি, আবার কোথাও বুকপানি। বেশিরভাগ স্থানে খননের অভাবে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। সেই ভরাট নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। যতদূর চোখ যায় নদ-নদীর বুকে শুধুই ফসলের ক্ষেত আর মাঝ দিয়ে মিনমিনিয়ে বহমান পানিপ্রবাহ। শুস্ক মৌসুমে নদীর বুকে চাষাবাদ করা হয়। শৈলকুপার কুমার নদটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কুমার নদের পানির প্রধান উৎস ছিল মাথাভাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া এলাকায় নদের উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও কুমার নদ কালীগঙ্গা, ডাকুয়া ও সাগরখালী নদীর মাধ্যমে পানি প্রবাহ পেত। কিন্তু জিকে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এ দুটি নদীর উৎসমুখও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী বেশিরভাগ কচুরিপনায় পরিপুর্ন থাকে। নদীপাড়ে গড়ে উঠেছে দোকান ও বাড়ি। ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রধান ড্রেন পড়েছে নবগঙ্গা নদীতে। ফলে আবর্জনা ও বজ্র পড়ছে নদীতে। প্রবাহ না থাকায় এতে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে নদীর পানি। মহেশপুরের কোদালা নদী এখন চেনার উপায় নেই। ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীর বুকে অসংখ্য পুকুর খনন করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদীপাড়ের মানুষ আস্ত একটা নদী গিলে খাচ্ছে, অথচ কারো বাথাব্যাথা নেই। একই ভাবে ফটকী, বেতনা, বেগবতী, ভৈরব ও কালীগঙ্গা নদী মরাখালে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রখভাবশালীদের দখলের কারণে নদীর চিহ্ন বিলীন হতে চলেছে। মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ দখল করে মাছ চাষ করা হয়। বিক্রি হয় নদীর মাটি। চিত্রা পাড়ের বাসিন্দা সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম মনসাদ জানান, দখলমুক্ত করে চিত্রা নদী আগের মতো উন্মৃক্ত করে দেওয়া হোক। নদীর বুকে যারা পকুর খনন করে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করুক। ঝিনাইদহ নবগঙ্গা নদী পাড়ের আরেক বাসিন্দা সোহাগ হোসেন জানান, ছোটবেলায় দেখেছি নবগঙ্গার বুকে বড় বড় নৌকা চলতো। দখল আর দুষনে এখন তো ডিঙ্গিও চলতে পারে না। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল নদী দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সময় আয়োজিত সভায় জেলার নদীগুলোর নব্যতা ও দখলমুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, নদীগুলো খনন না করায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। আমরা সকল নদীর তথ্য উপাত্ত হালনাগাদ করছি। নদীগুলো খননের প্রস্তবনাও মন্ত্রনালয়ে গেছে। বাজেট পাওয়া গেলে খননকাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে চিত্রা নদীকে দখলমুক্ত করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। সারা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলেও তিনি যোগ করেন।
******************
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দেশীয় অস্ত্রসহ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী আটক
'দি ওডিসি' সিনেমায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন নোলান
রোমানিয়ার নির্বাচনে অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ক্ষোভ
বাউফলে হামলা-পাল্টা হামলা, বিএনপির এক পক্ষের মানববন্ধন ও আরেক পক্ষের সংবাদ সম্মেলন
১৫ দিনের মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল কার্ড ইস্যু হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ২১ সাংবাদিক
চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাদের সড়ক অবরোধ, ২ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক
আশুলিয়ায় ভবন মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ
হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ সভা
৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে একটি ইসলামী দল
মেহেরপুরে তসলিমা হত্যা মামলায় ২ জন আটক
ঈশ্বরদীতে ৫ বছরের শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সৎ বাবা গ্রেফতার
নাসার নতুন সাঁতারু রোবট , ইউরোপায় প্রাণের খোঁজে এক বিস্ময়কর যাত্রা
৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে : সারজিস
ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না : রিজভী
উখিয়ায় চুরির দায়ে পিটিয়ে এক যুবককে হত্যা, পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত খুন
৩১ ডিসেম্বর মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ
বিধ্বস্তের আগে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বিমান যাত্রী
সিলেটে ‘পানি লাগবো পানি’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
নতুন বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় তাপপ্রবাহ ও ঝুঁকির সতর্কবার্তা