ফের শুরু জাহাজ রফতানি
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম
ফের শুরু হচ্ছে জাহাজ রফতানি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমজানে রফতানি হচ্ছে ‘রায়ান’ নামের একটি নতুন জাহাজ। ৬৯ মিটার দীর্ঘ ল্যান্ডিং ক্রাফট ধরনের এই জাহাজটি নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তীরে পটিয়ার কোলাগাঁও শিপইয়ার্ডে। প্রায় দুই বছর পর জাহাজ রফতানির বিষয়টি সামনে আনল জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ জাহাজ রফতানি হয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে।
চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রায়ান’ নামের ওই জাহাজটি রফতানি করবে। জাহাজটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং। ওয়েস্টার্ন মেরিন ওই একই ক্রেতার কাছে পর্যায়ক্রমে আরো সাতটি জাহাজ রফতানি করবে। মারওয়ান শিপিংয়ের জন্য তৈরি বিশেষায়িত জাহাজটি সুসজ্জিত অবস্থায় পতেঙ্গা বোট ক্লাবের পাশে রাখা হয়েছে।
২০২০ সালের পর এটিই ওয়েস্টার্ন মেরিনের প্রথম জাহাজ রফতানি। গতকাল শনিবার বোট ক্লাবের ঘাটে প্রমোদতরী ওয়েস্টার্ন ক্রুজে সংবাদ সম্মেলনে জাহাজ রফতানির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। এতে বলা হয়, মারওয়ান শিপিংয়ের সঙ্গে ২০২৩ সালে ৮টি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করেছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন। ওই চুক্তির আওতায় প্রথমে রফতানি হচ্ছে ‘রায়ান’। এরপর ‘খালিদ’ ও ‘ঘায়া’ নামের দুটি টাগবোট রফতানি করবে ২০২৫ সালের এপ্রিলে। বাকি পাঁচটি জাহাজ ২০২৫ সালের মধ্যে রফতানি করা হবে। এর আগে ২০১৭ সালে একই ক্রেতার কাছে আরো একটি জাহাজ রফতানি করেছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন। যার সেবায় খুশি হয়ে তারা আবার জাহাজ নির্মাণে ওয়েস্টার্ন মেরিনের সাথে চুক্তি করে।
ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, জাহাজ নির্মাণ করে রফতানির মাধ্যমে আমরা রেমিট্যান্স পাচ্ছি। পাশাপাশি দেশি গ্যাস, ইস্পাত, রং, ফার্নিচার, কেমিক্যাল, ইলেকট্রিক ক্যাবলসহ অনেক ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে উঠছে। জাহাজ রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের বড় নিয়ামক হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি। বিগত সরকারের সময় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য লো কস্ট ফান্ড করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু কেউ তা নিতে পারেনি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য লো কস্ট ফান্ড সরকার দিতে পারে। ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সহজীকরণটা খুবই জরুরি। জাহাজ রফতানি সহজতর করতে বন্দর, কাস্টম, কর, ভ্যাট ইত্যাদি বিষয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চাই।
তিনি বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ইয়ার্ডে ৯টি জাহাজ রফতানির কাজ চলছে। আমাদের সম্পদ হচ্ছে জনশক্তি। তারা দক্ষ, কাজ করার উৎসাহ আছে। তাদের প্রশিক্ষণ ও সুবিধা দিতে পারলে সাফল্য আসবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী, ওয়েস্টার্ন মেরিনের জিএম (অর্থ) আবুল মনসুর, ডিজিএম শাহেদুল বাশার প্রমুখ। ওয়েস্টার্ন মেরিন এ পর্যন্ত ১১টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রফতানি করেছে। যার মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ জাহাজ রফতানি করেছে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি। এদিন এক কোটি ১০ লাখ ডলার মূল্যের দুটি জাহাজ ভারতে রফতানি করা হয়। এ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছর পর রফতানিতে ফিরল। অবশ্য এ সময় শিপইয়ার্ডটি দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার জন্য জাহাজ তৈরি করেছে। এখনো দেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের নিকট আরো দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ যথাক্রমে ‘এমভি রুপসা’ ও ‘এমভি সুগন্ধা’ হস্তান্তর করা হবে।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, জাহাজ রফতানিতে যে খরা ছিল, তা দীর্ঘদিন পর কাটতে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে জাহাজ নির্মাণের খাতে এখন আবার প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এতে করে নতুন কার্যাদেশ আসার সম্ভাবনা বেড়েছে। এই খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রথম জাহাজ রফতানি করে ঢাকার আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড সিøপওয়েজ। ২০০৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ডেনমার্কে জাহাজ রফতানির মাধ্যমে এই অভিযাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে জাহাজ রফতানিতে যুক্ত হয় ওয়েস্টার্ন মেরিন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে একটি সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানি করে। বাংলাদেশ থেকে জাহাজ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এ দুটিই।
বিগত ২০১১ সাল থেকে বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণশিল্পের মন্দার মূল প্রভাব পড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। তখন অনেকগুলো রফতানি আদেশ বাতিল করেন বিদেশি ক্রেতারা। করোনা মহামারি এবং এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আবার ধাক্কা আসে এই খাতে। এই দুই মিলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। জাহাজ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান দুটির ঋণও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট জাহাজ ও নৌযান রফতানি হয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ১৯। বাকিগুলো ফেরি ও বিভিন্ন ধরনের সমুদ্রগামী নৌযান। এসব জাহাজ ও নৌযান রফতানির মাধ্যমে আয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারের নীতি সহায়তা বাস্তবায়ন হলে জাহাজ রফতানি খাত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
প্রধান উপদেষ্টার রাজবাড়ী সফর স্থগিত
ভিসা সত্যায়নের বেড়াজালে বিপুল সংখ্যক সউদীগামী কর্মী বায়রা নেতৃবৃন্দের সাথে বিএমইটির ডিজি
মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় গায়ক আরমান মালিক
সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে পত্র দিয়ে তথ্য উপদেষ্টার অনন্য দৃষ্টান্ত
ফুলপুরে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, ৫ পরিবহনকে জরিমানা
গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় উৎসবের আমেজ
সাইবার আক্রমণ: আসিফ-সাদিক-হান্নানের ফেসবুক আইডি সচল
গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ উপহার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৩৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
উষ্ণতম বছর, উষ্ণতম দশক! আশঙ্কার বর্ষবরণ বিশ্বজুড়ে
মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি. এর সাথে শিপ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল লি. এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর