প্রথম দিনে বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থীই
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম
বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া রীতিতে পরিণত হলেও করোনাকালীন সময়ের মতো এবারও নতুন বই পাননি অনেক শিক্ষার্থীই। যদিও বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে বই যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছায় এজন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে।
তবে কিছুটা দেরি হলেও এবার শিক্ষার্থীরা ভালো মানের কাগজ ও ছাপা বই হাতে পাবে। আবার কবে নাগাদ সব শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে পারবে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সময়সীমা জানাতে পারেননি শিক্ষা উপদেষ্টা। আবার দুই রকম তথ্য দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান।
গতকাল ১ জানুয়ারি প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই এবং মাধ্যমিকের সপ্তম শ্রেণির তিনটি- বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই পেয়েছে রাজধানীর বিদ্যালয়গুলো। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু-একটি ক্লাসের কিছু বই দেওয়া হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বই পায়নি। বই না পেয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে। প্রথম দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে যেসব বই পৌঁছেছে, সেগুলোই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য বছর বই কম থাকলেও কোনও শিক্ষার্থী একটিও বই পায়নি, এমনটি হয়নি।
এনসিটিবি সূত্রমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। এবার এমন পরিস্থিতির বিষয়টি আগেই জানত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সংস্থাটির পরিকল্পনা ছিল, সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে অন্তত তিনটি করে নতুন বই (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার। তবে শেষ পর্যন্ত সেটিও সম্ভব হয়নি।
নতুন এই শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার পাঠ্যবইয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বেশ কিছু বিষয়েও সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। বই পাঠানো হয়েছে ৪ কোটির মতো। আর মাধ্যমিকে (মাদরাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে সোয়া দুই কোটির মতো।
এনসিটিবি জানিয়েছে, আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এনসিটিবিকে অনেক কাজ নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। যেমন এবার নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়েছে, এতে কিছু সময় লেগেছে। আবার পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করতেও দেরি করেছে এনসিটিবি। আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আনুষঙ্গিক কাজের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়াও এমন পরিস্থিতির কারণ। এখনো কিছুসংখ্যক বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজ করছে এনসিটিবি। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির কাজ দেরি হওয়ায় ছাপার কাজেও দেরি হচ্ছে। কারণ, নিয়মানুযায়ী চুক্তির পর ৪০ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়ার নিয়ম।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ৪৪১টি বই মাত্র আড়াই মাসে আমরা পরিমার্জন করেছি। এর মধ্যে ৬ কোটি বই দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে। আরও ৪ কোটি বই বিভিন্ন স্থানে যেতে ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায় আছে। এনটিসিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রাথমিক ও দশম শ্রেণির সব বই আগামী ৫ জানুয়ারি, মাধ্যমিকের আটটি বই ১০ জানুয়ারি এবং সব বই ২০ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানোর চেষ্টা করব। এ বছর প্রায় ৪১ কোটি নতুন বই বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, আমরা সব বইয়ে নিয়ে ১ জানুয়ারি সব বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় কিছু কিছু শিক্ষার্থী যেন আজকের দিনে (১ জানুয়ারি) বই পায়। তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে চেষ্টা করছি কীভাবে সব বই পৌঁছে দেওয়া হয়।
মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই ছাপায় অগ্রগতি ভালো। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার অগ্রগতি খুবই কম। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করাসহ ছাপাসংক্রান্ত কাজে বিলম্বের কারণে এবার এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনো বেশ কিছু পরিমাণ বই ছাপার জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজটিও শেষ হয়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছানো কঠিন হবে।
বই বিতরণ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বই বিতরণে নানাভাবে বাধা দিয়েছে। যারা এসব করেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে যে কেউ হতে পারে। তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে। এ সময় নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে না পারায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
পাঠ্যবই ছাপার কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে জানিয়ে ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে অপারগতা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। বই ছাপার প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আমি মনে করি, পাঠ্যবই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশি বই ছাপাবো না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেকগুলো বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গফরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাঃ সাবেক ভিসি এম এ হাদীর স্মরণে আলোচনা সভা
নীলফামারীতে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তাজমুল, সেক্রেটারি রেজাউল
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা
বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
নীলফামারীতে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
টাঙ্গাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে চার শতাধিক শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
যশোর পৌষের দাপটে কাঁপছে
যশোরে সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন
নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে খাঁজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বাৎসরিক ওরশ শুরু
আইসিইউতে ভর্তি অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান
চীনে সবজি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিহত ৮
শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করে যা বললেন তসলিমা নাসরিন
যশোর বাঘারপাড়ায় দুই হিন্দুবাড়িতে ডাকাতি
লিভারপুলে এটাই সালাহর শেষ মৌসুম
দাবি না মানলে বেরোবিতে তালা ঝুলানোর হুমকি শিক্ষার্থীদের
কালীগঞ্জে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ
কাশ্মীরে ট্রাক দূর্ঘটনায় ভারতের ৪ সেনার মৃত্যু
আ.লীগের বিতর্কিত তিন সংসদ নির্বাচন তদন্ত করবে ইসি
হাসিনা-কাদেরসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের জুতা নিক্ষেপ
দনিয়া কলেজ ছাত্রদলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ