উদ্যোক্তা গড়তে প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যমেলা আয়োজন করতে হবে
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম
উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হবার শক্তি মেলার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে ভবিষ্যতের মেলা হবে সারা দেশ জুড়ে জায়গায় জায়গায় এবং ঢাকায় হবে কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত মেলা। তরুণদের জন্য আমরা সুযোগ তৈরি করে দেবো। মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরে চলবে জেলা ও উপজেলায়। সেখান থেকে বাছাই করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে মেলায় কারা অংশগ্রহণ করবে। ঢাকার মেলায় একজন আর একজনকে দেখে শিখবে, বুঝবে এবং বুদ্ধি নেবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের তরুণরা সম্ভাবনাময় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী কৃষি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, আইসিটিসহ বিভিন্নখাতে ব্যবসায় ভাল করছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা করছে- ঘরে বসে সফটওয়্যার তৈরি করে বিক্রি করছে। কাজেই প্রত্যেক উপজেলায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩ থেকে ৪ জনকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা করা হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য। সারা দেশ থেকে তরুণরা দলে দলে এদেরকে দেখতে আসবে। বিদেশ থেকে আসবে। ঢাকায় মেলায় একজন আরেকজনকে দেখে উৎসাহ পাবে। এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীরা কেবল বাংলাদেশের সেরা না, তাদের মধ্যে অনেকে দুনিয়ারও সেরা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে আসা তরুণদের খরচ সরকার বহন করবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে, কারণ তারা তো আমাদের পথ প্রদর্শক। তারা জাতিকে পথ প্রদর্শন করবে। দুনিয়াকে পথ প্রদর্শন করবে। অন্যরা তাদের দেখে শিখবে, বিনিয়োগ করতে আসবে। এখানে বিনিয়োগকারিরা আসবে জানার জন্য, বোঝার জন্য- কোন ব্যবসাটা তার জন্য ভালো হবে।
উদ্যোক্তা হবার ক্ষেত্রে টাকার অভাব কোন বাধা নয় উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, টাকা নেই, এটা কোন বিষয় না- বুদ্ধি থাকলে টাকা উপার্জন করা যায়। কাজেই আমরা চাই আমাদের তরুণ তরুণী, বয়স্ক বয়স্কা সবাই যেন উদ্যোক্তা হবার শক্তি এই মেলার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারে। তাহলে এই মেলা সবার জীবনে বড় ধরনের প্রভাব রেখে যাবে আমাদের জন্য।
বাংলাদেশ একটা অপূর্ব সুযোগের দেশ উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরও বলেন, আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি- ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশ। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ হলো তাজা তরুণ-তরুণী। এরকম শক্তি খুব বেশি দেশের কপালে নেই। এ কারণে বারে বারে বলছি, এই তারুণ্য শক্তিকে উন্মোচিত করার কথা। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা। আরেকটা বিষয় বারে বারে দৃষ্টি আকর্ষণ করি-মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা, শ্রমিক নয়। অন্যের হুকুমে কোন কিছু সৃষ্টি করা মানুষের পথ না। মানুষের পথ হলো নিজে সৃষ্টি করা। নিজের চিন্তায় নিজের ভাবনায় যেটা আসে সেটা তৈরি করা। এই মেলা আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দেয়।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় তরুণদের জন্য আলাদা জায়গা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার একাংশ তরুণদের জন্য থাকবে, এখানে ২৫ বছরের নিচে হতে হবে এ রকম একটা শর্ত দিয়ে দেয়া যেতে পারে। ২৫ বছরের নিচে যারা তারা এখানে কেউ আসবে অন্যের কাছ থেকে শিখতে, আবার কেউ আসবে অন্যকে শেখাতে।
তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরা ভাল ভাল ব্যবসা পরিচালনা করছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অনেক তরুণী রয়েছে যারা অসংখ্য কাজ করে। ঘরে বসে শাড়ি বিক্রি করে। গৃহিনী চার-পাঁচ বাচ্চার মা ব্যবসা করে- ঘরে বসে রান্না করে খাবার সরবরাহ করে। অর্ডার দিলে ঠিক সেই আইটেমগুলো রান্না করে সরবরাহ করছে। চমৎকার বুদ্ধি খাটিয়ে এ ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য যারা করছে-তাদের কাজ তুলে ধরতে হবে।
প্রফেসর ইউনূস সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও রপ্তানি সমৃদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, রপ্তানি পণ্যের মান উন্নয়নে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে আরও জোরদার, প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দ্রুততার সঙ্গে সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টা ফার্নিচার পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি বর্ষ উদ্যোক্তা ঘোষণা করার বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায়ের কথা উল্লেখ করেন।
এর আগে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিকে প্রথম দিনে মেলা উদ্বোধন করার পর দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও দেখা মেলেনি ক্রেতা দর্শনার্থীদের। তবে গতবারের তুলনায় এবার বেশি জমজমাট হবে আশাবাদ জানিয়েছেন মেলার আয়োজক ও স্টল বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা। যদিও স্থানীয় লোকজনের অনেকেই মেলায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ে অংশ নিতে না পারায় জানিয়েছেন শঙ্কার কথা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে এবারের মেলার প্রবেশ গেইট জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের আদলে সাজানো হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচীব আনোয়ার হোসেন জানান, এবারের মেলায় তরুণদের জন্যে বিনোদনসহ জুলাই আন্দোলনের চেতনাসহ মিলনমেলার সব আয়োজন রাখা হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচীব আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বাণিজ্য মেলা দেশি-বিদেশি ক্রেতা বিক্রেতা পণ্য প্রদর্শনী আর সম্পর্কের মেলবন্ধন। এবার তারুণ্যের চেতনা, তাদের অবদান, সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লব বিষয়ক স্মৃতিকে ধারণ করা হয়েছে। সপ্তাহে দুদিন উন্মুক্ত বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে গত সব আয়োজনের চেয়ে সেরা আয়োজন হবে এটি।
এদিকে মেলার উদ্বোধন হলেও প্রায় সবকটি স্টলে তোড়েজোড়ে চলছে প্যাভিলিয়ন সাজসজ্জার কাজ। মেলায় এবার ছোট-বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ৩৬২টি। ইতোমধ্যে প্যাভিলিয়ন ও স্টল, খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁর কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজের অগ্রগতি ৭০ ভাগ। স্টল পাওয়া ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হলেও মেলা ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এবারের অংশগ্রহণ কম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। যদিও মেলবন্ধনের মেলা বলেছেন আয়োজকরা।
স্টল বরাদ্দ পাওয়া দিল্লি এ্যালুমিনিয়ামের হিসাবরক্ষক সোহেল রানা বলেন, গতবারের তুলনায় এবার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই এবারে ক্রেতা দর্শনার্থী আগের তুলনায় বাড়বে। পাশাপাশি বিক্রি হবে দিগুন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচীব ড. নাজনীন চৌধুরী বলেন, এবার প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ১০০টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ১৫টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোর্ট, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল প্রায় ১৭০টি এবং ইউটিলিটি বুথ রাখা হয়েছে ৩০টি। পাশাপাশি হলের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়াতে এক সঙ্গে ৫০০ মানুষ বসে খাবার খেতে পারবে। এছাড়া মূল প্যাভিলিয়নের বাইরে খোলা স্থানে আরো ১২-১৫টি ফুড স্টল থাকছে। এবারও বাণিজ্য মেলায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিদেশি ১৫টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। ফলে মেলা এবার জমবে। তরুণদের অংশগ্রহণ বেশি হবে।
স্থানীয় নলপাথর এলাকার বাসিন্দা ইমরান ভুঁইয়া বলেন, এবারের মেলায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্টল কিংবা মেলা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যবসায় অজানা কারণে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। এতে স্থানীয় দর্শনার্থীদের এক প্রকার ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। ফলে অনেকেই মেলা বিমুখ থাকতে পারেন। তবে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা, পূর্বাচলের পরিবেশ ও কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ পাওয়া লোকজন সব বাধা পেরিয়ে মেলায় আগমন করবেন। জমবেও বেশ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) আব্দুর রহিম খান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস- চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফেনী নদীর পানি নিয়ে ভারতের একতরফা আগ্রাসন: বাংলাদেশের কৃষকদের অস্তিত্ব সংকটে
ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে
রাজধানীর গুলশানে নির্মাণাধীন ভবনে আগুন
শপথ নেয়ার আগেই ঘুষ কাণ্ডে সাজা ঘোষণা, জেলে যাবেন ট্রাম্প?
গফরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাঃ সাবেক ভিসি এম এ হাদীর স্মরণে আলোচনা সভা
মোদির দেয়া মূল্যবান হিরা ব্যবহার করবেন না জিল বাইডেন, কেন?
সাদপন্থিদের ইজতেমা করার নৈতিক অধিকার নেই : মামুনুল হক
বাংলাদেশে নিয়ে আলোচনা! ভারত সফরে আমেরিকার জাতীয় উপদেষ্টা
নীলফামারীতে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তাজমুল, সেক্রেটারি রেজাউল
রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা
বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
নীলফামারীতে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
টাঙ্গাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে চার শতাধিক শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
যশোর পৌষের দাপটে কাঁপছে
যশোরে সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন
নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে খাঁজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বাৎসরিক ওরশ শুরু
আইসিইউতে ভর্তি অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান
চীনে সবজি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিহত ৮
শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনা করে যা বললেন তসলিমা নাসরিন
যশোর বাঘারপাড়ায় দুই হিন্দুবাড়িতে ডাকাতি