ভালোভাবে নেবে না মানুষ : অভিমত বিশ্লেষকদের
০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
অর্ধশত বিচারককে এ মুহূর্তে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত মানুষ ভালোভাবে নেবে না। ভারতের সঙ্গে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিষ্পত্তি না করে বিচারকদের ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানোর বিষয়ে আরো চিন্তা-ভাবনার বিষয় ছিলো। বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য ভারত পাঠানো প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞ ও সাবেক বিচারকগণ। তবে হাসিনা সরকার আমলে করা সমঝোতা চুক্তির আওতায় এই ট্রেনিং একটি ধারাবাহিকতা এবং স্বাভাবিক বিষয় বলে মন্তব্য করেন কোনো কোনো বিচারক।
ভারতের ভুপালে ‘ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি’ এবং ‘স্টেট জুডিসিয়াল একাডেমি’তে প্রশিক্ষণ গ্রহণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে অন্ততঃ ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অনুমতি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তারা আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নেবেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষতঃ ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা, বিতাড়িত শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়া, সেখানে বসে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, রাষ্ট্রদ্রোহী ইসকন নেতার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রমাগত প্রপাগান্ডা, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা- ইত্যাদি কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্ট এ মুহূর্তে তুঙ্গে।
এমন বাস্তবতায় সরকার পঞ্চাশ বিচারককে প্রশিক্ষণের জন্য ভারত পাঠাচ্ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে কী বার্তা দেবে-জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রশিক্ষণ চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিলো ২০১৭ সালে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন। চুক্তির আওতায় এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারক ভারতে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবা প্রয়োজন ছিলো যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের এখনকার সম্পর্ক উষ্ণ নয়। ভারত পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শুধু তাই নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে তাকে নানা রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ারও সুযোগ করে দিয়েছে। এসব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। সেখানে আমি মনে করি, বিচারক প্রশিক্ষণে পাঠানোর বিষয়টি স্থগিত রাখা সঙ্গত ছিলো। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধান না করে প্রশিক্ষণের জন্য বিচারক পাঠিয়ে দিলাম। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো চিন্তার বিষয় ছিলো। এটি সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নেবে না। এ মুহূর্তে না পাঠালেও ভালো হতো।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, চুক্তিটি শেখ হাসিনার আমলে করা। চুক্তির ধারাবাহিকতায় হয়তো বিচারকদের পাঠানো হচ্ছে। যতক্ষণ চুক্তিটি বাতিল না হবে ততোক্ষণ হয়তো সেটি অনুসরণ করতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো: মঈদুল ইসলাম অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়াতে খারাপ কিছু দেখছি না। ভারতে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিচারক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। ভারতের সর্বক্ষেত্রেতো আমরা বিরোধিতা করছি না। যেগুলোতে বিরোধ নেই সেগুলো খুঁচিয়ে বিরোধ সৃষ্টির মানে হয় না। তবে হ্যাঁ, ইতিপূর্বে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তারা যদি বলেন যে, ওখানকার প্রশিক্ষণে কোনো সুফল আসছে না তাহলে হয়তো এ প্রশিক্ষণে না পাঠানোর যুক্তি থাকতে পারে।
এর আগে বিচারকদের ভারতে প্রশিক্ষণ পাঠানো বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রশিক্ষণের জন্য সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা ও জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি ভুপাল এবং একটি স্টেট জুডিসিয়াল একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অনুমতি দেয়া হলো। প্রশিক্ষণের যাবতীয় ব্যয় ভারত সরকার বহন করবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই।
প্রসঙ্গতঃ ২০১৭ সালের এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। একই বছরের ২৯ জুলাই এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশে উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। ভারতের প্রত্যেকটা রাজ্যে একটি জুডিসিয়ারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে উচ্চ আদালতের বিচারকদের ট্রেনিংয়ের জন্য। ভুপালে তাদের জাতীয় জুডিসিয়ারি একাডেমি আছে। সেখানে আমাদের ১৫-১৬শ’ বিচারকের ট্রেনিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। পরে প্রথমবারের মতো ওই বছর ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। এ চুক্তির আওতায় পর্যায়ক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারক বিচারককে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে : আমিনুল হক
১০ ঘণ্টা অবরোধের পর বকশীবাজার ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
ভাঙারি দোকানে আদালতের নথির বস্তা
অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সংঘর্ষ, ৫০ ছাগল পুড়ে অঙ্গার
‘ভ্যাট বাড়ানোর’ পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে রেস্তোরাঁ বন্ধের হুমকি
সুদহার বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে
সুরমা নদীর তীরে জমে উঠেছে শীতকালীন সবজির হাট : প্রতিদিন প্রায় ১২ লক্ষ টাকার বেচাকেনা
মন্দিরে প্রবেশে ফ্রি টোকেন পেতে হুড়োহুড়ি, পদদলিতে নিহত ৬
লক্ষ্মীপুরে বহুতল ভবনের ফাইলিংয়ে বিধ্বস্ত সড়ক-দোকানপাট, ঝুঁকিতে ভবন
রাফির ব্যাংক লেনদেন নিয়ে যা বললেন সারজিস
পটুয়াখালী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের সাবেক সভাপতির ইন্তেকাল
আশুলিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দিলেন নুরে আলম সিদ্দিক
বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আগুন দেওয়া হয়েছে
জকিগঞ্জে ক্রসফায়ারের চার বছর পর ওসির বিরুদ্ধে মামলা
আজকের মধ্যে ন্যায় বিচারের ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন বিডিআর পরিবারের সদস্যরা
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস;স্বাভাবিক জনজীবন আড়ষ্ট
কুষ্টিয়ায় ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা ১২ লাখ টাকা
পদ্মা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলনের দায়ে ৯ জনকে কারাদণ্ড
মা-ছেলের মিলনে আবেগাপ্লুত ভক্ত-সমর্থক; অরুণা বিশ্বাসের তেলবাজি, কটাক্ষের শিকার
শেরপুরে শপিংমলে ভেসে উঠল ‘ছাত্রলীগ' ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান: আটক-২