সরাসরি হজ কার্যক্রমে অংশ নিতে এজেন্সির সর্বনি¤œ হজযাত্রী কোটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এটি সউদী সরকারের এখতিয়ার বলে জানান তিনি। সম্প্রতি সরাসরি হজযাত্রী পাঠাতে হজ এজেন্সির সর্বনি¤œ ১ হাজার কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে সউদী আরব। আগামী হজে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারতের জন্য এজেন্সি প্রতি ২ হাজার হজযাত্রী কোটা নির্ধারণ করেছে সউদী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হজ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এবার কোনো এজেন্সির সর্বনি¤œ এক হাজার হজযাত্রী থাকলে তাদের সরাসরি হজে পাঠাতে পারবে ওই এজেন্সি। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে হজ এজেন্সিগুলো। তারা এবার হজ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকারও হুমকি দিয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বের সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী চিঠির মাধ্যমে এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম ১ হাজার হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, হজযাত্রী ও দেশবাসীর কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, সেটা হলো হজ এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী কোটা নির্ধারণ করে থাকে সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

তিনি বলেন, দেশের হজ ব্যবস্থাপনার বাস্তবতা ও হজ এজেন্সির কথা বিবেচনায় হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনি¤œ হজযাত্রীর কোটা কমানোর বিষয়ে আমি ও আমার মন্ত্রণালয় আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। হজ দ্বি-রাষ্ট্রিক কার্যক্রম, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও আমাদের মনে রাখতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীরা যেন কোনো সঙ্কট কিংবা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি না পড়েন সেটি অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। ‘আমি হজ এজেন্সি মালিক বা পরিচালকদেরও দু-একদিনের মধ্যেই সউদী সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লিড এজেন্সি গঠনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, গত ৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার অফিসে সাক্ষাৎ করে আমি ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রমসহ হজ এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর কোটা কমানোর বিষয়টি অবহিত করি। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। ন্যূনতম এক হাজার হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণের বিরুদ্ধে এজেন্সিগুলোর হজ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার হুমকি বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে। সউদী হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী একটি চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এ পত্রে তিনি আমাকে জানিয়েছেন ২০২৫ সালের হজে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য সেবাদানকারী কোম্পানি নির্বাচন, তাঁবুর এলাকা সংরক্ষণ, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি-হোটেল ভাড়া, ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এখনো শুরু করা হয়নি। এসব কার্যক্রম সম্পাদনের সর্বশেষ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া ও সব ধরনের চুক্তি সম্পাদন এবং হজযাত্রীদের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করার অনুরোধ করেছেন। ধর্ম উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল হজ চুক্তি সম্পাদনের জন্য আজ শুক্রবার সউদী আরবের উদ্দেশে রওয়ানা করবে বলেও জানিয়েছেন খালিদ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ ছিল। এর বিপরীতে নিবন্ধিত হয়েছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ২০০ জন হজ পালন করবেন। এছাড়া এবার ৯৫৩টি হজ এজেন্সিকে হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৭৫৩টি এজেন্সি থেকে হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এসব এজেন্সি থেকে একজন থেকে ছয় শ’ জন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

একজন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন এমন এজেন্সিকে কেন হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার হয়েছে- এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো। এ বিষয়ে একটা নীতিমালা করা যায় কি না সেটি দেখবো। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যারা ইংল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপ, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে থাকেন, আগামী বছর তাদের বাংলাদেশের অনুকূলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওখান থেকেই তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তারা আমাদের জাতীয় কোটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং কোটা পূরণ হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকারি অর্থে কোনো অতিথিকে এবার হজে নেয়া হবে না। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের হজের জন্য ইতিমধ্যেই ৭ মিলিয়ন রিয়াল সউদীতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, বিকেলে বৈষম্য বিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দের পক্ষে হাবের সাবেক নেতা সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, এম এ রশিদ শাহ স¤্রাট, আখতার উজ্জামান, এ এস এস ইব্রাহিম, মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাত করে ১২ জানুয়ারি সউদী-বাংলাদেশ দ্বি পাক্ষিক হজ চুক্তিতে বাংলাদেশি হজযাত্রী কোটা এক হাজারের পরিবর্তে পাঁচ শত বহাল রাখার জন্য অনুরোধ জানান। ধর্ম উপদেষ্টা এ ব্যাপারে সর্বত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন বলে প্রতিনিধি দলতে আশ্বাস্ত করেন। হজ এজেন্সির প্রতিনিধি দল লীড হজ এজেন্সি নির্ধারনের সময় আগামী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবি জানালে উপদেষ্টা তা’ বৃদ্ধির জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।