পরিবর্তন হচ্ছে না ‘প্রশাসন ক্যাডার’
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

সিভিল সার্ভিস থেকে ক্যাডার শব্দটি বাদ দেওয়া প্রস্তাব মুখে বললেও আইনগত এবং বাস্তবায়বে বাতিল করার ক্ষমতা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের হাতে নেই। তবে প্রত্যেক সার্ভিসকে আলাদা-আলাদা করার সুপারিশ করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারে আসার প্রবেশের পথ বন্ধ করার সুপারিশ আসতে পারে বলে জানা গেছে। উপ-সচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থাকায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্কার কমিশন নতুন করে কোনো সুপারিশ নাও থাকতে পারে। কারণ এই পদে পদোন্নতির বিষয়ে কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ে বলা আছে। এদিকে জনমুখী, জবাবদিহিমূলক,দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন,জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা, জনকল্যাণ, সুশাসন এবং নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা, আগামীতে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্য ক্যাডার আর যুক্ত করা হবে না। আট বিভাগ থেকে ১০টি বিভাগ করা। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করা এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা পিএসসিতে দেয়ার সুপারিশ করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
বিশেষ করে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি, পদোন্নতিতে কোটা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে আলাদা রাখার ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা মানতে নারাজ বিসিএস ক্যাডাররা। এনিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সচিবের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার সমিতি এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। ভিন্ন ভিন্ন দাবি হলেও, সবাই এসব সুপারিশকে ‹বৈষম্যমূলক› বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন,প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে ‹সার্ভিসকেই› সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে কমিশন প্রধানের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁঞা ইনকিলাবকে বলেন, জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার দরকার। যাতে জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা, জনকল্যাণ, সুশাসন এবং নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যায়। আগামীতে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে অন্য ক্যাডার যুক্ত করায় একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আসলে প্রত্যেক ক্যাডারে আলাদা-আলাদা করে পদোন্নতি দেয়া দরকার। সব ক্যাডারে গ্রেড-১-গ্রেড-২ এবং গ্রেড-তি চালু করার দরকার। সেটা চাুল হলে এ সমস্যা থাকবে না।
এদিকে জুলাই-বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম জনপ্রশাসন বিনির্মাণে নিছক কিছু বিধি-বিধানের পরিবর্তন বা সংশোধন যথেষ্ট নয় বরং এমন একটি জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন বিনির্মাণ করা, জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা, জনকল্যাণ, সুশাসন এবং নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগামীতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা, জনকল্যাণ, সুশাসন এবং নাগরিক সেবা প্রদানে কি কি অসুবিধা বা হয়রানি শিকার হয়েছেন সে বিষয়ে একটি গবেষনাগার প্রতিষ্ঠা করা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ২০১৬ সালে তৎকালীন ২৬ ক্যাডার (ইকোনমিক ক্যাডারসহ) ও প্রশাসন ক্যাডার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ক্যাডারগুলোর মধ্যে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছে। এ দ্বন্দ্ব, বাকযুদ্ধ ও লেখালেখি যে নতুন করে শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকার জন্য প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের দিয়ে দলীয় ক্যাডারের পরিনত করা হয়। আগামীতে যাতে প্রশাসন ক্যাডারসহ অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা দেশের সাধারণ মানুষের সাথে বিরুপর আচারণ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা জবাবদিহিমূলক আইনের আওয়ার আনার সুযোগ রাখার বিধান যুক্তরা। সিভিল সার্ভেন্টদের সততা ও দক্ষতা সম্পর্কে জনগণের সার্বিক ধারণা সন্তোষজনক নয়। সবদিক বিচার করে বলা যায় যে, সিভিল সার্ভিসে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নৈতিকতা নিচে নেমে গেছে, তাদের মধ্যে প্রণোদনার ঘাটতি আছে এবং প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্যের অভাব আছে। সিভিল সার্ভিসের রাজনীতিকরণের বিষয়টি গত দ’ুদশকে জনগণের বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয়ের কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল নির্বাচনী ইশতেহারে গত (২০০৮) সিভিল সার্ভিসকে রাজনীতিকরণ থেকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। ইশতিহারে জোর দিয়ে বলা হয়েছিল যে, মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে চাকরিতে পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে। একই ইশতেহার দিয়েছিলো পতিত হাসিনা সরকার কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দক্ষ ও নিরপেক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেনি। মাঠ প্রশাসন সংস্কার, মন্ত্রণালয় গুলোকে সমন্বিত করণ,ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, গবেষণা ও উন্নয়ন নীতি। সংস্কার সম্পর্কিত আগের সমীক্ষার সুপারিশ গুলো এখনও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ সমীক্ষার সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হবে কিনা তা বলার সময় এখনও আসেনি সংস্কার সুপারিশ করা হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন সুত্রে জানা গেছে। অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের সুপারিশ আসতে পারে। এছাড়া ডিসির পূর্ণাঙ্গ নাম ডেপুটি কমিশনারের পরিবর্তে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট করা এবং ভূমি, সিটি করপোরেশন, পাসপোর্ট, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের হয়রানি নিরসনের প্রস্তাব রেখে সুপারিশ থাকছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য গঠন করা ১১টি কমিশনের মধ্যে প্রথমে গঠন করা ৬টি কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব গুছিয়ে এনেছে। চলতি মাসে না হলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সংস্কার কমিশনগুলো সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকার নির্ধারিত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূল প্রতিষ্ঠান ছিল সিভিল সার্ভিস। ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস ছিল দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সরকারের ফসল। কিন্তু ভারতীয় সিভিল সার্ভিস তা ছিল না। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছিল প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৭৬৫-১৮৫৮) এবং পরে ব্রিটিশ রাজের (১৮৫৮-১৯৪৭) উপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ও পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে। ১৭৮৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূখন্ডগত মালিকানা প্রধানত ‘সুপারভাইজার’ নামে অভিহিত কোম্পানির স্থানীয় বাণিজ্যিক অফিসারদের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশীয় সংস্থাগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতো। কোম্পানির সিভিল সার্ভেন্টদের বলা হতো কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভেন্ট। কোম্পানির শাসনের অবসান পর্যন্ত এবং তারপরও দীর্ঘদিন এ পদবিটি চালু ছিল। এ সার্ভিসের সদস্যরা ভারতে চাকরির জন্য ভারত সচিবের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন বিধায় এ চাকরির নাম হয়েছিল কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস (সিসিএস)। নববইয়ের দশকে এবং তার পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় ও অন্যান্য সংগঠনের সহায়তায় বিভিন্ন সরকার সিভিল সার্ভিস বা সরকারি চাকরির সংস্কারের উপর গবেষণা কাজ পরিচালনা ও সম্পন্ন করে। একটা পেশাদার সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা জোরদার ও কার্যকর করে তোলাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্যে। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সংক্ষিপ্ত রূপ বিসিএস নামে সর্বাধিক পরিচিতি) হলো বাংলাদেশ সরকারের সিভিল সার্ভিস। পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা উপনিবেশিক শাসনামলের ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী নিয়ন্ত্রিত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের উত্তরসূরি ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে এটি সিভিল সার্ভিস অধ্যাদেশের দ্বারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস হিসাবে পরিচিতি হয়। গত ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই এসএসপি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিসিএস (প্রশাসন) ও বিসিএস (সচিবালয়) একীভূত করার ফলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডারের সংখ্যা সর্বমোট ২৬ টি ক্যাডার। ১৪ টি সাধারণ ও ১২ টি পেশাগত/কারিগরি রয়েছে। সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে ,বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র),বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিরীক্ষা ও হিসাব) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (খাদ্য), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (তথ্য), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ডাক), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বাণিজ্য)। প্রফেশনাল ক্যাডারের মধ্যে রয়েছে, বিসিএস (সড়ক ও জনপথ),বিসিএস (গণপূর্ত) বিসিএস (বন), বিসিএস (স্বাস্থ্য),বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল), বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল), বিসিএস (পশুসম্পদ), বিসিএস (মৎস্য), বিসিএস (কৃষি), বিসিএস (পরিসংখ্যান), বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা), বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)। প্রজাতন্ত্রের গণকর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। এ কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য গণকর্মচারী নিয়োগবিধি ও চাকরিবিধি প্রণয়নও এ মন্ত্রণালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিয়োজিত জনবলের সংগঠিত ও প্রমিত কর্মজীবন পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন ও প্রসারের মতো তাৎপর্যম-িত বহুমুখী দায়িত্ব পালনেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সক্রিয় এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারের পরিবর্তে ছয়টি করার সুপারিশ করার কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। ইতোমধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য গঠিত কমিটি অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারেনি। কমিটির কার্যপরিধিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। এ কারণে কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর সুপারিশ করবে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এখনো তাদের সুপারিশ জমা দেয়নি। তবে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে। এর পর থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। তাঁরা সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হচ্ছে না। সংস্কার কমিশনের কিছু কাজ এখনো বাকি। সুপারিশে বিষয় এখন কথা বলতে চাই না। তবে প্রতিবেদন দিলেই আপনারা জানতে পারবেন। বর্তমানে সিভিল সার্ভিসে মোট ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। ক্যাডারগুলোর মধ্যে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছে। এ দ্বন্দ্ব, বাকযুদ্ধ ও লেখালেখি যে নতুন করে শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৬ সালে তৎকালীন ২৬ ক্যাডার (ইকোনমিক ক্যাডারসহ) ও প্রশাসন ক্যাডার প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এর আগেও প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের সংগঠন (প্রকৃচি) নানা সময়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিল। কিন্তু বিগত সরকারগুলো আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তবে প্রযুক্তি প্রসারের ফলে এখন ক্যাডারগুলোর দ্বন্দ্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে এই বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্যাডারের ১০ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিভিল সার্ভিসে ২৬টির পরিবর্তে ৬টি ক্যাডার রেখে বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার সুপারিশ করতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এক্ষেত্রে ক্যাডার শব্দটি বাদ দিয়ে কর্মকর্তা হিসাবে অভিহিত করা হবে। কারণ ক্যাডার শব্দটি ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে সাধারণ মানুষের-এমনটি মনে করছেন কমিশনসংশ্লিষ্টরা। তারা আরও জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করবে। ইতোমধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয়নি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য গঠিত কমিটি অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করতে পারেনি। কারণ কমিটির কার্যপরিধিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। সে কারণে কমিশন সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর সুপারিশ করবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থাকায় পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন নতুন করে কোনো সুপারিশ যুক্ত করতে নাও পারে। তবে কমিশন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদবি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট করার সুপারিশ করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এছাড়া সরকারি অফিসে কর্মরতদের স্যারের পরিবর্তে জনাব এবং মহিলা কর্মকর্তাদের ম্যাডাম বা পদবি মোতাবেক সম্বোধনের সুপারিশ থাকতে পারে। উল্লেখ্য, সরকারি অফিসে স্যার বলা নিয়ে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেবাপ্রত্যাশী ও গণমাধ্যমকর্মীদের দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে কমিশন স্যারের পরিবর্তে উল্লিখিত পদবি বা নাম ধরে সম্বোধনের সুপারিশও করতে পারে। কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের সুপারিশ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে দ্রব্যমূল্যের স্ফীতি ঘটলে বেতন বাড়বে আবার দ্রব্যমূল্য কমলে বেতন কমবে। প্রতিদিন সরকারি সংস্থাগুলো বাজার মনিটরিং করবে। প্রতিদিনের বাজারদর বিশ্লেষণ করে বেতন বৃদ্ধি বা কমার হার নির্ধারণ করা হবে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০টি মতবিনিময় সভা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বক্তব্য নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা, ক্যাডার সংগঠন এবং সেবাপ্রত্যাশী মানুষের বক্তব্য শুনেছে কমিশন। ফলে বিশেষ সুবিধা নেওয়া বা প্রভাব খাটিয়ে দ্রুত কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হবে বলে মনে করছে কমিশনসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এতে তদবিরের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে কমে আসবে। এছাড়া সিভিল সার্ভিস নিয়ে গবেষণা সেল করার সুপারিশ করতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আসলে কোনো ক্যাডারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সব ক্যাডার দেশের জন্য কাজ করছে। তবে সকল ক্যাডার আছে তারপরও অন্য ক্যাডার থেকে সবাই প্রশাসন ক্যাডার যুক্ত হচ্ছেন। আমরা কিন্তু বাঁধা দেই নেই। আসলে জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন,জনগণের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা, জনকল্যাণ, সুশাসন এবং নাগরিক সেবা প্রদান অনিশ্চিত হবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দেশের রাজনীতিক পরিস্থিতি ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে।
##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান