ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
ঢাকা-বাইপাস সড়ক দখল করে বাণিজ্যমেলার গাড়ি পার্কিং

পুলিশের দাবি ইজারা টেন্ডারের আওতায়

Daily Inqilab খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসরের পূর্বাচলে স্থায়ী প্যাভিলিয়নে চলছে ৪র্থবারের মতো মাসব্যাপী আসর। ১৫তম দিনে বুধবার মেলা ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের সমাগম। তবে মূল ভবনের পশ্চিম পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-বাইপাস সড়কের ৮ লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান। পাশাপাশি মেলায় আসা সাধারণ দর্শনার্থীদের ব্যক্তিগত কিংবা ভাড়া করা গাড়ি রেখে মূল সড়কের মাঝখানজুড়ে প্রায় ৫০০ মিটার সড়কে পার্কিং করে দখলে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। দাবি করা হচ্ছে সড়কটি টেন্ডারের আওতায়। এদিকে সড়কে পার্কিং করায় মেলায় আশপাশের ২ কিলোমিটার জুড়ে নিত্য যানজট আর যাতায়াতের ভোগান্তি যেন বাড়ছেই। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারীরাও।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেলার পশ্চিম পাশের ঢাকা-বাইপাস সড়কে শতশত গাড়ি পার্কিং করা। এদের মাঝে কথা হয় গুলশান থেকে আসা প্রাইভেটকারচালক শামীম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, সওজের সড়কে গাড়ি রাখলাম আর পুলিশ আমাকে ৫০ টাকার টিকেট ধরিয়ে দিলো। সড়কের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে বের দিয়ে এ টাকা তুলছে খোদ পুলিশের লোকজন।
তিনি আরো বলেন, আমার সাহেব ও ম্যাম মেলায় ঘুরতে আসছে। পার্কিং কোথায় জানতে চাইলে সড়কের মাঝখানেই পার্কিং করতে বলে। তাই করেছি। ৩ ঘণ্টার জন্যে ৫০ টাকার টিকেট দিয়েছেন। ১ মিনিট দেরি হলে আরো ৫০ টাকা রাখবে হুঁশিয়ারি করেছেন।

কুড়িল এলাকা থেকে আসা অপরচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, মেলার ভেতরে স্থায়ী পার্কিং জোন পুরোই ফাঁকা, পেছনেও ফাঁকা পড়ে থাকে। অথচ মেলার সামনে ঢাকা-বাইপাস সড়কজুড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে এমন পার্কিং করে রাখায় বিকেল হলে আরো ভয়ংকর যানজট তৈরি হয়। ফলে সড়ক থেকে পার্কিং সরানো জরুরি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, বরাবরই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার জন্যে নির্ধারিত পার্কিং জোন থাকে। এবারও রয়েছে। তবে সড়ক দখল করে এমন অভিনব পার্কিং আর দেখিনি। সড়কে পার্কিং থাকায় মেলায় আসা দর্শনার্থীরা যারা ব্যক্তিগতভাবে গণপরিবহনে আসেন তাদের ভোগান্তি হয়। এসব গাড়ি পার্কিং থাকায় ছিনতাইকারীরাও সুযোগ বুঝে মাল ছিনিয়ে লুকিয়ে যায়।

ঢাকা-বাইপাস সড়কে দায়িত্বরত টিআই রাজিব বাহাদুর এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে পার্কিং কেন করা হয়েছে আমার জানা নাই। মেলা অঞ্চলের গাড়ি পার্কিং ও ই টিকিটিংয়ে দায়িত্বে রয়েছেন টিআই গৌরাঙ্গ দাস। আমরা সড়কের যানজট ও শৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলায় দায়িত্বরত পার্কিং ও ই টিকেটিং কর্মকর্তা টিআই গৌরাঙ্গ দাস বলেন, মেলার গাড়ি সড়ক দখল করে হচ্ছে; এটা পরিস্থিতির কারণে হতে পারে। তবে পার্কিং বিষয়টির বিস্তারিত জেলা এএসপি আলফা ফাইভ স্যার জানেন।

এসব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ট্রাফিকের এএসপি (আলফা ফাইভ) সাগর বলেন, মেলায় সরকারি ছুটির দিনে প্রচুর দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। ফলে নির্ধারিত পার্কিং জোন ছাড়াও অতিরিক্ত জায়গায় প্রয়োজন থেকে সড়ককেও টেন্ডারের আওতায় রাখা হয়েছে। ফলে সড়ক দখলের কিছু নয়, নির্মাণাধীন সড়কের একটি অংশে পার্কিং থেকে জেলা পুলিশের অংশগ্রহণে টেন্ডার পেয়ে কাজ করছি। তবে সামনের বছর হয়তো সড়ক এভাবে ব্যবহার করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, মেলায় স্থায়ী পার্কিং জোন যথেষ্ট নয়, তাই এ বছর রাজউকের খেলার মাঠ ও ঢাকা-বাইপাস সড়কের কিছু অংশকে টেন্ডারের আওতায় রাখা হয়েছে। এ বছর ২২ লাখ টাকা ভ্যাট ব্যতিত খরচ হয়েছে।
এদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিনের মতো রাজধানীসহ আশপাশের জেলা থেকে নারী ক্রেতা দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে বেশি। মেলা উপলক্ষে মূল্য ছাড় দেয়ার কারণে শেষের দিকে বেশি আনাগোনা হয়। এখন আবহাওয়া চমৎকার তাই লোক সমাগম বেড়েছে।

এদিকে রাজধানী থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতে চলমান বিআরটিসি বাসে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ করেছেন অনেকে। কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত ৩৫ টাকা ভারা নির্ধারণ করলেও সন্ধ্যার পর থেকে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা রাখা হয়।

মমিনুল ইসলাম নামের বাড্ডার বাসিন্দা বলেন, মেলার গত ২ দিন পূর্বে আসার সময় টিকেটের যা লেখা তা দিয়ে আসলাম অথচ সন্ধ্যার পর ভাড়া বেশি দিয়ে যেতে হয়েছে। আজো তাই সিএনজিতে ৫০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে আসছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি মেলা অঞ্চলের সুপারভাইজর আমির হোসেন বলেন, বিআরটিসিতে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টিকেট মূল্যের অতিরিক্ত রাখার সুযোগ নাই। তবে কেউ একাধিক সিট দখল করে যাতায়াত করলে সংশ্লিষ্ট সিটের ভাড়া নিয়ে থাকি। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে তা সমাধান করবো।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত