কয়েক দশকে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে বৈষম্য বেড়েছে :আনু মুহাম্মদ
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ও লেখক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘গত কয়েক দশকের মধ্যে সাংঘাতিকভাবে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। গতকাল বুধবার সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন হবে?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ২০১০, ২০২০ ও ২০২২ সালে পরিচালিত বিভিন্ন সার্ভে থেকে দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে যত দিন গিয়েছে তত সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২২ সালে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আয়ের দিক থেকে জনগনের মধ্যে শীর্ষ ৫ শতাংশ যে পরিমাণ আয় করে তা নি¤œ আয়ের ৫ শতাংশের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। এ হিসাবও পরিপূর্ণ নয়। কেননা আমরা নি¤œ আয়ের মানুষের ৫ শতাংশের হিসাব পেলেও উচ্চ আয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশের হিসাব পাচ্ছি না। এই হিসাব জানা গেলে বোঝা যাবে বৈষম্য আরো কতটা প্রকট। গত কয়েক দশকে উন্নয়নের ধরনটা এমন যে সেখানে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিলনা। আমাদের দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থার জন্য শুধু শেখ হাসিনাই নয় বরং গত কয়েক দশকে সরকারে থাকা লোকদেরও দায় রয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এস আলম, সামিট, মেঘনার মতো কতিপয় গোষ্ঠীর দায় রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলোর উদ্ভব ও বিকাশের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, এরা শেখ হাসিনার আমলে তারা সম্পদ পাচারের ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া এদের উদ্ভবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র মতো উন্নয়ন সহযোগীরা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করেছে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা না থাকার কারণে এই ধরনের বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ফলে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আরেক ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা জিডিপির গ্রোথ দেখি কিন্তু গ্রোথ কিসের বিনিময়ে হলো তা দেখি না।
এই প্রফেসর বলেন, গত এক দশকে একইসাথে উচ্চহারে বন উজাড়ের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জিডিপির দুটোই বৃদ্ধির হার ছিল সবচেয়ে বেশি। এটার প্রতিক্রিয়া হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। আমাদের যে সমস্ত অর্জনের সাথে যেসব সমস্যা তৈরি হলো তা শনাক্ত না করলে বৈষম্যহীন জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক হেলথকেয়ার কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অর্থাৎ যেসব জায়গায় পাবলিক শব্দ জুড়ে দেওয়া আছে এমন সর্বজনের অধিকার থাকা জায়গাগুলো একরকমের বৈষম্যের শিকার। এটাও বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের একটি ধরন। যদি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলি তাহলে এসকল জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। এছাড়া জিডিপি গ্রোথ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে শিক্ষার পরিবেশ ঠিক করতে হবে।
এসকল বৈপরীত্য ও বৈষম্য দূর করার গুরুত্বারোপ করে এই প্রফেসর বলেন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্র বৈষম্যের অন্যতম উৎস। শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো বৈচিত্র্য বোধহয় পৃথিবীর সভ্য কোনো দেশে নেই। তাই বৈষম্য দূর করতে হলে ও দেশকে বাসযোগ্য দেশ হিসেবে তৈরি করতে গেলে চিকিৎসাক্ষেত্র ও শিক্ষাক্ষেত্র ঠিক করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, সকল শ্রেণির জন্য ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা জরুরি। যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা গ্রহণযোগ্য করা উচিত নয় এবং প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারকে দেশের সবচেয়ে উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশ লোকের হিসাব প্রদান করার ব্যবস্থা করা জরুরি এবং তাদেরকে যথাযথভাবে কর প্রদানকারীদের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। গ্রহণযোগ্য, উৎপাদনশীল, কার্যকর অর্থনৈতিক কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ করা উচিত সেই নীতিমালাগুলোকে, যে নীতিমালা এই সম্পদের কেন্দ্রীভূত হওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করেছে, বৈষম্য তৈরি করেছে এবং এ প্রক্রিয়ায় স্বৈরাচার তৈরি করেছে। আর স্বৈরাচার সম্পদ কেন্দ্রীভূত করা গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা প্রদান করে টিকে থাকে। বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে স্বৈরশাসক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ফলে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা চালু থাকলে স্বৈরশাসন অব্যাহত থাকবে। স্বৈরশাসন থেকে বাঁচতে হলে বৈষম্যের জায়গাগুলোকে প্রশ্ন করতে হবে। যে নীতিমালাগুলো, উন্নয়ন মডেলগুলো এই বৈষম্যের জায়গা তৈরি করে তাদের প্রশ্ন করতে হবে। আর এদের অন্যতম সহায়ক এডিবি, আইএমএফ’র মতো প্রতিষ্ঠান। যাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত