ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

সুদহার বাড়লে বাধাগ্রস্ত হবে ব্যবসা-কর্মসংস্থান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম


উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে দীর্ঘদিন। নানান পদক্ষেপের সঙ্গে সুদহার বাড়িয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এরই মধ্যে নীতি সুদহার আরেক দফা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ (জানুয়ারি-জুন) সময়ের মুদ্রানীতিতে আসতে পারে এ ঘোষণা। উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না, এতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুদহার বাড়িয়ে বিনিয়োগ চাইলে ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রেপো (ট্রেজারি বিল জমা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার) সুদহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। নীতি সুদহার বাড়লেও সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের ঋণে সুদহার (৪ শতাংশ) অপরিবর্তিতই থাকবে। গত রোববার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি না কমলে নীতি সুদহার বাড়ানো হবে। এটি হবে বর্তমান গভর্নরের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।

রেপোর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। আবার ব্যাংক রেটও এক ধরনের নীতি সুদহার। ব্যাংক রেটে ঋণ পান সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জুডিসিয়ারি সার্ভিস, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এ কারণে ব্যাংক রেট বাড়লে বা কমলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীর ঋণের খরচ বাড়ে বা কমে।
২০০৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক রেট ছিল ৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংক রেট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামানো হয়। ওই বছরের ৩০ জুলাই রেপোর সুদহার কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর রিভার্স রেপো সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ব্যাংক রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামানো হয়েছিল। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ২০২২ সালের ৩০ মে প্রথমে রেপোর সুদহার বাড়ানো হয়। রেপোর সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে টানা ১৩ দফা বাড়িয়ে সবশেষ গত অক্টোবরে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। স্পেশাল রেপোর সুদহার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে এখন সাড়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪ শতাংশ ব্যাংক রেট অপরিবর্তিত আছে।

ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এখন কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে, অন্য খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অতিরিক্ত দর। সুদের হারও বাড়তি। ব্যবসা চালানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন প্রফিট করতে পারছি না। এর সঙ্গে নতুন করে ফের সুদহার বাড়ানো হলে শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। উৎপাদন খরচ বাড়বে, প্রফিটের দেখা পাবেন না উদ্যোক্তা।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেন, এখন সুদহার বাজারের ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একেক ব্যাংক একেক রকমের সুদ নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদ বাড়ানো হয়, কিন্তু এখন বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। সুদহার এখন অনেক বেশি। এখন সুদ বাড়লে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রজেক্ট নেই, ক্রেতারা ঋণ করে আবাস গড়েন। সেখানে সুদহার আরেক দফায় বাড়ানো হলে ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে উদ্যোক্তারা যেন সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ পায় তা নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে একটি সংকটময় মুহূর্ত যাচ্ছে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মূল কারণ সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উচ্চ সুদহার আমাদের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, সাধারণত ঋণ নিয়েই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। সুদ যখন বাড়ে এতে প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বড়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন চালের গোডাউনে দেড় মাসে চাল রেখে বিক্রি করতে সময় লাগে, চাতালসহ বিভিন্ন খচর আছে। এক্ষেত্রে সুদহার বাড়লে এভাবে সব ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়বে। খরচ দেবে ভোক্তা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে চলা সমস্যা- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও সীমিত কর্মসংস্থানের চাপ আছে। আগামী দিনে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ থাকবে, বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে। নীতি সুদহার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বাড়ানো হবে। তবে এটারও সীমাবদ্ধাতা আছে। স্থিতিশীলতা ফিরে এলে সেটা কমাতে হবে।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
দেশের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত