সবাই মিলে আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠন করতে চাই :ডা. শফিকুর রহমান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০১ এএম

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের সামনে একটি মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এসছে। আমরা যেন এ সুযোগকে কোনভাবেই হাত ছাড়া না করি। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকবে। তবে দেশের স্বার্থে আমরা যেন ঐকমত্য পোষন করতে পারি। আমরা যেন একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠন করতে পারি। গতকাল রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার গুণীজনদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যে এক কথা বলেন।

ডা.শফিকুর রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতার ৫৪টি বছর অতিবাহিত হয়েছ্ েএর মধ্যে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবাদল হয়েছে। কিন্তু কেউই আমাদের প্রত্যাশাপূরণ করতে পারেনি। একটি ইনসাফের বাংলাদেশ, একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ, একটি মানবিক বাংলাদেশ এতটুকুই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু দু:খের বিষয় তা আজও আমরা পাইনি। যুগ যুগ ধরে নানা অস্থিরতা চলে আসছে। যুগ যুগ ধরে অন্যায় জুলুম চলে আসছে। কোন সময় জুলুমের মাত্রা একটু কম কোন সময় একটু বেশি। জুলুম কোখনো বন্ধ হয়নি। জুলুম থেকে জাতি কখনো মুক্তি পায়নি।

তিনি বলেন, গত দু’দিন আগে ৫ বছরের একটি শিশু সারা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে চলে গেছে। সে চিৎকার দিয়ে বলে গেছে লজ্জা লজ্জা এই সমাজ ও দেশ ও জাতির। রাষ্ট্রের পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে সবার নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্র যদি তার নাগরিককে নৈতিক শিক্ষায় মানববিক করে গড়ে তুলতে পারে তাহলে একটি সুন্দর ও মানবিক দেশ গঠন সম্ভব। আর মানবিক দেশ গঠন হলে সেখানে নারীরা থাকবে নিরাপদ, তারা তাদের পূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা পাবে।

জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষিত লোকের অভাব নেই। কিন্তু নৈতিক শিক্ষার বড় অভাব। এখানে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাই একাকার হয়ে গেছে। নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজে এই অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। মহান আল্লার দরবারে দোয়া করি আগামীর বাংলাদেশ যেন নৈতিক শিক্ষা নির্ভর একটি বাংলাদেশ হয়। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, মেরুদন্ড শক্তিশালী হলে জাতিও শক্তিশালী হবে। বর্তমান শিক্ষায় না আছে নৈতিকমান না আছে জাগতিক মান। শিক্ষা এখন অর্থহীন। আমরা একটা সার্টিফিকেট দেই আমাদের সন্তানদের হাতে, কিন্তু তার কোন মর্যাদা নেই। আমরা এমন শিক্ষা এবং সার্টিফিকেট দেখতে চাই না। এই বাংলাদেশকেই আমাদের গড়তে হবে। এই বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের হাত হবে দেশ গড়ার কারিগর। দুনিয়ায় যত জাতি উন্নত হয়েছে শিক্ষা দিয়েই হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী মনে করে শিক্ষাকে যদি নৈতিক মানে উন্নত করা যায় তাহলেই একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।

তিনি বলেন, আজকে মুক্ত পরিবেশে আমরা এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতে পেরেছি। এ জন্য মহান আল্লার শুকরিয়া আদায় করছি। অথচ গত বছরও আমরা সোনারগাঁয়ে ইফতার আয়োজন করতে পারিনি। আমাদের করতে দেওয়া হয়নি। গত সাড়ে ১৩ বছর আমাদের সব অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপর জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে অন্যায় ভাবে ফঁসি দিয়ে বিচারিক হত্যাকরা হয়েছে। শুধু আমাদের নয় আরও অনেক রাজনৈতিক দলসহ সকল শ্রেণী পেশার মানষের উপর নানাভাবে জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে। তারও অবসান হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তবে আমরা দেশ ছাড়বো না। আমারা এদেশে জন্মেছি, এদেশ আমার, এদেশকে আমি ভালোবাসি। তাই দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কেউ পালিয়ে যায় না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যাদের আত্মত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ এর ৫ আগস্ট যে গণ-বিপ্লব যাকে জুলাই বিপ্লব বলা হচ্ছে, সেই বিপ্লবে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যাদের কোরবানির বিনিময়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। একই সাথে যারা যুগ যুগ ধরে দেশের জন্য, ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন, শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সবাইকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। সেই সাথে জাতির মুক্তির জন্য লড়াই করতে গিয়ে যারা আহত হয়েছেন, পা হারিয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন তাদেরকেও গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের পূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি।

জাময়াতের আমির বলেন, আমরা অভিভ’ত, আমরা আনন্দিত যে আপনারা আমাদের দাওয়াত কবুল করে এখানে এসেছেন। আপনাদের এঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই। তবে দোয়া করি আল্লাহ যেন আপনাদের এই ত্যাগ ও ভালোবাসার প্রতিদান দুনিয়া এবং আখেরাতে উত্তম রূপে দান করেন। এবং অল্লাহতায়লা যেন আপনাদের মর্যাদাও বৃদ্ধি করে দেন।

ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা অব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যা এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ খেলাত মজলিশের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, নজাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আরও অনেক রাজনৈতিকদলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, মানব জমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, সংগ্রাম সম্পাদক আজম মীর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ
সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী
কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!
১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি
ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা
আরও
X

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪১ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল জব্দ

সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪১ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল জব্দ

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প