ঝক্কি-ঝামেলাহীন ঈদযাত্রা
২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৭ এএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৭ এএম

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব উপলক্ষে সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে শুক্রবার। টানা ৯ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উৎসব পালন করতে। গত বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে বিকেলের পর থেকে রাজধানী ছাড়তে বাস ও ট্রেন স্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। লঞ্চে যাত্রীদের চাপ। মহাসড়কে বড় যানজট না হলেও, রাজধানী থেকে বের হতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস-টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কাউন্টারের সামনে এবং ট্রেন স্টেশনগুলোতে অপেক্ষমাণ মানুষদের ভিড় ছিল। লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। রাজধানী ছাড়তে ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও ঈদের আনন্দে বাড়ি ফেরা মানুষদের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
বিগত বছরগুলোতে ঈদের ঘরমুখী মানুষ সড়ক পথে উত্তরের জেলাগুলোতে ছুটতে গলদঘর্ম হতো। যাত্রা পথেই লেগে যেত ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা। কিন্তু এখন আট লেনের রাস্তার কাজ অনেকাংশে শেষ হওয়ার পথে। ফলে সেই ভোগান্তি আর নেই। পদ্মা সেতু হওয়ায় বরিশালে সড়কপথে যাত্রীরা যাতায়াত করেন।
গতকাল বাস-টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে কাউন্টারের সামনে এবং রেলস্টেশনগুলোতেও ছিল অপেক্ষমাণ মানুষদের ভিড়। লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। রাজধানী ছাড়তে ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও ঈদের আনন্দে বাড়িফেরা মানুষদের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ। অনেকে পরিবরের সঙ্গে ঈদ করতে আকাশপথেও গ্রামে ফিরছেন। রাজধানীর কমলাপুর থেকে গতকাল শুক্রবার ৭০টির মতো ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪৩টি আন্তনগর, ২৪টি মেইল কমিউটার। এসব ট্রেনের সঙ্গে দুটি বিশেষ ট্রেনও যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেল।
কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নীলসাগর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস এবং নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে যাত্রা করেছে। এতে এসব ট্রেনের যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়বে বলে বাসা থেকে ভোরে রওনা হয়ে কমলাপুর এসেছি। কিন্তু এসে দেখি ট্রেন সময়মতো ছাড়েনি। এমনিতেই স্টেশনে যাত্রীর চাপ বেশি, তারপর আবার বসে থাকা; এটা একটা কষ্টকর বিষয়।’
রেলস্টেশন ঘুরে আরো দেখা যায়, যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। তিন স্তরের চেকিং শেষে যাত্রীকে স্টেশনে ঢুকতে হচ্ছে। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্যই বিনা টিকিটের বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিকেলের পরে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও কেউ যেন ট্রেনের ছাদে উঠতে না পারে, সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। আশা করি যাত্রীদের ভোগান্তি হবে না।’
মহাসড়কে নেই ভোগান্তি : রাজধানী ছাড়তে বাসের যাত্রীরা গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ভিড় জমিয়েছে। শহর থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট হওয়ার কারণে টার্মিনাল থেকে গাড়িগুলো বের হতে বেশি সময় লাগছে। এতে বাসের কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে কাক্সিক্ষত বাসে ওঠার জন্য। গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে মদনপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকায় ট্রাক ঢুকতে না দেয়ার কারণে এই মহাসড়কে জট তৈরি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে সব মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে, তবে কোথাও বড় ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় এখনো ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়নি। মহাসড়কে জট না থাকায় অনেকটা স্বস্তিতেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, ‘ঈদে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে না। ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সতর্ক থাকবে। ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। তাদের যাত্রাটা আনন্দদায়ক করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। হাইওয়ে পুলিশ খুব সক্রিয় রয়েছে।’
সড়কপথে ঈদযাত্রার বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘সড়কপথে এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রা নির্বিঘœভাবেই চলছে। আমাদের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। টার্মিনালগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আদালত পরিচালনা করছেন। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। আশা করছি সড়কপথে এবার ঈদযাত্রা ভোগান্তি ছাড়াই শেষ হবে।’
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও ঈদযাত্রা নির্বিঘœ আছে। দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামে আমজাদের বাজার পর্যন্ত এই অংশে কোনো রকম যানজট ছাড়াই স্বস্তিতে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসা নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে কুমিল্লায় দেড় ঘণ্টায় এসেছেন। এত তাড়াতাড়ি ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি তিনি।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কলকারখানার ছুটিতে কর্মজীবী মানুষ গ্রামের বাড়িতে শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ শিল্প-কলকারখানায় বেতন-বোনাস দেয়া হয়েছে।
গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দিনভর মহাসড়ক দুটিতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় এবং যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট দেখা যায়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ ও যানজটমুক্ত রাখতে মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীরা।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী যাবের সাদেক হোসেন খান জানান, কালিয়াকৈর চন্দ্র এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজট নিরসনের জন্য প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর ও শ্রীপুর এলাকা এবং কাপাসিয়া থানা ও কালীগঞ্জ এলাকায় সড়ক মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে কাজ করছে।
সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যানবাহনের পরিমাণ ক্রমশই বাড়তে দেখা যায়। যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কড্ডার মোড়, ঝাঐল ওভারব্রিজ, নলকা ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় দেখা যায় বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে করে হাজার হাজার মানুষ ঘরে ফিরছে। সেই সঙ্গে ট্রাক, পিকআপভ্যান যোগে আসছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়া পরিবারসহ মোটরসাইকেলেও ঘরে ফিরছে অনেক মানুষ। বাড়তি যানবাহন চলাচল করায় ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে প্রচুর চাপ রয়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট বা দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়নি।
পুলিশ ও যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের গেটওয়ে সিরাজগঞ্জ। এ জেলার ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আট জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার গাড়ি চলাচল করে। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের পথ যমুনা সেতু পশ্চিম সড়ক।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনারুল ইসলাম বলেন, গাড়ির চাপ বাড়তে থাকলেও এখন পর্যন্ত যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে কোথাও কোনো যানজট নেই।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার (বগুড়া রিজিওন) মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষ নির্বিঘেœ ঘরে ফিরছে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের ৩২২ জন ও এপিবিএনের ১০০ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবির পাভেল বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতুর ওপর দিয়ে ৩৫ হাজার ২২৭টি যানবাহন চলাচল করেছে। যা স্বাভাবিকের তুলণায় দিগুণ। টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। গত তিন দিন থেকে দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করছে।
ঈদযাত্রা যাতে শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক থাকে সে জন্য কাজ করছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি)। জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, গাজীপুর মহানগরের যানজট ও জনজট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে উঠতে দেয়া হবে না।
সদরঘাটে ভিড় নেই : ঈদের সময় সদরঘাট লঞ্চ-টার্মিনালে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এ বছর ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে নেই চিরচেনা সেই ভিড়। তবে এবার উপচেপড়া ভিড় না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
বিআইডব্লিউটিএ ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৩৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে। অন্য দিকে টার্মিনালে ভিড়েছে ৭৮টি লঞ্চ। এ ছাড়া এ বছর ঈদযাত্রায় প্রায় ১৭৫টি লঞ্চ যাত্রীসেবা দিচ্ছে।
লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল ও যাত্রী পরিবহন (যাপ) সংস্থার সদস্য হামজা লাল শেখ বলেন, টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে আমাদের ১৭৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাত্রীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, টার্মিনালে এখনো যাত্রীর চাপ বাড়েনি। তবে যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পাটুরিয়ায় ভোগান্তি নেই : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ঘাটে কোনো ভোগান্তি নেই। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের সঙ্গে বহুসংখ্যক ভেঙে ভেঙে আসা যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। একই চিত্র দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটেও। প্রতিটি লঞ্চেই ছিল ভিড়। এ অবস্থায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে লঞ্চগুলো। পথে কোনো ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। যাত্রীর চাপ থাকলেও দৌলতদিয়া ঘাটে নেই কোনো যানজট বা ভোগান্তি। ফেরি ও লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নেমে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। ঢাকা থেকে আসা হামিদা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরি ঘাটে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকটি ঈদের মতো এবারো কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই বাড়িতে ফিরছি। পথে যানজট নেই, এমনকি ফেরিঘাটেও ভোগান্তি নেই।’
প্রাইভেটকারচালক বাচ্চু সরদার বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দুই পাড়ের কোথাও তেমন কোনো ভোগান্তি নেই। ঘাটে আসামাত্রই ২০ মিনিটের মধ্যে ফেরিতে উঠতে পেরেছি। অথচ এক সময় দুই ঘাটে কত ভোগান্তি ছিল। আল্লাহ বাঁচাইছে।’
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সালাহউদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তিনি বলেন, ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে উঠে যানবাহন গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। আশা করছি এবার ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা বাড়ি ফিরবেন এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরবেন।’
আকাশপথে চাপ কম : এবার ঈদে আকাশ পথে যাত্রীর তেমন চাপ নেই। অন্য বছরগুলোতে প্রতিটি এয়ারলাইন্স যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা হয়। বাড়তি ফ্লাইট চালাত বাধ্য হন তারা। কিন্তু এবার পুরোটাই ভিন্ন চিত্র। শুধু বিমান এয়ারলাইন্স তিন রুটে ১৩ বাড়তি ফ্লাইটের ঘোষণা দিলেও এখনো বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বাড়তি ফ্লাইটের ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার শুধু বেসরকারি নয় সরকারি এয়ারলাইন্সেও যাত্রীর তেমন চাপ থাকবে না। সব মিলে বলতে গেলে শুধু উত্তরের রুটে যাত্রী থাকবে। অন্য রুটগুলোতে তেমন চাপ নেই। বিশেষ করে বরিশাল। বিগত সময়ে কক্সবাজার রুটে ঈদের পর লম্বা লাইন লেগে যেত। কিন্তু এবার তেমনটা ঘটবে না। তবে যাত্রীরা যাবেন নিয়মিত ফ্লাইটে।
জানা গেছে, প্রতি বছর আকাশপথে টিকিটের চাপ থাকে। টিকিট হয়ে ওঠে সোনার হরিণ। ফলে বাড়তি দামেও টিকিট কিনে থাকেন ক্রেতারা। কিন্তু এবার সেই চাপ ও চড়া মূল্যের টিকিটে ভাটা পড়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো গত ২৫ মার্চ থেকে চাপ প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাড়তি ফ্লাইট চালানোর ঘোষণা আসেনি। তবে ঈদের দিন থেকে পরের তিন দিন কক্সবাজার রুটে পর্যটকের চাপ থাকবে। ফলে সেই তিন দিন এয়ারলাইন্সগুলো ব্যস্ত সময় কাটাবে। ফ্লাইটও বাড়তে পারে।
এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবার ঈদে দেশের যাত্রীদের বিদেশগামী যাত্রী ব্যাপক মেলে। কিন্তু সেই চিত্রেও এবার ভাটা পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অন্য বছরে চাপ থাকলেও এবার ফেরার চাপ বাড়বে।
বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা বোসরা ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ঈদের ফ্লাইটগুলো চালু হয়েছে। চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত। পরে কি হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। উত্তরের জেলা রাজশাহী এবং সৈয়দপুরে বাড়তি ছয়টি করে ১২টি ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বরিশাল রুটে একটি। এই মিলে বিমানের ১৩টি বাড়তি ফ্লাইট চলবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, বিমান এয়ারলাইন্স রাজশাহী রুটে স্বাভাবিকভাবে সপ্তাহে চারটা ফ্লাইট চালায়। কিন্তু সেই জায়গায় এবার তারা প্রতিদিন বাড়তি দুটি ফ্লাইট দিচ্ছে। এ বাড়তি ফ্লাইট চলবে আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত। বরিশালে চলে তিনটি কিন্তু একটি বাড়ানোর পাশাপাশি সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চলে সেখানে আরো একটি বাড়িয়েছে তারা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইসরাইলি অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ

গোদাগাড়ীতে ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান করে প্রশাংসায় ভাসছেন ইউএনও

মির্জাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক পরিবারের ৩ জন আহত

সুন্দরগঞ্জে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক উৎসব

নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের শুভেচ্ছা বিনিময়

ঈদের দিনেও রক্তাক্ত পাকিস্তান, একাধিক সংঘর্ষে নিহত ৬

কেমন ছিল অটোমানদের ঈদ উৎসব?

ইবি ক্যাম্পাসে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

হাসপাতালে ঈদ কাটানো রোগীদের পাশে বিএনপি নেতৃবৃন্দ

ঈদের ২য় দিনেও চলবে ডিএনসিসির ঈদমেলা

ঈদে ভক্তদের কি বার্তা দিলেন চার খান?

খেলাধূলার কোন বিকল্প নেই : বিএনপি চেয়ারপারর্সনের উপদেষ্টা শাহজাহান মিঞা

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ঈদ আনন্দ র্যালি অনুষ্ঠিত

ঈদের জামাতে আসিফ কেন আলাদা কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন, জানা গেল কারণ

ঈদুল ফিতরে ড. ইউনূসকে মোদির বার্তা

কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় হাফেজ ফারুকের ঈদ পরিণত হল বিষাদে!

শহীদ তামীম ও শহীদ সিফাতের পরিবারের সাথে জামায়াত আমীরের সাক্ষাৎ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনই দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে : সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি : আমিনুল হক

১৭ বছর পরে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করলেন সরকারপ্রধান