ইসরাইল নিপাত যাক
১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ এএম

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ও গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে এ গণজমায়েত কর্মসূচির আয়োজন করে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট’। গতকাল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ৩টা ৫৫ মিনিটে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেকের মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হয়।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয় মানুষ। মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এ কর্মসূচি সফল করতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের কাছে প্রচারণা চালিয়েছে এবং অর্থ সংগ্রহ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির নেতাকর্মীরা। তাদের ব্যাপক প্রস্তুতিতে বেলা ১২টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এরপর উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশের সব রাস্তা এবং রমনা পার্কে জন¯্রােত ছড়িয়ে পড়ে। উদ্যানের ঠিক পশ্চিম-পূর্ব পাশে তৈরি করা হয় খোলা মঞ্চ। এর সামনে লাল কার্পেট বিছানো হয়।
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ‘ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন সমাবেশে অংশগ্রহণকারী জনতা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী, ইসলামী আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতারা অংশ নেন। এ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকা গতকাল মিছিলের নগরীতে রূপ নেয়। ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে হাজার হাজার মানুষ মিছিল অংশ নেন। ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগানে উত্তাল ছিল ঢাকার রাজপথ। এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুরু করে মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিলের গন্তব্য ছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সকালেই পূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য। দুপুরের পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, কারী আহমাদ ইবনে ইউসুফ আজহারীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিকেল ৪টার দিকে জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর মিছিলের মতো সারা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি প্রকাশকারী জনতা। এতে পুরো ঢাকা ভয়াবহ যাজটের সৃষ্টি হয়। লাখ লাখ নারী-পুরুষের এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ ও যাতায়াতে মিছিলের নগরীতে রূপ নেয় ঢাকা। সবার কণ্ঠে একই সুরÑ ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। জায়নবাদী ইসরাইল, নিপাত যাক-নিপাত যাক। ‘ফ্রম দ্য রিভার টু সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি।
সমাবেশে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। তিনি বলেন, আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা প্রত্যেকটি বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।
সমাবেশে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি কিন্তু আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটি ফিলিস্তিন, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটি গাজা, আমাদের হৃদয়ে বাস করে একেকটি আল কুদস। তিনি বলেন, আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, এই গণজমায়েতে, এই জনতার গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি, আজকের এই মহাসমুদ্র, জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি, আল আকসার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আজকের মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি নিছক কোনো পদযাত্রা নয়। এটি আমাদের এই অঞ্চলের মুসলিমদের ঐক্যের এক নতুন সেতুবন্ধন রচনা করবে ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিসহ ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা ও নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে অঞ্চলটিতে চলমান গণহত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ঘোষণা পত্রে বলা হয়, আজ আমরা বাংলাদেশের জনতা-যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি-সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে। আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেয়া আমাদের জবাব, একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ।
অঙ্গীকারনামায় বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, আল কুদস কেবল একটি শহর নয়, এটি ঈমানের অংশ। আমরা জানি বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয়, আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে এবং আমরা বুঝি জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল। আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই তাহলে আল্লাহ না করুন কাল আমাদের সন্তানরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একসঙ্গে নতুন গাজা তৈরি করবে। গাজা আমাদের জন্য এক আয়না যেখানে আমরা দেখতে পাই কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা। আমরা এই মাটির মানুষ এই মুসলিম ভূখ-ের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য একটি অঙ্গীকার করছি, আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করব প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরাইলের দখলদারত্বকে টিকিয়ে রাখে। আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখ- রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে। আমরা বিভাজিত হবো না কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ক্ষুদ্রঋণ ও গৃহঋণ সুবিধা বিস্তারে আইএফসি'র সঙ্গে চুক্তি

বরগুনায় বিএনপির কর্মীসভায় টিপু- ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেসব অপকর্ম করেছে তা থেকে আমাদেরকে পরিবর্তন হতে হবে

কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা অনুষ্ঠিত

শেখ হাসিনার মোটিভ বানানোর অভিযোগে সংখ্যালঘুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন,আটক ৫ জন

বিড়ালের সঙ্গে খুনসুটি তারেক রহমানের, পশুপ্রেমের প্রশংসায় নেটিজেনরা

সংক্ষিপ্ত সফরে মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক

মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম আনার কারাগারে

বলিউডে সাউথ ইন্ডাস্ট্রির পাঁচজন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত পরিচালক কারা?

গফরগাঁওয়ে মাদরাসার ,স্কুল ও কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বৈশাখী উৎসব ভাতা পায়নি

মোরেলগঞ্জ পৌর বিএনপির সম্মেলনে ফরিদ-মিলন প্যানেল বিজয়ী

নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চারুকলা–ছায়ানটকে ব্যবহার করেছিল আওয়ামীলীগ

নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চারুকলা–ছায়ানটকে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ

নেত্রকোণার আটপাড়ায় ধর্ষিত শিশুটির পাশে দাড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়েরকে অব্যাহতি

ইরাকের শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার হয়নি

আশুলিয়ায় যাত্রীবাহী লেগুনা সড়কের পাশের খোলা ড্রেনে পরে নিহত ২

সিংগাইরে তেলের লড়িতে অগ্নিকান্ডে লড়ি ও মোটরসাইকেল ভস্মীভূত

বাংলা নববর্ষের র্যালিতে উপস্থিত না থাকায় ইবির হলে খাবার বন্ধ

প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠিতে যা বলেছে বিএনপি

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় স্বর্ণের দাম