মেঘনা আলমের ব্যাংক হিসাব তলব
২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম

বহুল সমালোচিত মডেল মেঘনা আলমের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব ও হিসাবের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা (বিএফআইইউ)। গত রোববার সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এই তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় বিএফআইইউ। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানান বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। বিএফআইইউয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, মেঘনা আলমের ব্যক্তিগত তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মেঘনা আলম। এবার তার ব্যাংক হিসাব তলব করলো বিএফআইইউ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই মূলত মেঘনা আলমের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা ধারনা করছে মেঘনার একাউন্টে বিশাল অংকের টাকা লেনদেনের তথ্য থাকতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট হিসাবে মেঘনাকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার জন্য বিশাল অংকের টাকা দেয়া হতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আলদুহাইনের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার আদায়ের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে মেঘনার নেতৃতোব একটি হানিট্র্যাপ চক্র। এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মডেল মেঘনা আলমের সহযোগী দেওয়ান সামির রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। রিমান্ডে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি স্বীকার করেছেন, তারা শুধু সউদী রাষ্ট্রদূতই নয়, আরও কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধেও ‘সুন্দরী নারী’ দিয়ে ফাঁদ পেতে ব্ল্যাকমেইল করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
সূত্র জানিয়েছে, সামির স্পষ্টভাবে কিছু রাষ্ট্রদূতের নামও বলেছেন যাদের টার্গেট করা হয়েছিল। এই চক্রের পেছনে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, যার সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, র-এর হয়ে কাজ করছেন এমন কিছু এজেন্ট বাংলাদেশে সক্রিয়, যারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে মডেলদের ( যেমন মেঘনা আলম) ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় লিপ্ত। এই চক্রের লক্ষ্য শুধু ব্যক্তিগত ব্ল্যাকমেইল নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে দুর্বল করা,
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা এবং বর্তমান সরকারের রেমিট্যান্সনির্ভর অর্থনীতিতে ধস নামানো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চক্র যদি সফল হতো তবে বিদেশে কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্সে বিপর্যয় নেমে আসতে পারত। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসছে যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে। র-এর এই চক্রান্ত সেই ধারাকে বিপর্যস্ত করতেই সাজানো হয়েছিল।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী, মডেল মেঘনা আলমের সঙ্গে ভারতীয় হাই কমিশনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি একাধিকবার ভারত সফরে গেছেন এবং ভারতের স্বাধীনতা দিবসে হাই কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া হাসিনার আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথেও মেঘনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মোমেনকে ব্যবহার করে মেঘনা আলম বিদেশে আদম পাচারও করেছেন। সেই সাথে তিনি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তাদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে অনেক ফায়দা লুটেছেন। সে সময় মেঘনা বেশ কয়েককবার ভারত সফর করেন। এমনকি ভারতের জাতীয় প্রতিটি অনুষ্ঠানে মেঘনা আলম ভিআইপির মর্যাদায় ভারতীয় হাই কমিশন অফিসে উপস্থিত থাকতেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঘনার সাথে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকেরও সুসম্পর্ক ছিল। দুজনের ঘনিষ্ঠ ছবিও দেখানো হয়েছে ওই ভিডিওতে।
এইসব তথ্য মিলিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারণা করছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ মেঘনাকে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে যাতে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্ল্যাকমেইল করে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা যায়। এজন্য তারা মেঘনাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এই চক্রটি শুধু সউদী রাষ্ট্রদূত নয় আরও কয়েকজন কূটনীতিক, উপদেষ্টা এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের টার্গেট করেছিল। এদের অনেকেই হয়তো এখনো ফাঁদে পড়েননি তবে চক্রটির কার্যক্রম থেমে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। সূত্র জানায়, তদন্ত এখনও চলমান এবং সামনে আরও বড় চক্রান্তের চিত্র উন্মোচিত হতে পারে বলে আশা করছেন গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, একটি সুপরিকল্পিত হানিট্র্যাপ চক্র মডেল, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে টার্গেট করে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। সউদী রাষ্ট্রদূতের ঘটনা তার কেবলমাত্র এক খ-চিত্র।
উল্লেখ্য, মডেল মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর একটি বাসা থেকে আটক করে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এরপর তাকে আদালতে হাজির করানো হলে আদালত তাকে এক মাসের আটকাদের দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজনের নামে মামলা করেন ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম। সেই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) অর্থ দাবি করেছেন। ওই মামলায় মেঘনাকে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মামলায় মেঘনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান