ঢাকা   সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৭ কার্তিক ১৪৩১

দেশের অর্থনীতি পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখবে পায়রা বন্দর : বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

Daily Inqilab মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে

১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১০ পিএম

শুরুর ১০ বছরের মধ্যেই পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এখন সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের গভীরতা নিয়ে দেশের সবচেয়ে গভীরতম সমুদ্র বন্দরে রুপ নিয়েছে। ২০১৩ সালে পায়রা বন্দর অর্ডিন্যান্স অনুমোদনের পরে ২০১৬ সালে ৭-৮ মিটার গভীরতায় বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাসের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষে বন্দরের গভীরতা সাড়ে ১০ মিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় পায়রা বন্দর বর্তমানে দেশের গভীরতম বন্দরে রুপান্তরিত হয়েছে। এর ফলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এং ৩২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্যানামেক্স আকৃতির বড় জাহাজ ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার মে. টন হাজার পণ্য নিয়ে সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে।
এদিকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্দরের গভীরতা সাড়ে ১০ মিটার ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ মিটারের উপরের জাহাজ আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো রেকর্ড করে গত সোমবার পায়রা বন্দরের সাড়ে ১০ মিটার গভীর চ্যানেল দিয়ে পটুয়াখালীতে নির্মিত পায়রা তাপবিদুৎ এর পায়রা বন্দরের বিসিপিসিএল জেটির কাছাকাছি অভ্যন্তরীণ নোঙরস্থলে জন্য ৪০ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এসেছে মাদার ভেসেল (জাহাজ)।
গত সোমবার রাতে পায়রা বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান জানান, বাহামাসের পতাকাবাহী ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে ৪০ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিসিপিসিএল জেটির কাছাকাছি অভ্যন্তরীণ নোঙ্গরস্থলে এসে পৌঁছায়। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ‘অরুনা হুলিয়া’ নামের মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী একটি জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার বালিকপানান বন্দর থেকে ৩৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বন্দরের ইনার অ্যাংকরে আসে। সেই জাহাজটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৮৮ মিটার ও প্রস্থ ৩৩ মিটার। যেটি কয়লা খালাস শেষে রোববার ভারতের উদয়পুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। যেটি প্রথম এ বন্দরের ইনার এ্যাংকরে আসা সবচেয়ে বড় জাহাজ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ পায়রা বন্দরের ১০ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে এটিই দেশের গভীরতম সমুদ্র বন্দর।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন থেকে নিয়মিত বড় বড় জাহাজ এ বন্দরে নোঙর করবে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেলজিয়াম ভিত্তিক ড্রেজিং প্রতিষ্ঠান জান ডে নুল বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করে। এতে ৬০ হাজার টন পণ্যবাহী প্যানাম্যাক্স সাইজের জাহাজ সরাসরি বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরের এ চ্যানেলটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রেজিং কাজ চলমান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল অঞ্চলের সুষম উন্ন্য়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক সময়ের অবহেলিত সাগর পাড়ের জেলা পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলে চলছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।
বাংলাদেশের প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপক‚ল রয়েছে। এ সুদীর্ঘ উপক‚লবর্তী এলাকায় অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে। এ চ্যানেল গুলোকে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করার লক্ষে দেশের দক্ষিণ মধ্যবর্তী অঞ্চলে কোনো সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা পূর্বে নেয়া হয়নি। এ অঞ্চলে সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠলে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে, অর্থনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, অবহেলিত এ অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার সার্বিক পরিবর্তন ঘটবে। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পূর্বের সময়কালে ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট ১০ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ চ্যানেলে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্ডিন্যান্স অনুমোদন দেন।
পরবর্তিতে পায়রা বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পায়রা বন্দর প্রকল্পটিকে ফাস্ট ট্রাক প্রজেক্ট এর অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালে পায়রা সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের জন্য ১৯টি কম্পনেন্ট সম্পন্ন একটি কনসেপচুয়াল মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়। যার ১২টি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জিটুজি অর্থায়ন এবং সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপর ৭টি কম্পোনেন্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শুরুর তিনবছরের মধ্যেই বিগত ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পন্য খালাসের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত পায়রা বন্দরে ৩১০টি বৈদেশিক জাহাজ, ১ হাজার ৫৪টি লাইটারেজসহ মোট ১ হাজার ৩৫৫টি জাহাজ পণ্য খালাস করেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। পায়রা বন্দরে গত ২ বছরে ৫১৬ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে, এ সময় ১৮৫টি বিদেশি জাহাজ ভিড়েছে এই বন্দরে। এর মধ্যে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
পায়রা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ৬৪টি বিদেশি জাহাজ এবং দেশীয় ১৭৬টি লাইটার জাহাজে মালামাল পরিবহনে ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। আর ২০২২ সালে ১২১টি বিদেশি ও ৮৮৫টি লাইটার জাহাজে আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার রাজস্ব। ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদে ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্পের ৬৫৩৫.২০ কোটি টাকা ব্যায়ের প্রকল্পের পাশাপাশি বন্দরের কাজকে দ্রæত এগিয়ে নিতে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে ৪ হাজার ৩৭৪.৪৭ কোটি এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (১ ম সংশোধিত) প্রকল্পে ৪৫১৬.৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
এদিকে পায়রা বন্দর আগামী দক্ষিণ এশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ‘ইকোনমিক হাব’ হিসেবে যে ভ‚মিকা রাখবে তার বাস্তবতা তুলে ধরে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এ প্রতিবেদক সহ গণমাধ্যমের সামনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে যা বলেন তা তুলে ধরা হলো:
২০২৩ সালকে পায়রা বন্দরের জন্য কিভাবে দেখছেন : ‘পায়রা বন্দর এখন আর স্বপ্ন নয় এখন বাস্তব, ২০২৩ সালের শুরুতে বলেছিলাম ২০২৩ সাল হবে পায়রা বন্দর সাল, আজ ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পনের মাধ্যমে বর্তমানে বন্দরের গভীরতা ১০.৫ মিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় তার পূর্নতা লাভ করেছে। একের পর এক সুখবর চলবে পায়রা বন্দরকে ঘিরে পুরো বছর জুড়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জাহাজ ৫০ হাজার অধিক মে. টন মালামাল নিয়ে এপ্রিলেই পায়রা বন্দরে আসছে।বাংলাদেশে ৩টি সমুদ্র বন্দরের মধ্যে বর্তমানে পায়রা বন্দর সবচেয়ে গভীরতম সমুদ্রবন্দর। গত ১ বছরে ৩ শিফটে ২৪ ঘণ্টার কঠোর পরিশ্রম, মেধা শ্রম এবং সকলের সহায়তায় সকল সংশয়, অপপ্রচার কাটিয়ে সফল ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পনের মাধ্যমে পায়রা বন্দর এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীরতম চ্যানেল। পায়রা বন্দর এখন বাংলাদেশের অহংকার, প্রতিষ্ঠার মাত্র ৭ বছরের মধ্যেই এত গভীরতম বন্দর তৈরি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক দৃঢ়তা এবং দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে পায়রা বন্দরের প্রতি তার ভালবাসা এবং সহযোগিতার কারণেই বন্দরের এই সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। ফাস্ট টার্মিনালের কাজ চলতি মে মাসে সম্পন্নে পরে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।
পায়রা বন্দর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক লাভের বিষয় : বন্দরের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান হবে, অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। রেভিনিউ ৮-১০ গুন বৃদ্ধি পাবে এ বছরেই এবং সার্বিকভাবে বিদেশি অর্থ উপার্জনের জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম হবে পায়রা বন্দর, যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও মজবুত করবে। বন্দরের চ্যানলের নাব্যতা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কারণে ইতোমধ্যে প্রচুর দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেছেন লিখিত ভাবে। তারা একাধিক টার্মিনাল, শিল্পাঞ্চল, সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, ওয়েল রিফেইনারীসহ বড় ফ্যাক্টরি ইন্ডাস্ট্রি করতে চাচ্ছেন।
বন্দর ব্যবহারের দিক দিয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে : উন্নয়নের জন্য প্রাণ ভোমরা হচ্ছে বন্দর, বন্দর না থাকলে সাধারনত শিল্পায়ন হয় না, বিনিয়োগ হয়না, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে না। আমদানি-রফতানি করতে না পারলে সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনা। আর শিল্পের কাঁচামাল আসতে পারে সেখানে মাল তৈরি হয়ে আবার সে বন্দর ব্যববহার করেই অন্যান্য জায়গায় যেতে পারে। বন্দর সকল সুবিধা থাকলে সেখানে বিনিয়োগকারীরা আসে, শিল্পায়ন হয়, দেশি-বিদেশি বিনোয়গকারীরা আসে। আর সেখানে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ডের এবং গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একটি চমৎকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্পূর্ণ সহায়ক ভ‚মিকা রাখছে।
পায়রা বন্দরের সম্ভাব্যতা নিয়ে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিষয়ে: ঘোষণার সাথে সাথে বিদেশি জাহাজ আসছে। ষড়যন্ত্রকারী একটি গ্রæপ অপপ্রচারে লিপ্ত ছিল এখানে বন্দর করা সম্ভব হবে না, ড্রেজিং করা সম্ভব হবে না, নাব্যতা থাকবে না সিলটেশন পড়ে ভরে যাবে। একথা গুলো বলে আমাদের সহ ব্যবহারীকারীদের, বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা হতো। আমরা সব অপপ্রচারের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে প্রমাণ করেছি আমরা পারি। আমরা প্রমাণ করেছি এটি একটি সুন্দর বন্দর, এটা প্রমাণিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর, আধুনিক সক্ষম বন্দর হচ্ছে পায়রা। আর সেই সক্ষমতার অন্যতম প্রতিক হচ্ছে সবচেয়ে গভীরতম চ্যানলে আর সেটা রয়েছে পায়রা বন্দরে এখানে সবচেয়ে বড় জাহাজগুলো আসতে পারবে। তিনি মহান আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন সকল বাধা বিপত্তি এড়িয়ে আমাদের কাছে একটি সুন্দর চ্যানেল উন্মুক্ত হয়েছে।
বন্দরের ক্যাপটিাল ড্রেজিংয়ে রিজার্ভের টাকার বিনিয়োগ এবং বন্দরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সাফল্যের বিষয়ে : ক্যাপিটাল এবং মেইনটেইন্যান্স ড্রেজিং দুটি পার্ট। দুটির জন্য সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হলো, মেইনটেইন্যন্স ড্রেজিং শুরু ২০২৪ সাল এপ্রিল পর্যন্ত চলবে চুক্তি অনুযায়ী। পরে বন্দরের নিজস্ব উদ্যোগে চলবে, সারা বছরই চলবে ছোট আকারে নাব্যতা ধরে রাখার জন্য।
‘বাংলাদেশ ডেভোলমেন্ট ফান্ড’ সেই ফান্ড ফরেন রিজার্ভ থেকে এসেছে এবং পায়রা বন্দর ধাপে ধাপে ২ পারসেন্ট ইন্টারেস্টে ফেরৎ দিবে। তিন দৃঢ়তার সাথে বলেন, পায়রা বন্দর ইতোমধ্যে তার নিজস্ব পায়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিনিয়ত রাজস্ব আদায় রয়েছে। আমরা আশা করছি ইনশাআল্লাহ আগামী বছর সরকারের কাছ থেকে কোনো অর্থ লাগবে না। আমরা নিজস্ব রাজস্ব আয় দিয়েই চলতে পারবে। পায়রা বন্দর যে রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা প্রাথমিক হিসাব-নিকাশে ইনশাআল্লাহ যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে তা অচিরেই উঠে আসবে। তবে বন্দরের পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ যে খরচ এই দুটি আমরা বন্দরের রেভিনিউ থেকে ব্যয় করতে পারবো এর বাইরেও ভবিষেৎ অতিরিক্ত রেভিনিউ আসবে ইনশাআল্লাহ্ দেশের কাজে ব্যয় হবে। একটি বন্দর সরাসরি ফিনান্সিয়াল লাভের চেয়ে বড় লাভ হলো ইকোনমিক্যাল জোন গড়ে ওঠা। এই বন্দর হওয়ার জন্যই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে, এখন ১ হজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, ভবিষেৎ ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এখন ঢাকা শহরে যাচ্ছে সেখান থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কলকারখানা চলছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে। বন্দরের ডায়রেক্ট থেকে ইনডায়রেক্ট বিভিন্ন ইকোনমিকাল গেন থাকে। বন্দরের কিছু জিনিস আছে সড়াসড়ি রেভিনিউ জেনারেশন ইনকাম, আর কিছু আছে বন্দরকে কেন্দ্র করে পুরো দেশের মধ্যে একটি ইনকাম। শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, বিদুৎতায়ন এ সবকিছুই এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠবে প্রচুর ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে গড়ে ওঠবে। এ জন্যই বন্দরের হিসাব-নিকাশটা কিন্তু শুধু এককভাবে টাকা দিয়ে হিসাব-নিকাশ করলে চলবে না এটা সমষ্ঠিগতভাবে সার্বিকভাবে হিসাব-নিকাশ করতে হবে। বন্দর যে কোন জাতীর জন্য একটি লাভবান জিনিস, একটি ভাগ্যের বিষয়। একটা সমুদ্রবন্দর থাকা মানে তাকে কেন্দ্র করে সকল ধরনের উন্নয়ন হওয়া ,একটা সমুদ্রবন্দর থাকা মানে ওটাকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ আসে-তার বাস্তব উদাহরন হচ্ছে ইতোমধ্যে আমাদের কাছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মৌখিক এবং লিখিত ভাবে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বন্দরের ইনকাম দিয়ে রিজার্ভ পরিশোধ এবং ফাস্ট টার্মিনাল থেকে মালামাল সরবরাহের বিষয় : মাত্র আমরা ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট চলছি পুরোপরি ব্যবসায়িক দিকে প্রবেশ করেনি, এতদ্বসত্বেও গত বছরেই আমরা এবং কাস্টমস্ দু’পক্ষ মিলে ৮০০ কোটি রেভিনিউ ইনকাম করেছি দেশের জন্য। গতবছর রেকর্ড পরিমাণ দেশি-বিদেশি প্রায় ৮ শ’ মতো জাহাজ এসেছে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করে এবং রেভিনিউ ইনকাম বেড়েছে ৩ গুন। শুরুটা অত্যন্ত ভালো হচ্ছে ২০২৩ সালে আশাকরি ১০-১২ ভাগ বেশি ইনকাম হবে, জাহাজ আসছে বেশি করে যেহেতু ক্যাপিটাল ড্রেজিং হয়ে গেছে।
পায়রা বন্দরের ব্যবহারে অগ্রাধিকারের বিষয়ে : যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তারা তাদের স্বার্থেই এ বন্দরেই জাহাজ নিয়ে আসবে কেননা এ বন্দরের গভীরতা সবচেয়ে বেশি সুতরাং একসাথে বেশি মাল আনতে পারবে খরচ কম পড়বে। পায়রা বন্দর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট পোর্ট হিসেবে স্মার্ট সার্ভিস দিচ্ছে, এখানে কোন যানজট নেই, মাল আনার সাথে সাথে আনলোড করে চলে যাচ্ছে। ট্যারিফ রেট কম থাকায় অল্প টাকায় সর্বোচ্চ বেশি মাল আনতে পারছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও এ বন্দর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে গভীরতম চ্যানেল হওয়ায় সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে মাল আনা এবং এখান থেকে বিদেশে পাঠানো। দ্বিতীয় সুবিধা হচ্ছে সবচেয়ে চৎমকার নদী পথ থাকায় ঢাকা সবচেয়ে কাছাকাছি, এছাড়া নর্থ বেঙ্গল পর্যন্ত সবচেয়ে কাছে হচ্ছে পায়রা বন্দর। বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান এই দেশগুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি হচ্ছে পায়রা বন্দর সুতরাং পায়রা বন্দর তার বিভিন্নমুখী সুবিধার কারণে বেশি ব্যবহার হবে যার কারণেই পায়রা বন্দরই বাংলাদেশের সার্বিক ভাগ্য পরিবর্তন করবে বলে আশা করেন। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে পায়রা বন্দর সরাসরি সড়কপথে সংযুক্ত হয়েছে। পায়রা বন্দরের সাথে সড়কপথ, নদীপথ, সমুদ্রপথের পাশাপাশি পদ্মা সেতুর রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করার সমীক্ষা চলছে। এছাড়াও পায়রা বন্দরকে ঘিরে বর্তমান সরকার এখানে আধুনিক একটি বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা নিয়ে প্রাথমিকভাবে দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিমান পর্যটন মন্ত্রনালয় ওসিভিল এভিয়েশন কাজ করছে। একটি বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরে ভবিষেৎ একটি ৫ ডায়মেনশনাল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে যা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টিকারী বন্দর হিসেবে গড়ে উঠবে। পায়রাই আগামীর বাংলাদেশ, পায়রাই আগামীর ভবিষৎ, পায়রা শুধু দক্ষিণাঞ্চলকে নয় বাংলাদেশকেই পরিবর্তন করে ফেলবে। সংশয়ের কিছু নেই, একটি জায়গায় কাজ হলে ছোট খাট কিছু ভুল হতে পারে, মাঝে মাঝে হিসেব গড়মিল হতে পারে কিন্তু তার মানে এই নয় এজিনিসটা এখন চলে গেলো। বন্দর চালানো মানে এটি একটি শহর, হিউজ-ম্যাগা এটি রাতারাতি গড়ে ওঠেনা, অনেক সময় লাগে কিন্তু পায়রা বন্দর শুরু মাত্র ৮-৯ বছরে কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার
দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ
শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান
আরও

আরও পড়ুন

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ

ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান

ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান

আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড

আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড

পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত

পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত

ফের রাজপথে

ফের রাজপথে

মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি

মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি

বিশ্ব সেরা স্কুল

বিশ্ব সেরা স্কুল

দুঃসংবাদ

দুঃসংবাদ

৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ

৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ

তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়

তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়

শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান

শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান

সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর

সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর

সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম

সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!

ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!

যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক

যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক