ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র কাবা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৬ মে ২০২৩, ০৬:১২ পিএম | আপডেট: ২৬ মে ২০২৩, ০৬:১২ পিএম

আল্লাহর পবিত্র ঘর খানায় কাবা জিয়ারতের মৌসুম সন্নিকটে। সারা বছর ধরে মুসলমানগণ এ মৌসুমের অপেক্ষা করে হজ পালনের নিমিত্তে। প্রত্যেক সমর্থবান মুসলমানের উপর হজ পালনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরজ করছেন। আল্লাহতায়ালা কাবাঘরের স্থান নির্ধারণ করেছেন পাথুরে পাহাড় ও স্বল্প পানিযুক্ত একটি কর্ম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের জাগরণের ও দৃঢ়তার মাধ্যম হিসেবে। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বনি আদম যেন এ ঘরমুখি হয় এবং তাদের মনকে এদিকে কেন্দ্রীভূত করে ও এ ঘরের চারদিকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই- এ কথার স্বাক্ষ্য দেয়। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য কাবা ঘর অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। এ ঘরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আজ মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন।

তিনি পবিত্র কাবা ঘরের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালা চাইলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ও সুন্দরতম স্থানে কাবাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। তিনি এ ঘরের পাথরগুলোকে বর্ণিল রং এ সুসজ্জিত করতে পারতেন। চাইলে তিনি নিজে আসমানী সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ করে কাবাকে জাকজমকপূর্ণ হিসেবে দৃশ্যমান করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ তার বান্দাদের নানা বিপদ-আপদের মধ্যে পরীক্ষা করেন। তিনি চান তারা নানা অভাব-অনটনের মধ্যেও তার ইবাদত করুক। তাই তিনি তাদেরকে দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত করেন। এসব কিছুই দেয়া হয়েছে তাদের মন থেকে সব ধরনের অহংকার ও গরিমা দূর করার এবং তাদেরকে বিনয়ী করে তোলার জন্য। তার দয়া ও ক্ষমা সহজতর করার উপায় হিসেবে। ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র এ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে এর মাধ্যমে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময় (সূরা আল ইমরানের: ৯৬)। এ ঘরটিকে আমাদের জন্য ‘নিয়ামত’ বলছি এ জন্য যে, এ ঘরের সাথে স্মৃতিতে জড়িত প্রথম মানব এবং নবী হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত দুই লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বরের স্মৃতি এবং কিছু জান্নাতি বস্তু এখানে আল্লাহ নিদর্শন হিসেবে রেখেছেন। এ ছাড়া কিছু স্থানকে খাস করে দোয়া কবুলের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঘর বরাবর ওপরে অবস্থিত বাইতুল মামুর। সেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করেন। যারা একবার তাওয়াফ করেন, তারা কিয়ামত পর্যন্ত দ্বিতীয়বার সুযোগ পাবেন না; কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলে বার বার কাবা তাওয়াফ করতে পারবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা প্রতিদিন বায়তুল্লাহর ওপর ১২০টি রহমত নাজিল করেন, এর মধ্যে ৬০টি রহমত শুধু তাওয়াফকারীদের জন্য, ৪০টি মসজিদুল হারামের মধ্যে নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং অবশিষ্ট ২০টি ওইসব (সৌভাগ্যবান) লোকের জন্য যারা (আবেগ ও ভালোবাসায়) বায়তুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকে (বায়হাকি)। তাই আসুন আমরা যারা সমর্থবান রয়েছি তারা সুযোগ পেলেই আল্লাহ মননীত এ পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করি এবং আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হই।

খতিব বলেন, বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জাতির পিতা যার খান্দান থেকে সর্বশ্রেষ্ট মানব রাসূলে কারিম (সা.) এর আগমন তিনি হলেন হযরত ইব্রাহীম (আ.)। পবিত্র হজ ও কোরবানীর পরতে পরতে তাঁর স্মৃতি জড়িত। তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানের নেতাগণের মধ্যে অন্যতম। আজ সারাবিশ্ব জুড়ে বিভিষিকা, ন্যায় নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অভাবে সাধারণ জনগণের জীবন ওষ্ঠাগত। নেতাদের পাপের ফলে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত আজাব ও গজবে জনসাধারণ আষ্ঠে পিষ্ঠে যাচ্ছে। আমাদের উচিৎ নেতা নির্বাচনের সময় অবশ্যই লক্ষ্য করা, আমার পছন্দের নেতার মাঝে আল্লাহভীরুতা আছে কিনা, তিনি ধৈর্যশীল কিনা, হিংসা অহংকার মুক্ত কিনা, মোখলেস ও আবেদ কিনা, অন্যের কষ্টে তার হৃদয় কাঁদে কিনা, সহানুভ‚তিশীল কিনা। সর্বপরি সফল মুসলিম নেতাগণের বৈশিষ্ট তার মাঝে আছে কিনা। তাহলেই পুনরায় সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামে হাদিস অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। পবিত্র কোরআনুল কারীমের পরেই হাদিসের স্থান । ইসলামী শরীয়তে আহকাম সাব্যস্ততায় দলিল হিসেবে হাদিসের স্থান দ্বিতীয়। মুসলমানের জন্য আবশ্যকীয় ফরজ বিষয় নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ অন্যান্য বিষয়ের বিধানাবলী ও বহু মাসয়ালা মাসায়েলের সমাধান হাদিসের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে । এজন্যই ফকিহগণ বলেছেন, হাদিস তথা সুন্নাহ ব্যতিত ইসলাম অসম্পূর্ণ । কারণ পবিত্র কোরআন ও হাদিস তথা সুন্নাহের সমন্বিত বিধানই ইসলামী শরীয়ত।

খতিব বলেন, রাসূল (সা.) এর কথা, কার্য্য, বাণী ও মৌন সমর্থনকে ইসলামী পরিভাষায় হাদিস বলে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন এবং হাদিস তথা সুন্নাহ উভয়ের উপর ঈমান আনা, বিশ্বাস স্থাপন ও আমল করার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন । অমান্যকারীকে পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী বলে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) এর অনুসরণ কর। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত নং ৩৩)। অন্য আয়াতে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা.) কোন বিষয়ের ফয়সালা করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার নেই । আর যে ব্যক্তি আল্লাহর (কোরআন) ও রাসূলের (হাদিস তথা সুন্নাহ) এর অমান্য করবে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৩৬)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে রাসূল (সা.) আপনার প্রভ‚র শপথ। যে পর্যন্ত তারা পরস্পরে বিরোধের বিষয়ে আপনাকে বিচারক হিসাবে মেনে না নিবে এবং আপনার ফয়সালা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করবে ততক্ষণে তারা মুমিন হতে পারবে না ।(সূরা নিসা, আয়াত নং৬৫)। উল্লেখ্য হাদিস না মানলে পবিত্র কোরআনকেও মান্য করা হয় না । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর (হাদিসের )অনুসরণ করবে সে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর অনুসরণ করবে। ( সূরা নিসা, আয়াত নং ৮০)। অতএব উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও কোরআনের আরও বহু আয়ত দ্বারা প্রমাণিত হাদিস ঈমান ও ইসলামী শরীয়তের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাদিসকে কেউ অস্বীকার করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে । কাজেই একজন মুসলমানের হাদিস অস্বীকার করার কোনই সুযোগ নেই। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি   - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ