এই দিনে সংসদ প্রাঙ্গণে রক্তাক্ত হয়েছিলেন ফারুক
০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম
জয়নাল আবদিন ফারুক। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় রাজপথের লড়াই সংগ্রাম আর আন্দোলনে এক পরিচিত নাম।
বিএনপি তথা চার দলীয় জোট সরকারের সময়সহ বিভিন্ন মেয়াদের ধানের শীষ প্রতীকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নোয়াখালীর এই সন্তান দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও তুখর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
তবে তার লড়াকু রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ১১ সালের ৬ জুলাই দিনটি ছিল সবচেয়ে বীভৎস্য ও বেদনাদায়ক।
আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে এই দিনেই সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পুলিশের লাঠি পেটায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক।
বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে তৎকালীন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন তার উপর চড়াও হোন।
সাবেক চীফ হুইপ ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, ২০১১ সালের আজকের এই দিনে সকাল ৬ টার দিকে জয়নাল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিরোধী দলের ১৫-২০ জন সংসদ সদস্য মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সামনে জড়ো হোন। ভোরবেলা তারা হেটে সংসদ ভবন এলাকা থেকে ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছান। পরে ফার্মগেট থেকে তারা আবার মানিক নিয়ে এভিনিউয়ে ফিরে যান। এ সময় হঠাৎ করে একটি বাস লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়।
পরে তৎকালীন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ডিসি ইমাম হোসেন, সহকারি উপকমিশনার হারুনুর রশিদ ও মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সংসদ সদস্যদের সামনে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জয়নাল আবদিন ফারুকের কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশের ডিসিকে উদ্দেশ্য করে ফারুক বলেন, 'তুই কে তুই? কি করবি? এ সময় পুলিশ জয়নাল আবদিন ফারুকের দিকে তেরে যায়। আরো কয়েকজন পুলিশ তার দিকে এগিয়ে গেলে ধস্তাধোস্তি শুরু হয় এবং তিনি পড়ে যান। পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাকে লাথি মারেন এবং তাকে ধরে টানা হ্যাচরা করতে থাকেন। এ সময় ফারুকের গেঞ্জি খুলে যায়। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্যের লাঠির আঘাতে তার মাথা ফেটে যায়। সকাল থেকে ফারুকের ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকলেও পরে ধস্তাধস্তির সময় সেটি খুলে যায়।
ফারুকের মাথায় রক্ত দেখে নারী সংসদ সদস্যরা তাকে নিয়ে ন্যাম ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ আবার এগিয়ে এলে জয়নাল আবেদিন আত্মরক্ষায় ন্যাম ভবনের দিকে দৌড় দেন। পুলিশ ও তার পিছু নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে উপর হামলা চালায়। পুলিশ জয়নাল আবদিন ফারুককে চ্যাং দোলা করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান।
এরপরে ফারুককে উদ্ধার করে নারী এমপি পাপিয়া আশরাফিয়ার ন্যাম ভবনের বাসায় নিয়ে যান। এরপর কয়েক ঘন্টা পর সকাল দশটার দিকে এম্বুলেন্সে করে তাকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা জন্মগ্রহণ করেন জয়নাল আবদিন ফারুক। নোয়াখালী ২ ও নোয়াখালী ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে ১৯৯১ সালে পঞ্চম ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ১৯৯৬ সালের জুন মাসের সপ্তম ২০০১ সালে অষ্টম ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জয়নাল আবদিন ফারুক।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিরোধীদলের চিফ হুইপ নিযুক্ত হন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ১০১১ সালের ৪৮ ঘন্টা হরতালের ডাক দেয় সংসদের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। হরতালের প্রথম দিন ৬ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হামলায় গুরুত্ব আহত হন ফারুক।
বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পুলিশের তৎকালীন তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রশিদ আহত হন।
এ ঘটনায় ফারুককে মারধর ও হত্যার অভিযোগ এনে পুলিশের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে মামলা করেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজাম। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দায়ের করা মামলায় ৩০ জন পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হয়। মামলার তদন্তকারীরা ফারুককে দোষারোপ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে মহানগর হাকিম আদালত বরখাস্ত করে দেন।
এরপর সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের করা নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই গ্রেফতার হন ফারুক এর দশ দিন পর ১৩ই জুলাই ফারুককে তিন মাসের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে বিদেশ ভ্রমণের কোনো রকমের বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
২০১৫ সালে বিএনপি'র হরতাল অবরোধ চলাকালে নাশকতার অভিযোগে জয়নাল আবদিন ফারুক এর বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৭ সালের ২ জুলাই দুটি মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়। অপর চারটি মামলায় তার জামিন আবেদন নাচোক করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নূর নাহার ইয়াসমিনের আদালত।
২০১৭ সালের ১৮ই জুলাই ওই চার মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ২০ জুলাই কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন ফারুক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর নোয়াখালী ২ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুকের গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। ফারুক হামলার অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও সেনবাগ উপজেলা চেয়ারম্যান সহ বিএনপি ভাঙচুর করা হয়।
এত সবকিছুর পরেও এই প্রতিকূল রাজনৈতিক সময়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে রাজপথের লড়াই সংগ্রামে বরাবরের মতোই অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন জয়নাল আবেদিন ফারুক। দীর্ঘ দিন দল ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দাপটের সঙ্গেই দেশের রাজনীতিতে বিরাজমান তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ