বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা প্রদানকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট বারে ভাঙচুর হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোল ও পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপিপন্থি নারী আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনার পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা নিজেদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করতে গেলে তাদের মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। পক্ষান্তরে ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, দুপুর দেড়টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছরের দন্ড ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদন্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন তারা।

অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ‘নৈরাজ্য’র প্রতিবাদে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরাও সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দুপুর পৌনে ২ টার দিকে সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল মুখোমুখি হয়। পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ চলাকালে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালের কক্ষ ভাঙচুর করেন। তার নেমপ্লেট খুলে ফেলেন। পরে বারের সভাপতি মমতাজউদ্দিন ফকিরের কক্ষের নেমপ্লেটও খুলে ফেলা হয়। এ সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ ঘটনার পর বারের সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, কাজল ও সজলের নেতৃত্বে আমাদের আইনজীবীদের ওপর হামলা হয়েছে। সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন তারা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে বের হওয়ার সময় আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা আমাদের এক নারী আইনজীবীর ওপর হামলা করেন। তাকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আরও মারমুখি আচরণ করেন। ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তারা নিজেরা ভাঙচুর করে উল্টো আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

ঘটনার পর পর বিএনপিপন্থি অ্যাডভোকেট মোসা: জেসমিন জাহান করিম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করতে যান। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মমতাজউদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল, সাবিনা সুলতানা মলিসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করতে যান। কিন্তু শাহবাগ থানা পুলিশ তাদের মামলা গ্রহণ করেনি।

এদিকে তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করেন তারা। এ সময় তাদের বিভিন্ন সেøাগান দিতে দেখা যায়।

গত বুধবার বিশেষ জজ আদালতের দেয়া এ রায়কে ‘ফরমায়েশি রায়’ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবিও জানান আইনজীবীরা। এ ছাড়া তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে চলমান সব মামলা মিথ্যা দাবি করে প্রত্যাহারের দাবি জানান আইনজীবীরা।

প্রসঙ্গত জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদন্ড এবং তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। গত ২ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আসাদুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।