নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যে কারণে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার ফুরাচ্ছে না?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

রাশিয়ার কাছে যেন বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ সরকারের ভাষ্যমতে, রাশিয়ার ওপর এটি তাদের ‘সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা’। এটি আরোপ করা হয়েছে তুরস্ক, দুবাই, স্লোভাকিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে। -বিবিসি বাংলা

 

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লেভারলি বলেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে এবং বর্তমানে ধুঁকতে থাকা প্রতিরক্ষা খাতকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে পুতিনের যে সরবরাহ লাইন রয়েছে, সেই জাল গুটিয়ে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু বিষয় হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরেও এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক যন্ত্রাংশ ও রসদ সংগ্রহ করে যাচ্ছে রাশিয়া।

 

এটি কীভাবে ঘটছে তার ব্যাখ্যা বেশ জটিল। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে মূলত পশ্চিমা প্রযুক্তি, বিশেষ করে মাইক্রোচিপের মতো ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হস্তগত করার ব্যাপারে রাশিয়ার সক্ষমতায় কখনো ভাটা না পড়া। ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার ভাণ্ডারের বেশিরভাগ অস্ত্রেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ইসরায়েল ও চীনে তৈরি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

 

কিয়েভের কেএসই ইনস্টিটিউট এবং রুশ নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইয়েরমাক-ম্যাকফ্যল গত জুন মাসে জব্দ করা ৫৮টি রুশ অস্ত্র বিশ্লেষণ করে সেগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৫৭টি পৃথক বিদেশি যন্ত্রাংশ দেখতে পায়। এগুলোর প্রায় অর্ধেকই ছিল মাইক্রোচিপ ও প্রসেসর এবং সেগুলোর প্রায় তিন ভাগের দু’ভাগ মার্কিন কোম্পানির তৈরি। শুধু তাই নয়, তালিকার শীর্ষ পাঁচটি কোম্পানির সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের, যার মধ্যে রয়েছে অ্যানালগ ডিভাইসেস, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট এবং ইন্টেল।

 

এই গবেষকরা ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরো মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার সময় থেকে রুশ অস্ত্রশস্ত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও উপাদানগুলো খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখান থেকেও একই তথ্য পেয়েছেন। এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক যন্ত্রাংশগুলোর বেশিরভাগের ওপরই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ থাকায় রাশিয়া কোনো পশ্চিমা সরবরাহ সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি সেগুলো কিনছে না। পরিবর্তে তৃতীয় বেশ কিছু দেশের একটা বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ কিনছে তারা। যেমন- এ বছর এপ্রিল মাসে নিকেই কোম্পানি জানতে পারে, ৭৫ শতাংশ মার্কিন মাইক্রোচিপ হংকং বা চীনের মাধ্যমে রাশিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

 

নিকেই-এর অনুসন্ধান দলটি জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ছোট বা মাঝারি আকারের কিছু সরবরাহ সংস্থা গড়ে উঠেছে, যারা কখনো কখনো হংকং-এ নাম ও পরিচয়বিহীন অফিস থেকে কার্যক্রম চালিয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কার্যত বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাশিয়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো কিনেছে, যেমন- দেশটির মহাকাশ কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য।

 

কেএসই এবং ইয়েমাক ম্যাকফ্যল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার ক্রয়চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বলে দেখা গেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। যেমন- চেক প্রজাতন্ত্র, সার্বিয়া, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, তুরস্ক, ভারত, চীন প্রভৃতি। যুক্তরাজ্য সম্প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে এটি পরিষ্কার যে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা এ ধরনের যন্ত্রাংশ বা সামরিক উপাদান সরবরাহে তৃতীয় দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।

 

তুরস্কের যে দুটি সংস্থার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলো হলো- তুর্কিক ইউনিয়ন এবং আজু ইন্টারন্যাশানাল। ইউক্রেনে রুশ সামরিক তৎপরতার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোইলেকট্রনিক্স রাশিয়ায় রপ্তানিতে তাদের ভূমিকা থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অস্ত্রচুক্তির চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তালিকাভুক্ত হয়েছেন আশত কৃতিশেভ নামে স্লোভাকিয়ার একজন নাগরিক।

 

গত মে মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ ৩৮টি ‘সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ’র তালিকা যৌথভাবে প্রকাশ করে এবং সংস্থাগুলোকে এই মর্মে হুঁশিয়ার করে দেয় যে, এসব যন্ত্রাংশের চূড়ান্ত গন্তব্য যেন রাশিয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সার্কিট, সেমিকন্ডাক্টার, লেজার এবং দিকনির্দেশক যন্ত্রপাতি।

 

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, যদিও রাশিয়া এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেমিকন্ডাক্টার আমদানি করতে পারছে, কিন্তু সেগুলো সবসময় উন্নত মানের নয়। এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের শেষের দিকে রাশিয়ার সেমিকন্ডাক্টার আমদানি বাড়তে শুরু করলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ সেই পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
১০০ টাকা ঘুষ খেলেও চাকরি থাকবে না: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ