বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হতে হবে ব্রিকসকে: প্রধানমন্ত্রী
২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৬ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে এবং প্রতিক্রিয়ার সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের এই বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসাবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি- আমাদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সময় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে আবির্ভূত হবে। আমাদের শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে- আমাদের জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনই পরাজিত হবে না।
দক্ষিণক আফ্রিকার জোহানেসবার্গের (২৪ আগস্ট) স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসাও এ সংলাপে বক্তব্য রাখেন।
ব্রিকস প্লাস ডায়ালগের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে কুশল বিনিময় করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস-প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সউদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুশল বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে একটি ফটোসেশনেও যোগ দেন।
গ্লোবাল সাউথ-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত। সার্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে সব ধরনের হুমকি, উস্কানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে একসাথে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য প্রত্যেকের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান ব্রিকস চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ আগস্ট জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকস দেশগুলোর ঐতিহাসিক ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছে। এর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ইউএনজিএ-তে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উদীয়মান বিশ্বে আমাদের জন্য, আমাদের ভাগ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
তিনি (বঙ্গবন্ধু) পঞ্চাশ বছর আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তা এখনও সত্য বলে মনে করেন ।
প্রধানমন্ত্রী রামাপোসাকে তার আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার স্নেহ ও আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ব্যক্তিগত সংযুক্তি অনুভব করছি। আমি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫তম বার্ষিকীতে আমাদের উদযাপনে তার যোগদানের কথা স্মরণ করছি।
ম্যান্ডেলার মতো, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জাতির জন্য ত্যাগের জীবন যাপন করতেন, তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি ১৩ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বর্ণবাদকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে নিন্দা করেন এবং জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া ও ফিলিস্তিনকে উপনিবেশমুক্ত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার অনুসরণ করে গ্লোবাল সাউথের সাথে আমাদের সংহতি পুনর্নিশ্চিত করতে আমরা এখানে ব্রিকস আউটরিচে এসেছি। আমরা বিশ্বের সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বের মনোভাব বজায় রাখি, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং জলবায়ু সংকট থেকে আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই।
বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৬ সালে ৪১.৫% থেকে দারিদ্র্য কমিয়ে ২০২২ সালে ১৮.৭% এ নিয়ে এসেছি। আমরা একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫.১% থেকে ৫.৬% কমিয়েছি।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সবর ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছে এবং বিনামূল্যের সামাজিক আবাসন প্রকল্প আশ্রয়ণের অধীনে গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার সারা দেশে ডিজিটাল গণ অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০৮% সেলুলার মোবাইল সংযোগে অ্যাক্সেস আছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি। গত অর্থবছরে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমস ১১১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন রেকর্ড করেছে। এতে অন্যদের সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ মহিলারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি এবং গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর।
তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে, আমরা ১০০ মিলিয়ন মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি, যেখানে সমস্ত লেনদেন অনলাইনে হয়। সরকারি কর্মীরা পেনশন সুবিধা ভোগ করে। আমাদের সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য হল ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ'’ গড়ে তোলা।’
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে, এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের শেয়ারের যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামো, শিল্প এবং ক্লিন জ্বালানি খাতে আমাদের বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য সম্ভাব্য অর্থায়নের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আর্থিক নীতি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের অবশ্যই কার্যকর বিকল্প থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়- নিয়োজিত থাকতে পেরে বাংলাদেশ গর্ববোধ বোধ করে।
মিয়ানমার থেকে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফ্রিকায় শরণার্থী-আশ্রয়দানকারী দেশগুলো এর ভার বুঝতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মহাদেশের সাথে খাদ্য উৎপাদন, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়ে আমাদের দক্ষতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, সাইবার-অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং মোকাবেলায় সহযোগিতা বাড়াতে পারি। পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উন্নীত করার জন্য আমাদের আকাশ ও সামুদ্রিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!
রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার
সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
৪২ ঘণ্টা পর কর্ণফুলী নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ