জনগণ চাইলে থাকবো, না চাইলে অসুবিধা নেই : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৫ এএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৫ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেয়ার সময় তিনি বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথানত করেনি আর করবেও না। গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।

ডেপুটি স্পীকার এডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে বদলে গেছে, দেশের মানুষ ভালোভাবে বসবাস করছে, উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করছে-এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। টানা তিন মেয়াদে সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আমরা দেশের এতো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানাই। সামনে নির্বাচন।

জনগণ ভোট দিলে এখানে (সরকারি দলে) থাকবো, না দিলে ওইদিকে (বিরোধী দলে) যাব, কোন অসুবিধা নেই। তবে যতদিন আছি জনগণের কল্যাণ করে যাব। জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অক্টোবর মাসে আরেকটা অধিবেশন বসবে। সেটাই হবে এই সংসদের শেষ অধিবেশন। এর পরে নির্বাচন হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে- উপ-নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। এর থেকে শান্তিপূর্ণ কবে হয়েছে বাংলদেশে নির্বাচন? কিংবা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেইনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক ছবক শুনতে হচ্ছে। আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা। এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে দলটির প্রধান বলেন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি আমরা। রাজপথে ছিলাম আওয়ামী লীগ। রক্ত দিয়েছি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই শহীদের তালিকা দেখলে আওয়ামী লীগের নাম পাওয়া যাবে। সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি এটাই সব থেকে বড় কথা।

নির্বাচন নিয়ে দেশবিদেশে নানা সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই সোচ্চার। যে সমস্ত দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন? ’৭৫ এর পর থেকে বারবার যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? জানি না, তাদের এই বিবেক কী তখন নাড়া দেয়নি?

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। কারণটা কিছুই না। নিজের দেশের গ্যাস বিক্রি করবো না -এই সিদ্ধান্তটাই ছিল আমার ভাগ্য নিয়ে খেলা। আমি সেটা পরোয়া করিনি। কারণ, আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থটাই বড়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সম্পদ বাংলাদেশের জনগণের কাছে থাকবে। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। এটা ছিল আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যাহোক খেসারত দিতে হয়েছে। ক্ষমতায় আসতে পারিনি। কিন্তু এরপর দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নির্যাতন অত্যাচার ছিল প্রতিনিয়ত ব্যাপার। এরপর ভোট চুরি। ওই ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে আবার ভোট চুরির পাঁয়তারা। এই দুঃশাসনের ফলে জরুরি অবস্থা। এলো সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতি ছিল। তারা আমাদের ওপর অত্যাচার করলেও আমাদের প্রস্তাবিত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকাটা করেছিল। ভোটের ব্যাপারে এই নিয়মটা মেনে নিয়েছিল। আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে ব্যাপকভাবে বিজয়ী হয়ে সরকারে আছি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ আমাদের ভোট দেয়। তখনও নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। জ্বালাও-পোড়াও করে ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। অগ্নিসন্ত্রাসের যেন একটি মহোৎসব শুরু করে দিয়েছিল। শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা। জনগণ তা মেনে নেয়নি। তা অতিক্রম করে নির্বাচন হয় আমরা আবার সরকার গঠন করি। এরপর ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়। তারা নির্বাচনে আসে। মনে হয়েছিল তারা নির্বাচনে এসেছে ওই নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য। বিএনপি বাণিজ্য করে ৩০০ সিটে ৭’শ নমিনেশন দেয় এবং তাদের মধ্যে গোলমাল। এক সময় তারা নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে।

ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশা মারতে কামান দাগলে হবে না। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সবাইকে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। কোথাও পানি জমে আছে আছে কী না তা দেখতে হবে। শুধু সরকার করে দেবে? সিটি করপোরেশন করে দেবে? গালি দিতে হবে। গালি দিলে তো হবে না। তাদের কাজ তো তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। কে কী করে দিল না না দিলো ওই কথা বলে লাভ নেই। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। সেই আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, পরপর তিনবার আসতে পেরেছি বলেই এই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে আমাদের নির্বাচন হবে। আজকে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা বড় বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কার্যকর করে যাচ্ছি। সেখানে কৃচ্ছ্রতা সাধন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশটা যে বদলে গেলো। মানুষ যে ভালোভাবে বসবাস করছে এটা তো বাস্তবতা। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। দেশবাসীর কাছে সেটুকুই আমার আহ্বান।

মুদ্রাস্ফীতি কিছু মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা দরকার সেটা করছি। বাজারে গেলে কোন জিনিসের অভাব নেই, মনে হয় কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছে করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এরকম খেলা খেলে। আবার সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে। বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি বিশেষভাবে দেখার জন্য, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে? তিনি বলেন, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি যেন না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে টাকা দিচ্ছি। দেশের মানুষের কষ্ট যেন না হয়। রিজার্ভ মানে হল তিন মাসের আমদানির খরচ যাতে থাকে। তার চেয়ে খুব বেশি প্রয়োজন আছে তাও না। জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন শূন্য রিজার্ভ দিয়ে। তখনতো একটাও রিজার্ভ ছিল না। সাড়ে তিনবছরে দেশ গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রিজার্ভ ১ বিলিয়ন ডলারও ছিল না। কয়েক মিলিয়ন ছিল। কাজেই এটা নিয়ে কাউকে দুশ্চিন্তা বা মাথা খারাপ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। ডলারের ওপর চাপ কমাতে ভারতের সঙ্গে লেনদেনে নিজস্ব অর্থে কেনাবেচার চুক্তি করা হয়েছে। এতে ডলারের উপর চাপ কমে যাবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলীতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলীতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল

যে সন্মান অর্জন করেছেন তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না

যে সন্মান অর্জন করেছেন তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের

সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার

গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার

চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে

চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে

সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ

সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ

হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার

হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

ভারতের  প্রথম মহিলা  নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ