আজ ২রা নভেম্বর টানা তৃতীয় দিন দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে বেলা ১১.৩০ মিনিটে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আরামবাগ থেকে শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে নটরডেম কলেজের সামনে দিয়ে আরামবাগ ঘুরে গণফোরাম চত্বরে এসে সমাবেশে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় গণফোরাম এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি অবরোধ কর্মসূচি।

দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজীর ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি সহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ আন্দোলনের এক দফা দাবী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণের সংগ্রাম চলছে।

সমাবেশে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগকে ষড়যন্ত্রের অংশ করে পুনরায় জনগণের ক্ষমতা জবরদখল করার অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুপ্রিম কোর্টে এসে বৈঠক করছে, এটা কিসের আলামত! কোন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনারগণ সুপ্রিম কোর্টে এসে মিটিং করে না, এটাও এক ধরনের ষড়যন্ত্র! জনগণের বিরুদ্ধে আরেকটি পাতানো নির্বাচনে বিচার বিভাগকে কাজে লাগানোর পাঁয়তারা করছে। কোন কিছুতেই লাভ হবে না, জনগণ ইতোমধ্যেই এই সরকারকে বয়কট করেছে। যত চেষ্টা করেন জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি-ভাঁওতাবাজি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।

তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে গোলাগুলি করে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এতো ভয়? মানুষ দেখলে আপনার ভয় হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলেই আপনি কাঁপতে থাকেন এই বুঝি ক্ষমতা চলে গেল! আপনার ক্ষমতাতো এমনিতেই চলে যাবে, জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। আগামী দিনে নতুন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। যতদিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করবে, যতদিন পর্যন্ত জনগণের অধিকার আদায় না হবে ততোদিন আমাদের এই আন্দোলন চলছে চলবে।

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী বলেন, পুলিশ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, হামলা, মামলা করে জনগণকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু এদেশের মানুষ বীরের জাতি এজাতি গুলির ভয় করে না। এদেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদ এর পতন যেভাবে হয়েছিল হাসিনাকেও একই পথে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ জনগণ দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।

গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, বিশ্বদরবারে পৌঁছে গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতারণা। জাতিসংঘ বলেছে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘাত বিএনপি সৃষ্টি করেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের অপপ্রচার এখন আর কেউ বিশ্বাস করেনা, তাদের মিথ্যাচার আর কেউ গ্রহণ করবেনা। জনগণ ও গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের জোয়ারে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হবে এবং জনগণের বিজয় হবে।

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব মোঃ আবদুল কাদের বলেন, সরকার এদেশ থেকে গণতন্ত্র শূণ্য করতে চায় তাই বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করে রাখছে। এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। নীল নকশার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে চায় এ স্বৈরাচার সরকার। কিন্তু তারা ইতিহাস ভুলে গেছে, চিরকাল কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। ফেরাউন-নমরুদরাও পারে নাই, এরশাদ ও পারে নাই। জনগণের আন্দোলনের মুখে এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।

আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরাম সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক, ঢাক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মির্জা হাসান, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, ছাত্র সম্পাদক মোঃ সানজিদ রহমান শুভ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুর রহমান বুলু, সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ জাহান সুমন, কেন্দ্রীয় কমিটির ইমাম হোসেন, এশেক আলী আশিক, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার ইব্রাহীম, নিজাম উদ্দিন, মশিউর রহমান বাবুল সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কো-চেয়ারম্যান পারভীন নাসের খান ভাসানী, প্রেসিডিয়াম মেম্বার মোঃ আতিকুর রহমান, হারুন অর-রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জসিম সরদার, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ লিটন জোয়ার্দার সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।