ঢাবির ট্যুরিজম বিভাগ সাত লাখ টাকা লোপাট কর্মচারীর, নিরব চেয়ারম্যান
০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২১ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৬ পিএম
রাহাদ উদ্দিন
গুরতর আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের (টিএইচএম) বিভাগের অফিস সহায়ক ফুয়াদ মিয়াকে রহস্যজনক কারণে কোন ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। ২০২০ সালে বিভাগ ও শিক্ষার্থীদের প্রায় সাত লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে ফুয়াদের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই টাকা ভিন্নভাবে ফেরত পাওয়া গেছে দাবি করে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ফের চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে ওই কর্মচারির বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর গত এক বছর আর বিভাগে আসেননি ফুয়াদ। তবে দীর্ঘ এই সময়টাতে বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সব সুযোগ সুবিধাই পেয়ে গেছেন ফুয়াদ। এত অপরাধের পরেও ফুয়াদের কোন ধরণের জবাবদিহিতার মুখোমুখি না হওয়ার এবং 'রাজকীয়' ভাবে চাকরি চালিয়ে যাওয়ার পেছনে বিভাগের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার দেবের নিরব ভূমিকাকে দায়ী করছেন বিভাগের শিক্ষকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগটিতে ২০১৩ সালে খণ্ডকালীন কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ফুয়াদ। ২০১৪ সালে তার চাকরি স্থায়ী হয়। নানান ঘটনাক্রমে ধীরে ধীরে তিনি সন্তোষ কুমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। ২০২০ সালে ফুয়াদ বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে (ইএমবিএ) ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। এ সময় ফুয়াদ ভুয়া স্লিপ বানিয়ে বিভাগে জমা দিত বলে বিভাগের একটি সূত্র ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছে। সেই সময় ইএমবিএর ডিরেক্টর ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার দেব। বিষয়টি অবগত হওয়ার পরেও এ নিয়ে সে সময় তিনি দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিভাগের শিক্ষকদের ভিন্ন উপায়ে টাকা ফেরত পাওয়া গেছে বলে জানান সন্তোষ কুমার দেব। তবে ফুয়াদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এমনকি বিষয়টি বিভাগের নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়েও তোলা হয়নি। এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষকেরা কিভাবে টাকা ফেরত পাওয়া গেল জানতে চাইলে সন্তোষ কুমার জানান বিভাগের সাবেক এক শিক্ষক তার হয়ে টাকাটা পরিশোধ করেছেন। তবে তার হয়ে কেন একজন সাবেক শিক্ষক এত বড় অংকের টাকা পরিশোধ করতে যাবেন কিংবা করলেও তার তথ্য প্রমাণ কোন মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়নি বলে শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন।
বিনা শাস্তিতে এত বড় অপরাধে পার পেয়ে যাওয়া ফুয়াদ ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে চেয়ারম্যানেরই চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বিভাগের ৪৩ হাজার টাকা বাগিয়ে নেন। এরপরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বছরের ৮ নভেম্বরের পরে তিনি আর অফিসে আসেননি। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের পরামর্শে তিনি সে বছর নভেম্বর মাস থেকে তিনি অফিস করা থেকে বিরত রয়েছেন। একাধিকবার অপরাধে জড়িত থাকার পরেও তাকে চাকরিচ্যুতের সুপারিশ না করে প্রশাসনিক ভবনে বদলির সুপারিশ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে বিভাগের শিক্ষকেরা একাধিকবার জিজ্ঞাসা করেলও তাদের পরিষ্কার কিছু না জানিয়ে একই রকম ধোঁয়াশায় রেখেছেন চেয়ারম্যান।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ফুয়াদের মুঠোফোনে একাধিকারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। এই ঘটনায় কোন ধরনের বিচার না হওয়ার সুযোগে বিভাগের মাহফুজ নামে আরও এক কর্মচারী বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মোটা অংকের টাকা নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে লাপাত্তা রয়েছেন।
ফুয়াদের অর্থ আত্মসাতে নিরব ভূমিকার পাশাপাশি চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমারের বিরুদ্ধে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। একাডেমিক কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নিয়োগ কমিটি অনুমোদনের চেষ্টা, নিয়ম না মেনে কমিটি গঠন, অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত কর্মচারীদের বাঁচানোর চেষ্টা, আর্থিক অস্বচ্ছতা, একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ের রেজুলেশন পরিবর্তন, বিভাগের সহকর্মীদের সঙ্গে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণসহ নানা অভিযোগ উঠেছে সন্তোষ কুমারের বিরুদ্ধে।
গত বছর বিভাগে ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য জন্য ইউজিসি থেকে নির্দেশনা আসে। একই সঙ্গে আসা সেই নির্দেশনায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আরেক বিভাগ ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক আগেই সম্পন্ন করলেও টিএইচএম বিভাগ গত মাসে আগে নিয়োগ কমিটি গঠন করেছে। তবে সেখানেও আছে বির্তক। এ ধরনের কমিটি সব সময় বিভাগের সব শিক্ষককে নিয়ে গঠিত একাডেমিক কাউন্সিলে পাশ করা হলেও এবার সেটি 'সি এন্ড ডি' (বিভাগের এক তৃতীয়াংশ সিনিয়র শিক্ষক নিয়ে গঠিত) কমিটিতে পাশ করা করানো হয়।
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও মানা হয়নি প্রচলিত নিয়ম। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ কমিটিতে বিভাগের চার সিনিয়র শিক্ষক ও বাকি একজন রেজিস্টার কিংবা তার প্রতিনিধি (এক্সটার্নাল) নিয়ে গঠিত হয়। তবে এবার বিভাগ থেকে তিনজন এবং দুইজন বাইরের সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। যার মধ্যে একজন রেজিস্ট্রার প্রতিনিধি অন্যজন কম্পিউটার এক্সপার্ট। তবে চতুর্থ শ্রেণীর এই পদের নিয়োগে আদৌ কোন বিশেষজ্ঞ দরকার আছে কিনা এই প্রশ্ন তুলেছেন বিভাগের শিক্ষকেরা। তাদের সন্দেহ একজন প্রফেসর মর্যাদার শিক্ষককে বাদ দিয়ে এক্সটার্নাল অন্তর্ভুক্তি নিয়োগ কমিটির স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। পরে এ নিয়ে শিক্ষকরা ঘোর আপত্তি তুললে চেয়ারম্যান এ বিষয়ে পরামর্শ চাইতে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে গত মাসে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান। তবে তিনি দ্রুত নিয়োগ কার্য সম্পাদন না করে প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার দেব মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি এই প্রতিবেদককে তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে বলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার
রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি
দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়
যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের
রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা
বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে
জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে
৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা
আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি
পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই
তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা
ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের
উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি
২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট
২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের
কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু
১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে
বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো
তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান