হলফনামায় তথ্য গোপন : নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৫ পিএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৫ পিএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ হওয়া এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দেয়া হলফনামায় তিনি তথ্য গোপন করেছেন। তার ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা থাকা সত্বেও হলফনামায় টাকা নেই উল্লেখ করা হয়। এমনকি ৭০ লাখ টাকা ঋনের পরিবর্তে লেখা হয় ৭ লাখ। আর প্রার্থীর কাছে নগদ কোন টাকা নেই বলেও হলফনামায় দেখানো হয়। যদিও প্রার্থীর দাবি, সব কাগজ দিয়েছেন তবে লেখায় গড়মিলেই এই ত্রুটি হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ ১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া ওই প্রার্থীর নাম শাহজাহান ভূইয়া। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কিছুদিন আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্বেও আছেন। এই প্রার্থী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গত ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে উল্লেখ করেন, তাঁর কাছে কোনো নগদ টাকা ও ব্যাংকে কোনো টাকা নেই।
তবে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, জনতা ব্যাংকের মুড়াপাড়া শাখায় শাহজাহান ভুইয়া নামের ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাংক হিসাব নম্বরে চলতি বছরের গত জুলাই থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত লেনদেন ছিলো। এখনো ব্যাংকে তার সঞ্চিত রয়েছে ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৩ টাকা। এছাড়া উপজেলার কাঞ্চন শাখা প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে শাহজাহান ভূইয়া ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম চলতি বছরেই দুই ভাগে ৭০ লাখ টাকা যৌথভাবে ঋণ নিয়েছেন। যা ব্যাংকের ওই শাখায় তাদের হিসাব নম্বরে লেনদেন করা হয়।
এ আসনের আরেক স্বতস্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান জানান, পারিবারিকভাবে পাওয়া সম্পত্তির বাইরেও তাঁর আরও সম্পদ আছে। তবে তিনি তা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। তিনশো টাকার স্ট্যাম্পে দায়ের করা হলফনামায় তথ্য লুকানো গুরুতর অপরাধ, তিনি হলফনামায় তথ্য গোপন বলে মনে করেন এই প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে এই প্রার্থীর আয় বেড়েছে প্রায় ১৭ গুণ। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮৮ গুণেরও বেশি। হলফনামায় পেশায় ব্যবসায়ী শাহ্জাহান ভূঁইয়ার ব্যবসা, বাড়ি, দোকানভাড়া, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাতে বর্তমানে বাৎসরিক আয় ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬৮ টাকা। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তাঁর বাৎসরিক আয় ছিল মাত্র ৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৩০ টাকা। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার আয় কয়েকগুণ বেড়ে গেলেও তাঁর উপর নির্ভরশীলদের কোন আয় উল্লেখ নেই হলফনামায়।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি কেবল ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও অন্যান্য বাবদ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় তাঁর নামে কোন ব্যাংকে কোন টাকা নেই বলে দেখিয়েছেন। এমনকি তাঁর কোন নগদ টাকাও নেই। এমনকি তাঁর স্ত্রীর নামেও কোন অর্থ বা স্বর্ণালঙ্কার নেই বলে জানিয়েছেন। যদিও ৫ বছর আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ২৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৩২ টাকা। একই পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা ছিল। আগে তাঁর স্ত্রীর কাছে ৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। আগে তাঁর নামে স্থাবর সম্পদ হিসেবে কেবল ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩ বিঘা জমি ছিল। বর্তমানে তাঁর স্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩০ টাকা। যা পূর্বের সম্পদের তুলনায় ৮৮ গুণ।
যদিও পাঁচ বছর পূর্বে যৌথ মালিকানায় ৩২ বিঘা জমির মধ্যে ১২ বিঘা নিজের নামে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। যার বাজারমূল্য তিনি দেখাননি। উপজেলার মুড়াপাড়ার জনতা ব্যাংকের শাখায় তার টাকা থাকা সত্বেও হলফনামায় কেন উল্লেখ করেনি জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ্জাহান ভূঁইয়া বলেন, আমি রির্টানের কাগজসহ ওই ব্যাংকের টাকার তথ্য দিয়েছি, সঙ্গে সার্টিফাইড কপি দিয়েছি। যদি তথ্য না দিতাম তাহলে তো আমার মনোনয়ন পত্র বৈধ হতো না। হয়তো যিনি হলফনামা প্রস্তুতকারী তিনি হলফনামার ওই ঘরে বিষয়টি উল্লেখ না করে সার্টিফাইড কপি সংযুক্ত করেছেন।
আর ৭০ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পরীবর্তে ৭ লাখ টাকা কেন লেখা হলো জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, ৭ লাখ নয় তা হবে ৭০ লাখ। আমি ও আমার ছেলে ৭০ লাখ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংক কাঞ্চন শাখা থেকে ঋণ নিয়েছি। এখানে একটি শূণ্যের ভুল হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ কারণে গড়মিল হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় ও স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি বালুর ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছি। আমার ব্যবসা বেড়েছে তাই ইনকামও বেড়েছে।
হলফনামায় তথ্যে গড়মিল থাকা সত্বেও কেন এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হলো না জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানান, আমরা প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে দেখেছি। তেমন অসংগতি পাইনি। প্রার্থীরা সকলে যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী তাঁর হলফনামায় তথ্য গোপন করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও প্রার্থীর মনোনিত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মনোনয়নপত্রপত্র যাচাই বাছাই করা করা হয়। সেখানে সতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়ার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন জেলা রিটারর্নিং কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২ (৩বি) অনুযায়ী প্রত্যেক মনোনয়ন পত্রের সাথে অন্যান্য তথ্যের সাথে প্রার্থীর নিজ ও নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী সহ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ এর পরিমান উল্লেখ পূর্বক একটি হলফনামা জমা দিতে হয়। এই আইনের বিধান প্রতিপালিত না হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে বা কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত